সেই লেবানন আর এই লেবানন এক নয়

গত নভেম্বরে মোরছালিনের গোলে লেবাননকে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশশামসুল হক

গত নভেম্বরে লেবাননের যে দল ঢাকায় খেলতে এসেছিল, সে দলের সঙ্গে কোচ হিসেবে এসেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার নিকোলা জুরসেভিচ। দারুণ ভদ্রলোক। কিংস অ্যারেনার সংবাদ সম্মেলন কক্ষেই সেটি বোঝা গিয়েছিল। তাঁর কয় দিন আগেই মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। জুরসেভিচ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই সমবেদনা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। তবে ক্রোয়াট ভদ্রলোকের জানানো সমবেদনাটা ‘কপট’ কি না, সে সন্দেহ ছিলই। তবে তিনি যে আসলেই অমায়িক ব্যক্তি, সেটি বোঝা গিয়েছিল পরদিন ম্যাচের পর।

শেখ মোরছালিনের দারুণ এক গোলে সে ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে দেয়নি জুরসেভিচের দলকে। যদিও ম্যাচটা আগাগোড়াই ভালো খেলেছিলেন জামাল-বিশ্বনাথরা। গোলকিপার মেহেদী হাসানের শিশুসুলভ এক ভুলে একটা বাজে গোল হজম না করলে আর ফাহিম-মোরছালিনরা সহজ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট না করলে সে ম্যাচে বাংলাদেশ জিততেই পারত।

আরও পড়ুন

জুরসেভিচ ম্যাচের পর বাংলাদেশকে ভালো পারফরম্যান্সের কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি। তবে ৭ মাস পর কাতারের দোহার খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ লেবাননের বিপক্ষে যে অ্যাওয়ে ম্যাচটি খেলবে, সেখানে জুরসেভিচ নেই। তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আজকের ম্যাচে লেবাননের কোচ মন্টেনেগ্রোর মিয়োদ্রাগ রাদুলোভিচ।

লেবাননের ফুটবল এক বছর ধরেই কিছুটা টালমাটাল। গত এক বছরে নাকি তিনজন কোচ বদল হয়েছে। ঠিক এক বছর আগে বেঙ্গালুরুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে লেবাবনের যে দলটি খেলতে গিয়েছিল, তাদের সঙ্গেও বাংলাদেশ ভালো লড়াই করেছিল। সে ম্যাচেও ভালো খেলে গোটা কয়েক সহজ সুযোগ মিস করে শেষ দিকে ২-০ গোলে হারতে হয়েছিল। সেই সময় দলের কোচ ছিলেন আরেক ক্রোয়াট আলেকজান্দার লিলিচ।

প্রস্তুতিতে মনোযোগী লেবানন
সংগৃহীত

কোচ নিয়ে দলটির মধ্যে যে মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা, সেটি জানেন বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আর অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। কাবরেরা অবশ্য এটিকে বাংলাদেশের জন্য সুবিধা ও অসুবিধা—দুই দিক দিয়েই দেখছেন। সুবিধা হচ্ছে, দলে যেহেতু বারবার কোচ বদল হচ্ছে, তাই দলটি কিছুটা হলেও অগোছালো। অসুবিধা হচ্ছে, কোচ বদলের সঙ্গে সঙ্গে কিছু খেলোয়াড় বদলে যেতে পারে, দলের পরিকল্পনা তৈরিতে সেটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

যদিও র‍্যাঙ্কিংয়ের ১২০ নম্বর স্থানে থাকা দলের সঙ্গে যখন ১৮৪ নম্বর দল খেলতে নামে, তখন নিজেদের উজাড় করে দেওয়া লড়াই দিয়েই শুধু সাফল্য মিলতে পারে। যেটি গত নভেম্বরে কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশের এই দলই করে দেখিয়েছিল। ভাগ্য সহায় হলে ঢাকার হোম ম্যাচেই ৩ পয়েন্ট পেয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন

কাল রাতে দোহায় ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে কোচ রাদুলোভিচ তাঁর দল নিয়ে নেতিবাচক জল্পনা-কল্পনা বাদ দেওয়ার হুমকিই যেন দিয়ে রেখেছেন, ‘গত নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল লেবানন। আমি সেই ম্যাচটা দেখেছি। তবে এটা বলে রাখি, নভেম্বরের লেবানন আর এই লেবানন এক নয়।’

লেবাননের সাম্প্রতিক রেকর্ড কী বলছে? ৬ তারিখ বাংলাদেশ যখন ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়ছে, লেবানন সেদিন খেলেছে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। ম্যাচটা গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। ওই ড্র থেকে অবশ্য ভালোই অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন রাদুলোভিচ, ‘ফিলিস্তিন খুবই ভালো দল। সে দলের সঙ্গে আমরা ড্র করেছি। ম্যাচটা ভালো খেলেছি।’

লেবাননের অধিনায়ক ও কোচ
সংগৃহীত

লেবানন ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ড্রয়ে খুশি হতেই পারে। সর্বশেষ ৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোনো জয় নেই লেবাননের। দুটি ড্র আছে—চীন ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে। তবে গত নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করার পর লেবানন এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী দল জর্ডানকে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়েছিল।

রাদুলোভিচ যে ‘অন্য লেবাননের’ কথা বলছেন, সেটির পক্ষে দারুণ যুক্তি জর্ডানকে হারানো। কোচ রাদুলোভিচ লেবানিজ ফুটবলের পুরোনো চরিত্র। এর আগেও ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত লেবানন জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেমন চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে ফিরিয়ে এনেছে, ঠিক তেমনি লেবানন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন টালমাটাল অবস্থায় হয়তো আশ্রয় খুঁজেছে পুরোনো কোচ রাদুলোভিচের কাছেই।

আরও পড়ুন

আজ লেবানন বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো মূল্যে জিততে চায় আরও একটি কারণে। আজই বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নেমে বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন লেবাননের জার্সিতে ১২২ ম্যাচ খেলা হাসান মাদুক। তিনি ২৩ গোল করে লেবাননের ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতাও। কোচ রাদুলোভিচ তাঁকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে সম্বোধন করেছেন ‘কিংবদন্তি’ হিসেবেই, ‘আমাদের কিংবদন্তি হাসান মাদুকের শেষ ম্যাচ কাল। তাকে দারুণ একটা বিদায় জানাতে বাংলাদেশকে হারাতে চাই আমরা।’

বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার একটা শঙ্কা লেবাননের ফুটবলারদের ব্যক্তিগত স্কিল নিয়ে। তিনি কালই বলেছিলেন, ‘লেবাননের শারীরিকভাবে শক্তিশালী বেশ কয়েকজন ফুটবলার আছেন, যাঁরা ব্যক্তিগত স্কিলে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারেন।’ হাসান মাদুক ছাড়াও মিডফিল্ডার মোহামাদ হায়দার খেলেছেন ৯৪ ম্যাচ। আরেক মিডফিল্ডার নাদের মাতার খেলেছেন ৭০ ম্যাচ। ৬৭ ম্যাচ খেলা ডিফেন্ডার নুর মনসুরও রাদুলোভিচের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র—এটা বোঝাই যাচ্ছে।

জয়ের ‘বিশ্বাস’ নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটা যে সহজ হচ্ছে না—এটা না বললেও চলছে।