হয়তো এসি মিলান পারবে, হয়তো পারবে না। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে ইন্টার মিলানের মুখোমুখি হওয়ার আগে এ রকম কিছু আসলে বলতেই হতো এসি মিলান কোচ স্তেফানো পিওলিকে। সেটাই তিনি বলেছেন, ‘কেউই ভাবছেন না, মিলান ফাইনালে যেতে পারবে। কিন্তু আমি জানি, আমরা পারব। জানি, আমরা অসাধারণ একটা ম্যাচ খেলব।’
আত্মবিশ্বাস তো একেই বলে! আজ ফিরতি লেগে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিজ দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকদের অনুপ্রাণিত করতে এমন কিছুই বলতে হতো পিওলিকে। নইলে প্রথম লেগের যে ফল, এর পর মিলানকে ইস্তাম্বুলের ফাইনালে আশা করা একটু কঠিনই। সান সিরোতে হোম ম্যাচটা যে ২-০ গোলে হেরে বসে আছে মিলান!
গত সপ্তাহের ওই ম্যাচে ১১ মিনিটের মধ্যেই গোল দুটি খেয়েছিল মিলান। পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে তো পারেইনি, উল্টো নিজেদের সৌভাগ্যবান ভাবতে পারে যে ব্যবধানটা আরও বড় হয়নি। আরও গোটা তিনেক গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেছে ইন্টার। যা হয়েছে, তাতেই অবশ্য কাজটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে মিলানের জন্য।
চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বের ইতিহাস বলছে, মাত্র পাঁচবার নিজের মাঠে হেরে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষের মাঠে জিতে কোনো দল পরের রাউন্ডে যেতে পেরেছে। এর মধ্যে নিজেদের মাঠে ২ গোলের ব্যবধানে হেরে প্রতিপক্ষের মাঠে সেই ব্যবধান ঘোচানো জয়ের উদাহরণ মাত্র একটি। ২০১৮-১৯ মৌসুমের শেষ ষোলতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ওল্ড ট্রাফোর্ডে পিএসজির কাছে ২-০ গোলে হারের পর প্যারিসে গিয়ে জিতেছিল ৩-১ গোলে।
ফাইনালে যেতে হলে মিলানকে আজ সেই কীর্তির পুনরাবৃত্তি করতে হবে। একটা কথা ভেবে অবশ্য মিলান একটু সাহস পেতে পারে। অন্য ক্লাবগুলোর ক্ষেত্রে নিজের মাঠ ও প্রতিপক্ষের মাঠ সম্পূর্ণ আলাদা, মিলানের ক্ষেত্রে তা নয়। সান সিরো তো আসলে দুই মিলানেরই মাঠ। হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচ শুধু নামেই।
পার্থক্য বলতে অ্যাওয়ে ম্যাচে নিজেদের দর্শক কম থাকে, হোম ম্যাচে বেশি। পিওলি হয়তো সে কারণেই এত আত্মবিশ্বাসী, ‘আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা লক্ষ্য ঠিক করেছি মনে মনে; ম্যাচটা জেতা এবং ফাইনালে খেলা, যেটা কেউ হয়তো ভাবছেন না।’
কিন্তু ইন্টার কি আর সহজে হতে দেবে! ১৩ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলার সুযোগ ইন্টারের সামনে, সেটা কোনোভাবেই হারাতে চান না দলের কোচ সিমোন ইনজাগি, ‘আগামীকাল (আজ) ইন্টারের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোর একটা খেলব আমরা। আমরা জানি, যোগ্য দল হিসেবেই এগিয়ে আছি, কিন্তু সেটা শুধু ধরে রাখলেই হবে না, ইন্টারের মতো খেলতেও হবে। ঠান্ডা মাথায়, খোলা মনে খেলতে হবে, এ রকম ম্যাচ জেতার এটাই একমাত্র উপায়।’
খেলোয়াড়দের মাথা ঠান্ডা রাখতে বলা ইনজাগি অবশ্য ম্যাচের আগে নিজেই একটা বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। এই ম্যাচের রেফারিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্লেমেন্ত তারপিনকে, যিনি ফরাসি। ওদিকে মিলান দলে খেলেন চার ফরাসি খেলোয়াড়। এতে করে একটা পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে দাবি করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন ইনজাগি।
এ নিয়ে পিওলিকে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলেও তিনি ‘আমি কিছু বলতে চাই না’ বলে এড়িয়ে গেছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনেই তাঁর পাশে বসে থাকা মিলান মিডফিল্ডার সান্দ্রো তোনালি রসিকতা করে বলেছেন, ‘তাহলে তো রেফারি হিসেবে এমন একজনকে বেছে নিতে হবে, যাঁর কোনো জাতীয়তা নেই!’