২৬ বছরের ‘সম্পর্ক’ ছিন্ন করে স্বাবলম্বী হতে চায় বার্সেলোনা

বার্সেলোনা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তাএএফপি

সিদ্ধান্তটি পাকা করলে এবং সেটি প্রয়োগ করলে ঐতিহাসিক এক ঘটনাই হবে বার্সেলোনার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকির সঙ্গে ১৯৯৮ সাল থেকে স্পনসর চুক্তি ক্লাবটির। সে সময় বার্সা সভাপতি হোসে লুইস নুনেজ নাইকির সঙ্গে এই চুক্তি করেছিলেন। এরপর দুই পক্ষই বেশ কয়েকবার এই চুক্তি পর্যালোচনা করেছে, কিন্তু সম্পর্ক ছিন্ন করার পথে কেউ এগোয়নি। আর (২০১৬ সালে করা) বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ারও ঢের বাকি—৩০ জুন, ২০২৮। কিন্তু স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ জানিয়েছে, কয়েক মাস ধরেই নাইকির সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না বার্সার। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ক্লাবটি সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে। ওদিকে আরেক ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পুমা এই সুযোগটাই নিতে চায়।

আরও পড়ুন

জার্মানির এই প্রতিষ্ঠান (পুমা) বার্সাকে মৌসুমপ্রতি ১০ কোটি ইউরোর বেশি দিতে চায়। নাইকি বার্সাকে দেয় মৌসুমপ্রতি সাড়ে ৮ কোটি ইউরো। নাইকির সঙ্গে যেহেতু সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে না এবং পুমাও বেশি টাকা দিতে চায়, তাই স্বাভাবিকভাবেই জার্মানির প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠার কথা কাতালান ক্লাবটির। কিন্তু স্পোর্ত জানিয়েছে, বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তা অন্য কিছু ভাবছেন, যেটা তিনি কয়েক সপ্তাহ আগে কাতালান রেডিও ‘আরএসি১’–কে বলেছেন—কেমন হয়, বার্সা যদি নিজেরাই নিজেদের ব্র্যান্ড বানায়! অর্থাৎ বার্সার ক্রীড়া সরঞ্জাম এত দিন বানিয়ে সরবরাহ করত নাইকি। এই কাজটা এখন থেকে বার্সাই করতে চায়, নিজেদের জার্সি থেকে অন্যান্য সরঞ্জাম তারা নিজেরাই বানানোর কথা ভাবছে।

বার্সেলোনার বর্তমান জার্সি স্পনসর নাইকি
এএফপি

স্পোর্ত জানিয়েছে, নাইকির সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বৈঠকে বসেছিল বার্সা। সেই বৈঠক স্বস্তি নিয়ে শেষ করতে পারেনি কোনো পক্ষই। এখন নাইকির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পুমার ডাকে সাড়া না দিলে একটাই পথ খোলা বার্সার জন্য। আগামী মৌসুম সামনে রেখে জার্সি থেকে শুরু করে খেলাধুলার সব সরঞ্জাম নিজেদেরই বানাতে হবে। আর এই কাজে বার্সা লাইসেন্সিং অ্যান্ড মার্চেন্ডাইজিংকে (বিএলএম) কাজে লাগাতে পারে। বিএলএম বার্সার খেলাধুলার বাইরে অন্যান্য কাপড় তৈরি করে, যেগুলো বার্সারই ব্র্যান্ড।

গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘আরএসি১’–এর সঙ্গে লাপোর্তার আলাপচারিতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল স্পোর্ত। সেখানে বিএলএম নিয়ে লাপোর্তার উদ্ধৃতিও প্রকাশ করা হয়, ‘তিনটি পথ খোলা আছে। হয় নাইকির সঙ্গেই চালিয়ে যাওয়া, নয় তো বাজারে যে প্রস্তাব (পুমা) আসছে, সেটি গ্রহণ করা, যেখান থেকে আমরা বেশি অর্থ পাব। আরেকটি পথ হলো বিএলএমের মাধ্যমে এই কাজটা নিজেরাই করা—কারণ আমরা কিন্তু (খেলাধুলার বাইরে) অন্য পোশাকও তৈরি করি।’

