মেসির ভক্ত হয়ে ছবি তোলা সেই কিশোর আলভারেজের কী ভাগ্য!
লুসাইল কাল রাতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল চলাকালীন ছবিটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ১০ বছর আগে তোলা হুলিয়ান আলভারেজের সঙ্গে লিওনেল মেসির একটি ছবি।
দুজনের গায়েই জাতীয় দলের জার্সি। দুজনেই একদৃষ্টে চেয়ে আছেন ক্যামেরার প্রতি। এই ছবি আর কাল রাতে মেসির সঙ্গে আলভারেজের নানা মুহূর্তের ছবি দেখার যে কারও মনে হবে, ভাগ্যের কী লীলা!
হুলিয়ান আলভারেজ আলোচনায় আসেন গত মে মাসে কোপা লিবার্তাদোরেসে এক ম্যাচে ৬ গোল করে। তার আগেই জানুয়ারিতে আলভারেজকে কেনা নিশ্চিত করেছিল ম্যানচেস্টার সিটি।
বিশ্বকাপের আগে সিটির হয়ে এ মৌসুমে ২০ ম্যাচে করেছেন ৭ গোল। আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে জাতীয় দলের হয়ে তাঁর অভিষেক ঘটে গত জুনে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চিলির বিপক্ষে ম্যাচে। তবে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন কাতারে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপেই। আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠার পথে করেছেন ৪ গোল। এর মধ্যে কাল রাতে সেমিফাইনালে করেন ২ গোল। তাঁর সতীর্থ মেসির গোলসংখ্যা ৫টি।
মোটকথা, আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছে মেসি–আলভারেজের যুগলবন্দীতে। এবার ভেবে দেখুন তো, ১০ বছর আগের সেই ছবির কথা, যখন স্রেফ একজন ভক্ত হিসেবে মেসির সঙ্গে ছবিটা তুলেছিলেন ১২ বছর বয়সী আলভারেজ। সত্যি, স্বপ্ন মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে!
আর এই স্বপ্নটা দেখেছেন আলভারেজ। ২০০০ সালে জন্ম নেওয়া এই ফরোয়ার্ড ১৪ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব আতলেতিকো কালচিনের বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেন। এর দুই বছর পর নাম লেখান রিভার প্লেটে।
ইতালিয়ান সংবাকর্মী ফ্যাব্রিজিও রোমানো তাঁর টুইটে জানিয়েছেন, মেসির সঙ্গে এই ছবিটি ১০ বছর আগে তুলেছিলেন আলভারেজ। একজন ভক্ত হিসেবে ছবিটি তুলেছিলেন। তখন আলভারেজের বয়স ১২ বছর। অর্থাৎ,আলভারেজ তখনো কোনো ক্লাবের বয়সভিত্তিক দলে যোগ দেননি। তবে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তখন থেকে আলভারেজ নাকি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন—বিশ্বকাপে মেসির সঙ্গে খেলবেন।
ম্যানচেস্টার সিটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এ নিয়ে আলভারেজের বক্তব্যও আছে। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড এর আগে বলেছিলেন, ‘শৈশব থেকেই মেসি আমার আদর্শ। সে আমার পরিবারেরও আদর্শ। ভাইয়ের আদর্শ। তাই মেসি আমার কাছে নায়ক। শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখেছি জাতীয় দলে মেসির সঙ্গে খেলব।’
এ ছাড়াও টুইটারে ছড়িয়ে পড়া আলভারেজের শৈশবের একটি ভিডিও দেখেও বোঝা যায়, মেসিকে তিনি কতটা পছন্দ করেন। তাঁর স্বপ্ন কি জানতে চাওয়া হলে আলভারেজ উত্তর দেন, ‘বিশ্বকাপে খেলা।’ আদর্শ কে—জানতে চাওয়া হলে এক কথায় বলেন, ‘মেসি।’
ভাগ্যের কী লীলা! সেই আলভারেজই এখন মেসির সতীর্থ। শুধু সতীর্থ বললে ভুল হবে, কাল রাতে সেমিফাইনালে জোড়া গোল করা আলভারেজকে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ খেলোয়াড়ও বলেছেন মেসি। নিজে ম্যাচসেরা হলেও পুরস্কারটা আলভারেজের প্রাপ্য বলেই মনে করেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
ম্যাচে মেসি পেনাল্টি থেকে যে গোলটি করেন, সেটি এনে দিয়েছেন আলভারেজ। ক্রোয়েশিয়ার বক্সে ফাউলের শিকার হন সিটির এই ২২ বছর বয়সী তারকা। পরে ৬৯ মিনিটে মেসির পাস থেকে গোল করেন আলভারেজ।
আলভারেজ এটাই তো চেয়েছিলেন! মেসির পাশে খেলবেন, গোল করবেন, করাবেন একে–অপরকে দিয়ে। ফাইনালে ওঠার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিশ্চয়ই এই ছবিতে চোখ পড়েছে তাঁর। তখন আলভারেজের কী মনে হয়েছে? স্বপ্ন ও পরিশ্রম মানুষকে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে? তাছাড়া আর কী!