৫৬ বছর বয়সী সাবেক প্রেমিকাকে হাতুড়িপেটা করে খুন, যাবজ্জীবন সাজা ২৮ বছর বয়সী সাবেক ফুটবলারের
সাবেক প্রেমিকাকে হাতুড়ি ও বেসবল ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি পেয়েছেন ইতালির সাবেক ফুটবলার জিওভান্নি পাদোভানি। ২৮ বছর বয়সী সাবেক এই সেন্টারব্যাক ইতালির চতুর্থ বিভাগের দল সানকাতালদেসের খেলোয়াড় ছিলেন।
২০২২ সালের আগস্টে ইতালির উত্তরাঞ্চলের শহর বোলোনিয়ায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ইতালির সংবাদমাধ্যম গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্ত জানিয়েছে, আদালত মনে করেন, পাদোভানি পরিকল্পনা করে হত্যাকাণ্ড ঘটালেও এর পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছিল না।
বিচারকাজের সময় পাদোভানি দাবি করেন, অপরাধটি করার সময় তাঁর নিজের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খেয়াল ছিল না। মানসিকভাবে ‘বিপর্যস্ত’ ছিলেন এবং সেই অপরাধের পর থেকে পাদোভানি নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন বলেও দাবি করেন। পাদোভানির ভাষায়, ‘যদি আপনি মনে করেন, আলেসান্দ্রার মতো সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী কোনো নারীকে খুন করাটা আমার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার, তাহলে যাবজ্জীবন সাজাই আমার প্রাপ্য। কিন্তু যদি এটা মনে করেন, যে অপরাধটি আমি করেছি, তার পেছনে (মানসিকভাবে) বিপর্যস্ত থাকাও একটি কারণ, তাহলে লোকের মতামত এড়িয়ে সবকিছু বিবেচনা করুন। আমি যেটা করেছি, সেটা ভয়াবহ ও ক্ষমার অযোগ্য।’
পাদোভানির ৫৬ বছর বয়সী সাবেক এই প্রেমিকার নাম আলেসান্দ্রা মাত্তেউজ্জি। পাদোভানি তাঁকে জ্বালাতন করছেন, এ অভিযোগ করার কয়েক সপ্তাহ পর আলেসান্দ্রা খুন হন। তাঁকে হত্যার দায়ে গত পরশু আদালত পাদোভানির বিরুদ্ধে এ রায় দেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন জানিয়েছে, বোলোনিয়ার ভিয়া দেল’আর্কোভেজ্জিও অঞ্চলে আলেসান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে এই খুনের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার দিন নিজের বোন স্তেফানিয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন আলেসান্দ্রা। এ সময় পাদোভানি—সাবেক মডেলও—প্রথমে হাতুড়ি, এরপর নিজের মুষ্টি, বেসবল ব্যাট এবং অ্যাপার্টমেন্টের পাশের বাগান থেকে নিয়ে আসা বেঞ্চ দিয়ে পিটিয়ে আলেসান্দ্রাকে হত্যা করেন। তাঁর চিৎকার ফোনে শুনেছেন স্তেফানিয়া।
মেইল অনলাইন আরও জানিয়েছে, পাদোভানির দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তিনি যেন একটি অনুশীলন সেশনে না আসেন। এরপর পাদোভানি আলেসান্দ্রার বাসা যে অঞ্চলে, সেখানে যান এবং বাসার পাশে ওত পেতে ছিলেন। পরে আলেসান্দ্রাকে অতর্কিত আক্রমণ করেন। স্তেফানিয়া এ সময় আলেসান্দ্রার চিৎকার এবং অন্যান্য কথাও ফোনে শুনেছেন।
এর আগে স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলকে স্তেফানিয়া এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘সে (আলেসান্দ্রা) গাড়ি থেকে নেমে চিৎকার করে বলছিল, না জিওভান্নি! না! তোমার সাহায্য ভিক্ষা চাইছি। আমি তখন ফোনের অপরপ্রান্তে ছিলাম। তৎক্ষণাৎ পুলিশকে জানাই এবং তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।’
আলেসান্দ্রা ঘটনাস্থলেই মারা যাননি। শরীরে প্রচুর জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সেখানে মারা যান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রায় এক বছরের মতো প্রেমের সম্পর্ক ছিল দুজনের। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তাঁদের আলাদা বসবাস করতে হতো। আলেসান্দ্রা থাকতেন বোলোনিয়ায়, আর পাদোভানি থাকতেন সিসিলিতে। তাঁর সাবেক ক্লাব সানকাতালদেস সেই অঞ্চলের।
স্তেফানিয়া জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পাদোভানি আলেসান্দ্রার বাসায় বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর আলেসান্দ্রাকে ফোনে নানা রকম হুমকিমূলক বার্তা পাঠাতেন পাদোভানি। অত্যধিক জ্বালানোয় পাদোভানির বিরুদ্ধে সে সময় পুলিশেও অভিযোগ করেছিলেন আলেসান্দ্রা। তাঁর প্রতিবেশীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাদোভানি আলেসান্দ্রাকে নানাভাবে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আলেসান্দ্রার গাড়িতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে রেখেছেন। বাড়ির বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছেন, এমনকি বারান্দা বেয়ে বাড়িতে ঢোকারও চেষ্টা করেছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা এ নিয়ে বলেছেন, ‘সে (আলেসান্দ্রা) তাকে ভয় পেত। কারণ, সব সময় জ্বালাতন করত। বাসাতেও কোনো অবস্থায় ঢুকতে দিতে চাইত না।’
বোলোনিয়া আদালতের বিচারক দমেনিক্কিও পাসকুয়ারেল্লিও মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ে পাদোভানির জ্বালাতন করা, নাশকতামূলক ব্যবহার এবং পরিকল্পনা করে আক্রমণ আমলে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত। রায় শুনে আদালতকক্ষ ছাড়ার সময় স্তেফানিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ‘আলেসান্দ্রা তো আর নেই। আমার বোনটা আর নেই।’ এ ঘটনা সে সময় ইতালিতে চাঞ্চল্য তৈরি করেছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, বিচারব্যবস্থা নারীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।