এমবাপ্পেকে হাকিমি পাস না দিয়ে বসলেই হয়!
অনেক চলচ্চিত্রে বন্ধুকে প্রায়ই শত্রু হয়ে উঠতে দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শেষ দৃশ্যে গিয়ে ঠিকই মিলে যান তাঁরা। কখনো কখনো যে ট্র্যাজেডির দেখাও মেলে না, তা নয়। অনেক সময় তো এক বন্ধুর জন্য অন্যজন জীবনও দিয়ে দেন। চলচ্চিত্রের মতো না হলেও আজ আল বায়ত স্টেডিয়ামে দেখা মিলতে পারে তেমন দৃশ্যেরই কাছাকাছি কিছু।
যেখানে বন্ধুর কাছে হেরে বন্ধুর বিদায় নেওয়ার ট্র্যাজেডি যেমন থাকবে, তেমনি বিদায়ের বেদনাকে ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে বন্ধুত্বের জয়গানও। বিশ্বকাপে আজকের সেমিফাইনালে মুখোমুখি সেই দুই বন্ধু হলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে ও মরক্কোর আশরাফ হাকিমি।
২০২১ সালের দলবদলে ইন্টার মিলান ছেড়ে হাকিমি প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) আসার পর থেকেই দুজনের বন্ধুত্বের শুরু। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর কাছাকাছি সময়ে জন্ম তাঁদের।
বয়সের পাশাপাশি পছন্দের মিল হওয়াতে, যতই সময় গড়িয়েছে দুজনের সম্পর্কটা হয়েছে দৃঢ়। এমনকি এই বিশ্বকাপের মধ্যেও হাকিমির সঙ্গে দেখা করতে মরক্কোর টিম হোটেলে গিয়েছিলেন এমবাপ্পে। আর টুইটারে দুই বন্ধুর আলাপনের সবটা তো সবার জানাই।
কোয়ার্টার ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে মরক্কোর জয়ের পরই হাকিমির সঙ্গে ছবি দিয়ে তাঁকে ভালোবাসার বার্তা পাঠান এমবাপ্পে। এরপর শেষ আটে ফ্রান্স-মরক্কো দ্বৈরথ নির্ধারিত হওয়ার পর হাকিমি এমবাপ্পেকে উদ্দেশ করে লেখেন, ‘শিগগিরই দেখা হবে বন্ধু।’ এবারও ভালোবাসার ইমোজি দিয়ে ফিরতি বার্তা দেন এমবাপ্পে।
দুজনের এই ভালোবাসার গল্প অবশ্য আজ রাতে ঘণ্টা দুয়েকের জন্য ভুলে থাকতে হবে। নিজেদের জন্য, দেশের জন্য তাঁরা লড়বেন মুখোমুখি শত্রু হয়ে। দুজনের পজিশনিংয়ের কারণেও এই লড়াই হয়ে উঠতে পারে মহাকাব্যিক। এমবাপ্পে যখন লেফট উইং দিয়ে গতি ও বলের নিয়ন্ত্রণে আক্রমণের ঝড় তুলবেন, তখন তাঁকে থামানোর জন্য সেখানে প্রস্তুত থাকবেন আশরাফ হাকিমিই।
গত জানুয়ারিতে হাকিমিকে নিয়ে এমবাপ্পে টুইটারে লিখেছিলেন, ‘আশরাফ হাকিমি, বিশ্বসেরা সেরা রাইটব্যাক।’ সেই বিশ্বসেরার বাধা পেরিয়েই টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে হবে এমবাপ্পেকে। কাজটা অতটা না অবশ্য।
হাকিমির নেতৃত্বাধীন মরক্কোর রক্ষণ ইতিমধ্যে মরু ঝড়ে নিজেদের দৃঢ়তা দেখিয়েছে। এখন পর্যন্ত মরক্কো ৫ ম্যাচে শুধু ১টি গোল হজম করেছে, সেটিও প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড়ের কাছ থেকে নয়, নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে। এমন ইস্পাত-দৃঢ় রক্ষণের বিপক্ষে এমবাপ্পের চ্যালেঞ্জ মোটেও সহজ হবে না।
অবশ্য কঠিন দেয়াল ভাঙতে পারেন বলেই তো তিনি এমবাপ্পে! মেসি-রোনালদো পরবর্তী যুগের অন্যতম সেরা তারকা। নিজের দিনে যেকোনো বিশ্বসেরা রক্ষণকে একাই নাচিয়ে ছাড়তে পারেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে হয়েছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। আর এবার তো এমবাপ্পের সামনে সুযোগ দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপাটি নিজের করে নিয়ে সর্বকালের সেরার তালিকায় নাম খোদাই করার। সামনে বন্ধু কি শত্রু আছে, সেটা ভাবার সময় কোথায় তাঁর!
বন্ধুত্ব ভুলতে হবে হাকিমিকেও। এমবাপ্পের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘তার মতো খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলাটা সহজ। তাকে বল দেওয়া মানে এটা জানি যে সে পার্থক্য গড়ে দেবে।’
এখন দ্বৈরথ ভুলে বন্ধু এমবাপ্পেকে হাকিমি পাস না দিয়ে বসলেই হয়!