আরও পড়ুন

চলতি মাসের মধ্যেই বার্সা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শোনা যাচ্ছে। সূত্র মারফত স্পোর্তের দাবি, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই। এর মধ্যে নাইকিকে আরেকটু সময় দিতে চায় ক্লাবটি। এমনিতে বার্সেলোনার পরিচালনা পর্ষদ মোটামুটি নিশ্চিত নাইকি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করবে না। বার্সার প্রস্তাব হলো এখন তাঁরা নাইকির কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি অর্থ দিতে হবে। টাকার অঙ্কটা যদিও জানা যায়নি।

নাইকির সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে চুক্তি বাতিলই করবে বার্সা। এর মধ্যে নিজেদের ব্র্যান্ড তৈরি করতে লাপোর্তা নাকি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। লাপোর্তাকে নিয়ে বার্সার ভেতর থেকে যা বলা হয়েছে, সেটি উদ্ধৃত করেছে স্পোর্ত, ‘সিদ্ধান্তের জন্য ঝুঁকি নেওয়ার পাশাপাশি সাহসীও হতে হবে। লাপোর্তার চেয়ে সাহসী কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।’

বার্সেলোনার স্পনসর হতে চায় ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পুমা
এএফপি

তবে নাইকির সঙ্গে সম্পর্ক যদি ছিন্ন করতেই হয়, সেটি বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে করতে চায় বার্সা। ব্যাপারটা ভালোভাবে মিটিয়ে ফেলতে না পারলে বার্সাই সমস্যায় পড়বে। নাইকি চুক্তির শর্ত ভাঙার অভিযোগে মামলা করতে পারে। তখন নিজেদের বাজেট থেকে একটা বড় অংশ দেওয়া লাগতে পারে বার্সাকে। এমনিতেই ক্লাবটির আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। এর মধ্যে বর্তমান বাজেট থেকে বড় একটা অংশ চলে গেলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না! তবে স্পোর্ত জানিয়েছে, মামলা হলে বার্সার জবাব দেওয়ার জায়গাও আছে—ক্লাবটি নাইকির জায়গায় অন্য কাউকে না এনে নিজেরাই নিজেদের ব্র্যান্ড বানাতে চায়। এই যুক্তিকে পুঁজি করে তৈরি হচ্ছে ক্লাবটি।

বার্সেলোনা শহরেরই ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘মেবা’ ১৯৮২ সালে কাতালান ক্লাবটির জার্সি এবং অন্যান্য খেলাধুলার সরঞ্জাম বানানোর দায়িত্ব নিয়েছিল। ১০ বছর পর দায়িত্ব পায় ইতালির ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কাপ্পা। ১৯৯৮ সালে তাদের জায়গা নেয় নাইকি।

লা লিগায় বর্তমানে খেলা ক্লাবগুলোর মধ্যে এর আগে তিনটি ক্লাব এই শতাব্দীতে নিজেরাই নিজেদের ক্রীড়া সরঞ্জাম বানিয়েছে। অ্যাডিডাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের পর ২০০১ সাল থেকে নিজেদের ক্রীড়া সরঞ্জাম নিজেরাই বানানো শুরু করেছিল অ্যাথলেটিক বিলবাও। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘আমব্রো’র সঙ্গে বিলবাওয়ে স্পনসর চুক্তির মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠার সেই অভিযান শেষ হয়েছিল।

২০০৯ সালেই কাপ্পার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াল বেতিস নিজেরাই নিজেদের ক্রীড়া সরঞ্জাম বানানো শুরু করেছিল। ২০১২ সালে ইতালির স্পোর্টস অ্যাপারেল প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাক্রন’–এর সঙ্গে স্পনসর চুক্তির মাধ্যমে সেখান থেকে সরে আসে তাঁরা। ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মায়োর্কাও নিজেদের ক্রীড়া সরঞ্জাম নিজেরাই প্রস্তুত করেছে।

আরও পড়ুন