অতীত মনে রেখে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে এখনো ভালোবাসেন রোনালদো

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রতি ভালোবাসা একটুও কমেনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরছবি: রয়টার্স

অনেক আশা নিয়ে ২০২১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ওলে গুনার সুলশার ও রাল্‌ফ রাংনিকের সময়ে বেশ ভালোও খেলেছিলেন।

কিন্তু এরিক টেন হাগ কোচ হয়ে আসার পর রোনালদোর জগৎ ওলটপালট হয়ে যায়। টেন হাগের শুরুর একাদশে তিনি অনিয়মিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ওঠা রোনালদো ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্লাব ও কোচকে নিয়ে বোমা ফাটিয়ে ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন। বিশ্বকাপ শেষে যোগ দেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে।  

টেন হাগের ওপর প্রায় দুই বছর আগের ক্ষোভ এত দিন পুষে রেখেছিলেন রোনালদো। টেন হাগ তাঁকে ম্যানচেস্টার থেকে চলে যেতে একরকম বাধ্য করার পরও যখন ইউনাইটেড ভালো করতে পারছে না, তখন সব দায় এই ডাচ কোচের ওপরই চাপিয়েছেন রোনালদো।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যখন এরিক টেন হাগের অধীনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলতেন
ছবি: রয়টার্স

ক্লাবটির সাবেক ডিফেন্ডার ও রোনালদোর একসময়ের সতীর্থ রিও ফার্ডিনান্ডের পডকাস্ট অনুষ্ঠানে টেন হাগের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘ইউনাইটেডকে সবকিছু পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’ তবে সম্পর্ক ছিন্ন হলেও এখনো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ভালোবাসেন বলে জানিয়েছেন পর্তুগিজ তারকা।

টেন হাগের অধীনে ইউনাইটেড গত মৌসুমে অষ্টম হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করেছে, যা এই প্রতিযোগিতার ইতিহাসে তাদের সর্বনিম্ন অবস্থান। এবারের মৌসুমেও শুরুটা ভালো হয়নি। আন্তর্জাতিক বিরতিতে যাওয়ার আগে লিগে প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে তাঁর দল। এফএ কমিউনিটি শিল্ডেও নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হেরেছে।

ইউনাইটেডের বেহাল অবস্থার জন্য টেন হাগের মানসিকতাকে দায়ী করে রোনালদো বলেছেন, ‘কোচ বলেছেন, তাঁর দল (প্রিমিয়ার) লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন কোচ হিসেবে আপনি এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি বলতে পারেন, আমার দলের হয়তো প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আপনি না পারার কথা বলতে পারেন না। আপনার দলকে চেষ্টা করতে করবে, আপনাকে চেষ্টা করতে হবে।’

আরও পড়ুন

২০০৩ সালে স্পোর্তিং লিসবন থেকে রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিয়ে আসেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। এই কিংবদন্তি কোচের অধীনেই রোনালদো আজকের তারকা হয়ে ওঠেন। ইউনাইটেডে প্রথম অধ্যায়ে ছয় মৌসুম খেলেছেন রোনালদো। জিতেছেন তিনটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি লিগ কাপ (কারাবাও কাপ নামে পরিচিত), একটি করে কমিউনিটি শিল্ড, এফএ কাপ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আনতে বড় ভূমিকা রাখেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন
ছবি : ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ওয়েবসাইট

২০২১ সালের আগস্টে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের একদম শেষ মুহূর্তে জুভেন্টাস ছেড়ে ইউনাইটেডে ফেরেন রোনালদো। টেন হাগের সঙ্গে রেষারেষির জেরে ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন ২০২২ সালের নভেম্বরে।

ইউনাইটেডের সঙ্গে শেষটা ভালো না হলেও এখনো তিনি ক্লাবটিকে আগের মতোই ভালোবাসেন বলে জানিয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী এই তারকা, ‘নিজেকে যেভাবে শুভকামনা জানাই, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্যও তাই—তাদেরকে সেরা দল হতে হবে। আমি (এখনো) ক্লাবটিকে ভালোবাসি...আমি অতীত ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ নই।’

আরও পড়ুন

২০১৩ সালে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন অবসরে যান। এরপর আর প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিততে পারেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ ধনকুবের স্যার জিম র‍্যাটক্লিফ ক্লাবটির ২৫ শতাংশ মালিকানা কিনে নেন। সুদিন ফেরানোর আশায় ফুটবল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁর কোম্পানি ইনেওসকে।

এরিক টেন হাগের শুরুর একাদশে উপেক্ষিত ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো
ছবি : রয়টার্স

তবে রোনালদো মনে করেন, ইউনাইটেডকে আবারও গৌরবাম্বিত করতে হলে সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে, ‘আমার মতে, এটা এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। তবে তাদের সবকিছু পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। সে জন্য সময় দিতে হবে, তাদেরকে বদলাতে হবে। তারাও জানে, এটাই একমাত্র উপায়।’