এমবাপ্পেকে ‘জগাখিচুড়ি’ পিএসজি ‘ছাড়তেই হবে’
‘তাকে চলে যেতেই হবে।’
কথাটা লিভারপুল কিংবদন্তি জেমি ক্যারাঘারের। বলেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে। কোন জায়গা থেকে চলে যাওয়ার কথা বলেছেন, তা না বোঝার কোনো কারণ নেই। পিএসজি!
চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে কাল রাতে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে পিএসজি। প্রথম লেগে ১-০ গোলে হারায় দুই লেগ মিলিয়ে ৩-০ ব্যবধানে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় ঘটল ফরাসি ক্লাবটির। এমবাপ্পে আসার পর এবারসহ মোট ৬ মৌসুম হয়ে গেল পিএসজি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে ব্যর্থ। ইউরোপ-সেরার এই শিরোপা জিততেই ফরাসি স্ট্রাইকারকে মোনাকো থেকে নিয়ে এসেছিল পিএসজি।
কিংবা কথাটা উল্টো করেও বলা যায়, পিএসজি এমবাপ্পেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েই নেইমার ও লিওনেল মেসিকে দলে ভিড়িয়েছিল। কিন্তু এবারও লক্ষ্যপূরণ হলো না। ওদিকে মোনাকোয় এমবাপ্পে সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠার সময় থেকেই তাঁর পিছু ছুটেছে বেশ কিছু বড় ক্লাব। রিয়াল মাদ্রিদ চেষ্টা করেছে সবচেয়ে বেশি। পিএসজির সঙ্গে নতুন চুক্তির পর গত বছর মে মাসে রিয়ালকে সরাসরি না করে দেন এমবাপ্পে। যদিও তার আগে অনেকবারই রিয়ালে খেলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।
অর্থাৎ, এমবাপ্পে যেদিন সবুজ সংকেত দেবেন, রিয়ালও সেদিন থেকে তাঁকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নিয়ে আসার চেষ্টা নতুন করে শুরু করবে। ক্যারাঘ্যারের কথা শুনলে মনে হবে সেই সময়টা এখন নয় তো আর কখন!
চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ব্যর্থতায় মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেদের নিয়ে গড়া পিএসজির এই ‘প্রকল্প’ এর আর ভবিষ্যৎ নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ফিরতি লেগে হারের পর এমবাপ্পের কথা শুনলেও তেমন মনে হবে, ‘এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে আমার প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলাম, আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা ঢেলে দেব। বাস্তবতা, এটাই আমাদের সর্বোচ্চ।’
দলে বিশ্বসেরাদের কাতারে পড়া তিনজন খেলোয়াড় আছেন। বাকিদের বেশির ভাগই তারকা। এমন একটা দলের সেরা স্ট্রাইকার যদি শেষ ষোলো থেকে বিদায়ের পর বলে বসেন, ‘এটাই আমাদের সর্বোচ্চ’—তাহলে সেটি অবশ্যই হতাশার। টানা ব্যর্থতায় এমবাপ্পে নিজেও কতটা হতাশ তাও বোঝা যায়। সে জন্যই প্রশ্ন উঠেছে, পিএসজিতে এমবাপ্পে থাকবেন তো?
এমবাপ্পের কথা শুনলে মনে হবে ‘হ্যাঁ’ আবার ‘না’ও। আগে ভবিষ্যতের প্রশ্নে তাঁর জবাবটা জেনে নিন। এমবাপ্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মৌসুম শেষে পিএসজিতে থাকবেন কি না? পিএসজি তারকার উত্তর, ‘এই মৌসুমে এখন শুধু লিগ আঁ জয় নিয়েই ভাবছি, তারপর যা হয় দেখা যাবে। এই মুহূর্তে শুধু চলতি মৌসুম নিয়েই কথা বলতে চাই। এখন অন্য কোনো কিছু নিয়েই ভাবছি না। আমরা খুব হতাশ।’
২০২৪ সালের জুনে পিএসজির সঙ্গে এমবাপ্পের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। চাইলে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে পারেন। কিন্তু তত দিন পর্যন্ত এমবাপ্পে থাকবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির টানা ব্যর্থতার জন্য। গত ৭ বছরে পিএসজি এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিল। এবারসহ শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিল টানা দুই মৌসুম। ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্নে বিভোর এমবাপ্পে জানেন, পিএসজিতে এভাবে চলতে থাকলে স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। জেমি ক্যারাঘার বিষয়টি বুঝতে পেরেই বাস্তবতা তুলে ধরেছেন এমবাপ্পের সামনে
সংবাদমাধ্যম সিবিএসের স্টুডিওতে বিশ্লেষক হিসেবে গিয়ে ক্যারাঘার বলেছেন, ‘তাকে চলে যেতেই হবে। আমি সত্যি এটাই মনে করি। (পিএসজি) তারা চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের ধারেকাছেও নেই। এই দল থাকলে আগামী মৌসুমে যে এর চেয়ে ভালো করবে সেটাও মনে হয় না। তাই সে রিয়াল মাদ্রিদে যত দ্রুত যোগ দেয় ততই ভালো।’
এমবাপ্পের কেন ক্লাব ছাড়া উচিত, তাও ব্যাখ্যা করেন লিভারপুলের হয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ ১৪৯ ম্যাচ খেলা ক্যারাঘার, ‘পিএসজির বিদায়ে আমি আনন্দিত। ওদের দল থেকে কোনো কিছুই আমার পছন্দ না। এটা কোনো দল নয়, স্রেফ জগাখিচুড়ি। গত ৭ বছরের মধ্যে পাঁচবারই শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়াটা কৌতুক ছাড়া আর কি! ওরা যে কারও চেয়ে বেশি টাকা-পয়সা খরচ করে, বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়েরাও আছে। এগুলোই বলে দেয় একটা দল হয়ে ওঠা কত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ওরা তা হতে পারেনি। তাই আমি সত্যিই মনে করি এমবাপ্পেকে চলে যেতে হবে।’
২০২২ সালের শুরুতে পিএসজিতে এমবাপ্পের তখনকার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, তাঁর পরবর্তী গন্তব্য রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ ক্লাবটিও তখন এমবাপ্পেকে উড়িয়ে আনতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু রিয়ালকে হতাশ করে সে সময় পিএসজির সঙ্গে নতুন চুক্তি করেন এমবাপ্পে। এমন ঘটনার পর রিয়ালে এমবাপ্পে আর যোগ দিতে পারবেন কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
একই সন্দেহের কথা বলেছেন রিয়ালের সাবেক উইঙ্গার জেসে রদ্রিগেজও। ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে বেড়ে ওঠা রদ্রিগেজ রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে ভালোভাবে জানেন। স্প্যানিশ রেডিও ‘কাদেনা সার’কে সাম্পদোরিয়ার এ ফুটবলার বলেছেন, ‘আমি ঠিক জানি না। পেরেজকে যতটুকু চিনেছি, রিয়াল হয়তো তাকে সই করাতে অস্বীকৃতি জানাবে। যা ঘটেছে সেটি তার (পেরেজ) ভালো লাগেনি।’