নেদারল্যান্ডস ৩: ০ রোমানিয়া
৬৬ শতাংশ বলের দখল ও ২৩টি শট। এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে ম্যাচটা কতটা একপেশে ছিল। ইউরোর শেষ ষোলোয় রোমানিয়ার বিপক্ষে আজ এমনই দাপুটে ফুটবল উপহার দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। রোমানিয়ার ডিফেন্স ও গোলরক্ষক বাধা হয়ে না দাঁড়ালে এ ম্যাচে নেদারল্যান্ডস অন্তত ৬–৭ গোল পেতে পারত।
সেটি না হলেও ৩-০ গোলের জয় নিয়েই শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করেছে ডাচরা। শেষ আটে ডাচদের প্রতিপক্ষ রাতে মুখোমুখি হতে যাওয়া অস্ট্রিয়া-তুরস্ক ম্যাচের জয়ী দল। মিউনিখে আজ ডাচদের জয়ে জোড়া গোল করেছেন ডনিয়েল ম্যালেন। দলের হয়ে অন্য গোলটি করেন কোডি গাকপো। পাশাপাশি ম্যালেনের প্রথম গোলে সহায়তাও করেন গাকপো।
বায়ার্ন মিউনিখের মাঠ আলিয়েঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের শুরুটা ছিল ভিন্ন। প্রথম দিকে দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয়। ৬ মিনিটে নেদারল্যান্ডস তারকা জাভি সিমন্সের শট সরাসরি জমা হয় গোলরক্ষকের হাতে। ৮ মিনিটের মাথায় দারুণ এক আক্রমণে ডাচ ডিফেন্সের পরীক্ষা নেয় রোমানিয়া। গোল না হলেও প্রথম ১০ মিনিটেই রোমাঞ্চকর ম্যাচের আভাস দেয় দুই দল। তবে দুই দলের মধ্যে রোমানিয়াই শুরুতে অনেক বেশি গতিময় ছিল। দুর্দান্ত প্রেসিংয়ে ডাচ রক্ষণকে বেশ চাপেও রাখে তারা।
১৪ মিনিটে দুর্দান্ত আক্রমণে পরপর দুবার গোলের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল রোমানিয়া, যদিও অল্পের জন্য গোল পাওয়া হয়নি। রোমানিয়ার আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপরীতে নেদারল্যান্ডস কিছুটা সতর্ক হয়েই খেলার চেষ্টা করে। পাসিং ফুটবলে রোমানিয়ার গতিও মন্থর করে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টাও করে ডাচরা। তেমনই এক আক্রমণে ম্যাচের ২০ মিনিটে নেদারল্যান্ডসকে এগিয়ে দেন কোডি গাকপো। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সের ভেতর দুই রোমানিয়ান খেলোয়াড়ের ফাঁদ এড়িয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে লক্ষ্যভেদ করেন লিভারপুল তারকা। এবারের ইউরোতে এটি ছিল গাকপোর তৃতীয় গোল।
গোল খেয়েই অবশ্য দমে যায়নি রোমানিয়া। আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে তারা। তবে গোল পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠে নেদারল্যান্ডস খুব দ্রুত ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। রোমানিয়ান রক্ষণে এ সময় আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয় তারা। ২৬ মিনিটে অল্পের জন্য দ্বিতীয় গোল পাওয়া হয়নি নেদারল্যান্ডসের। স্টেফান ডি ভ্রিজের হেড অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
এরপর দুর্দান্ত আক্রমণে একাধিকবার রোমানানিয়ান ডিফেন্স কাঁপিয়ে দিয়েও দ্বিতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি নেদারল্যান্ডসের। ডান প্রান্ত দিয়ে মূলত ডেনজিল ডামফ্রিসই সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে ওঠেন রোমানিয়ার জন্য। তাঁকে থামাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছিল রোমানিয়ার ডিফেন্সকে। ৪৪ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হেলায় নষ্ট করেন জাভি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে রোমানিয়া, যদিও পাওয়া হয়নি কাঙ্ক্ষিত গোলটি। এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় নেদারল্যান্ডস।
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও কয়েক মিনিট ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল রোমানিয়ার দখলে। তবে এবারও সে নিয়ন্ত্রণ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তারা। দ্রুত কয়েকবার আক্রমণে গিয়ে রোমানিয়াকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে নেদারল্যান্ডস। তবে গোল পায়নি তারাও। ৫৪ মিনিটে ফের দুর্দান্ত ডিফেন্সে নেদারল্যান্ডসকে গোলবঞ্চিত করে রোমানিয়া। ৫৮ মিনিটে কর্নার থেকে ভার্জিল ফন ডাইকের হেড ফিরে আসে পোস্টে লেগে।
৬২ মিনিটে অবিশ্বাস্য গতিতে বল নিয়ে ছুটে এসে শট নিয়েছিলেন গাকপো। কিন্তু এবারও রোমানিয়ান গোলরক্ষক ফ্লোরিন নিটার বিশ্বস্ত হাত বাঁচিয়ে দেয় দলকে। কর্নার থেকে একটু পর অবশ্য দ্বিতীয় গোলটি ঠিকই আদায় করে নেন গাকপো। কিন্তু ভিএআরে যাচাইয়ের পর অফ সাইডের কারণে বাতিল হয় সেই গোল।
৬৮ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে মেমফিস ডিপাইয়ের শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে ফের গোলবঞ্চিত হয় নেদারল্যান্ডস। পাল্টা আক্রমণে রোমানিয়ার কিছু হুমকি তৈরি করলেও ম্যাচ এ সময় পুরোপুরি ডাচদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৮৩ মিনিটে গাকপোর সহায়তায় নেদারল্যান্ডসকে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল এনে দেন ডনিয়েল ম্যালেন। যোগ করা সময়ে সেই ম্যালেন ব্যবধান ৩-০ করলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে নেদারল্যান্ডস।