বিশ্বকাপে ‘হইচই’ ফেলা সেই প্রযুক্তি এবার প্রিমিয়ার লিগে

অফসাইড নির্ণয়ে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করবে প্রিমিয়ার লিগএক্স

২০২২ বিশ্বকাপে সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হারের স্মৃতি অনেকেরই মনে পড়ার কথা। সেদিন লিওনেল মেসিদের দুটি গোল বাতিল হয়েছিল অফসাইডে, আর্জেন্টিনা ম্যাচ হেরেছিল ২-১ ব্যবধানে। অফসাইডে বাতিল হওয়া দুটি গোলের একটি হয়েছিল লাওতারো মার্তিনেজের হাতের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ বাইরে থাকার কারণে, যা ধরা পড়েছিল ফিফার চালু করা নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে। একইভাবে বাতিল হয়েছিল কাতার-ইকুয়েডরের উদ্বোধনী ম্যাচের প্রথম গোলও। এ নিয়ে বেশ হইচই হয়েছিল বিশ্বকাপে।

সেমি-অটোমেটেড বা আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি নামের সেই পদ্ধতি এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও চালু হতে যাচ্ছে। অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলো ২০২৪-২৫ মৌসুম থেকে সেমি–অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি চালুর বিষয়ে সম্মত হয়েছে। আজ প্রিমিয়ার লিগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ফিফা তাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ২০১৯ সাল থেকে আধা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে। এর মাধ্যমে ভিডিও রেফারিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফসাইডের তথ্য পেয়ে থাকেন। সেটি মাঠের রেফারিকে জানালে তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। মূলত রেফারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বলেই এটিকে ‘আধা স্বয়ংক্রিয়’ বলা হয়। নয়তো অফসাইড হয়েছে কি না, সেটি নির্ণয় করা হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এবং খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে।

প্রিমিয়ার লিগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্লাবগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি চালু হচ্ছে। সামনের শরতের আন্তর্জাতিক বিরতিতে এটি চালুর জন্য প্রস্তুত হবে জানিয়ে বলা হয়, ‘প্রযুক্তিটি অপটিক্যাল প্লেয়ার ট্র্যাকিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ভার্চ্যুয়াল অফসাইড লাইনের দ্রুত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান প্রদান করবে এবং সমর্থকদের জন্য স্টেডিয়ামের ভেতরে ও সম্প্রচারে উচ্চমানের গ্রাফিকস নিশ্চিত করবে।’

আরও পড়ুন

আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?

এই প্রক্রিয়ায় বল এবং খেলোয়াড়দের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেকগুলো ক্যামেরার মাধ্যমে ট্র্যাকিং করা হয়। ক্যামেরাগুলো প্রতিমুহূর্তে বল কোথায় আছে ও খেলোয়াড়েরা কোথায় কোন পজিশনে আছেন, তা ট্র্যাক করে। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কবজি, কনুই, মাথা, গোড়ালি, হাতের আঙুল ও কাঁধ—অফসাইড প্রযুক্তিতে দেহের এ রকম ২৯টি পয়েন্ট ট্র্যাক করা হয়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গের এই লিম্ব ট্র্যাকিং প্রযুক্তি প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার পর্যন্ত খেলোয়াড়দের অবস্থান ও দৈহিক ভঙ্গি রেকর্ড করে।

খেলায় ব্যবহৃত বল, লিম্প ও অপটিক্যাল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্লেষিত হয়ে ভিডিও রেফারির কাছে চলে যায়, যা মাঠের রেফারি হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড, যা এই প্রযুক্তিবিহীন ম্যাচগুলোয় লাগে গড়ে ৭০ সেকেন্ড।

আধা স্বয়ংক্রিয় অফসাইড প্রযুক্তির কার্যকারিতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস ল্যাব এবং ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি ও সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখের গবেষক দল।

আরও পড়ুন