গা থেকে কৈশোরের গন্ধ কাটানোর আগেই ছেলেটি স্প্যানিশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ
গাভি কি পারবেন স্পেনের এমবাপ্পে হতে? সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। বাকি উত্তরটা সময়ের হাতেই তোলা রইল।
১৮ বছর বয়স। এই বয়সে ব্যাগ গুছিয়ে কলেজে যাওয়াই তো নিয়ম। এমনকি ফুটবল নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখা খেলোয়াড়টির জন্যও বয়সটা মূলত প্রস্ফুটিত হওয়ার। কেউ কেউ অবশ্য ব্যতিক্রম হন। ওই যে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন না, ‘আঠারো বছর বয়সেই অহরহ/ বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’ স্প্যানিশ মিডফিল্ডার গাভিও তেমনই এক ব্যতিক্রম।
যাঁদের ওপর ভর করে স্পেন দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে, গাভি তাঁদের অন্যতম। গাভি প্রস্তুত। পুরো নাম পাবলো মার্টিন পায়েজ গাভিরা, সবাই তাঁকে আদর করে ডাকেন গাভি। এক বছর আগে ১৭ বছর বয়সে তাঁকে মাঠে নামিয়ে চমকে দিয়েছিলেন স্পেন কোচ লুইস এনরিকে।
গত বছর নেশনস লিগের সেমিফাইনালে ইতালির বিপক্ষে খেলছিল স্পেন। ম্যাচের শুরু থেকেই মাঠে নেমে আলোচনার কেন্দ্রে গাভি। স্পেনের জার্সিতে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় বলে কথা! কৈশোরের গন্ধও যে তখনো গা থেকে যায়নি। অভিজ্ঞতা বলতে বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে খেলা সাত ম্যাচ। তবে সেই ম্যাচগুলো দেখে এনরিকে চিনে নিয়েছিলেন স্প্যানিশ ফুটবলের ভবিষ্যৎকে।
ইতালির বিপক্ষে সেদিন ৮৩ মিনিট মাঠে থেকেই গাভি বুঝিয়ে দেন, ফুটবল নামক গোলক বস্তুটিকে তিনি ভালোই কথা বলাতে পারেন। সেদিন ইতালিয়ান খেলোয়াড়দের সঙ্গে রীতিমতো চোখ রেখে লড়েছিলেন। এরপর ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২-১ গোলে হারা ম্যাচেও আলো ছড়িয়েছিলেন গাভি। নেশনস লিগ থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চ—আজ কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচেও স্পেন দলের মূল অস্ত্র হতে পারেন গাভিই।
১৭ বছর বয়সী একজনকে জাতীয় দলের মঞ্চে নিয়ে আসাটা এনরিকের জন্য মোটেই সহজ ছিল না। তবে নিজের সিদ্ধান্তে ঠিকই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন স্পেন কোচ। গাভিকে নিয়ে এই কোচ বলেছেন, ‘সে এমনভাবে খেলে যেন সে স্কুলের মাঠে কিংবা বাড়ির সামনের বাগানে খেলছে। তার মানের এবং ব্যক্তিত্বের একজন খেলোয়াড় পাওয়া দারুণ ব্যাপার।’
বয়সের তুলনায় অধিক পরিপক্ব গাভিকে দেখে সাবেক ইংলিশ ফুটবলার এবং ফুটবল বিশ্লেষক জেমি রেডন্যাপ মজা করে তাঁর জন্মসনদ পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ছড়ি ঘোরানো গাভি ট্যাকটিক্যাল জায়গাতেও দুর্দান্ত। মাঠে তাঁর পজিশনাল সেন্স দারুণ। সব সময় ফাঁকা জায়গা বের করে পাস বাড়ানোর দিকে চোখ থাকে তাঁর।
গাভি সাধারণত মাঝমাঠ আলোকিত করে রাখা খেলোয়াড়। তবে দলের প্রয়োজনে পুরো মাঠে বিভিন্ন জোনে আপনি তাঁকে দেখতে পাবেন। দ্রুত সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দেখতে পারেন এবং প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে পারেন এই মিডফিল্ডার।
মাঠে বল পায়ে এখনই অনন্য হলেও ফুটবল–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গাভির সেরাটা আসতে বাকি আছে। যিনি একই সঙ্গে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, প্লেমেকার এবং উইংয়ে খেলারও সামর্থ্য রাখেন। বৈচিত্র্যময় এই ফুটবলারকে তাই ভাবা হচ্ছে স্প্যানিশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ।
২০১৮ সালে ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছিলেন এমনই কৈশোর পেরোনো এক খেলোয়াড়। হ্যাঁ, কিলিয়ান এমবাপ্পের কথাই বলছি। গাভি কি পারবেন স্পেনের এমবাপ্পে হতে? উত্তরটা সময়ের হাতেই তোলা রইল।