১০০০ গোল করতে চান রোনালদো
প্রশ্নটি মাঝেমধ্যেই ওঠে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো থামবেন কোথায়?
সঠিক উত্তর শুধু রোনালদোই জানেন। তবে একটি ধারণা বোধ হয় পাওয়া গেল, আর সেটি দিলেন রোনালদো নিজেই। ৩৯ বছর বয়সী পর্তুগিজ কিংবদন্তির সামনে বড় একটি মাইলফলক আছে। সেটি ছুঁয়ে ফেলতে পারলে হয়তো নিজের থামার জায়গাটা দেখতে পাবেন রোনালদো কিংবা কোথায়, কখন থামতে হবে, তা নিয়ে ভাবা শুরু করবেন। মাইলফলকটি কিসের, তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে আন্দাজ করে ফেলেছেন। ১০০০ গোল!
পর্তুগালের সংবাদমাধ্যম ‘চ্যানেল নাউ’কে রোনালদো কিছুদিন আগে বলেছেন, জাতীয় দল ছাড়ার সময় হলে কাউকে কিছু না বলেই জায়গাটা ছেড়ে দেবেন। ক্লাব ফুটবল থেকে কবে সরে দাঁড়াবেন, সে বিষয়ে এখনো মুখ খোলেননি রোনালদো। তবে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের ক্যারিয়ারে তাকিয়ে একটি ব্যাপার তো আন্দাজ করে নেওয়াই যায়। জাতীয় দল ও ক্লাব ফুটবলে প্রায় সবকিছু জিতে নেওয়া রোনালদোর সামনে এখন ওই একটাই লক্ষ্য—১০০০ গোলের মাইলফলক। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজের সাবেক সতীর্থ ও বন্ধু রিও ফার্ডিনান্ডকে এ কথাই বলেছেন আল নাসরের এ তারকা, ‘আমি ১০০০ গোল করতে চাই।’
রোনালদো মুখ ফুটে এ কথা না বললেও হতো। ব্যাপারটা আগেই আন্দাজ করে নিয়েছেন অনেকেই। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে রোনালদোর ক্যারিয়ার গোলসংখ্যা ৮৯৯। চাই আরও ১০১ গোল। এটাই রোনালদোর কাছে আপাতত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য আল নাসর ফরোয়ার্ডের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফার্ডিনান্ড। সেখানে রোনালদো ধারণা করেছেন, ৪১ বছর বয়সের মধ্যে ১০০০ গোলের মাইলফলকের দেখা পেতে পারেন, ‘আমি ১০০০ গোল করতে চাই। চোটে না পড়লে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটা চাই। ফুটবলে তাড়া করার জন্য এটাই আমার কাছে সেরা মাইলফলক। প্রথমে ৯০০ গোল, তারপর আমার চ্যালেঞ্জ হলো ১০০০ গোল করা।’
ফার্ডিনান্ডের সঙ্গে খোলামনে কথা বলেছেন রোনালদো। ফুটবলে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় পেলে, আলফ্রেড ডি স্টেফানোদের মতো যেসব কিংবদন্তির নাম উঠে আসে, তাঁদের সঙ্গে নিজের গোলসংখ্যার পার্থক্য নিয়েও কথা বলেছেন রোনালদো। পেলে-ডি স্টেফানোদের সময়ে ক্যামেরার বিস্তৃত ব্যবহার ছিল না, এ ব্যাপারে পার্থক্য টেনে রোনালদো বলেছেন, ‘আমি যত গোল করেছি সেগুলোর ভিডিও আছে। আমি তাদের (পেলে, ডি স্টেফানো) সবাইকেই সম্মান করি। তবে যদি তুমি (ফার্ডিনান্ড) আরও গোল চাও, অনুশীলনেরগুলো যোগ করতে পারো। তারপর হয়তো লোকের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব। তারা এই খেলোয়াড়কে পছন্দ করে নাকি ওই খেলোয়াড়ই সেরা। এটা নিয়ে আমি ভাবি না।’
সৌদি প্রো লিগ নিয়ে রোনালদো বলেছেন, ‘কোনো দেশই নিখুঁত নয়। আমার জন্য মানিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিল এবং আমি সত্যিই সেখানে থাকতে ভালোবাসি। আমার মনে হয় লিগ খুব খুব ভালো।’
২০২৪ ইউরোর শেষ ষোলোয় স্লোভেনিয়াকে টাইব্রেকারে ৩-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল পর্তুগাল। সে ম্যাচে টাইব্রেকারে লক্ষ্যভেদ করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন রোনালদো। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রোনালদো বলেছেন, তিনি যেহেতু ‘বিশ্বের সবচেয়ে অনুসারিত মানুষ’ তাই লোকে এর সমালোচনা করেছে। কিন্তু রোনালদোর কাছে ওই অশ্রুর ব্যাখ্যা অন্যরকম।
সেই ১১ বছর বয়স থেকে নিজের ওপর প্রত্যাশার যে চাপ তিনি তৈরি করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই কেঁদেছিলেন বলে জানিয়েছেন রোনালদো, ‘নিজের কাজের প্রতি প্যাশন থাকলে কেমন অনুভব করছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম; কারণ, সেই ১১ বছর বয়স থেকে নিজের ওপর চাপ তৈরি করে আসছি। “ক্রিস্টিয়ানো তুমি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়”—আমি সব সময় এভাবেই ভাবি। কিন্তু পেনাল্টি মিস করার পর নিজের, পরিবার ও সমর্থকদের কথা ভেবে খারাপ লাগছিল। অন্য কিছুর জন্য নয়।’
রোনালদো জানেন, সময় আর বেশি নেই। দ্রুতই হয়তো অবসর নিতে হবে। তবে সেই চূড়ান্ত সময়টি কবে, তা এখনো জানেন না রোনালদো, ‘জানি না কবে শেষ করব। যত খেলা যায়, ততই শেখার সুযোগ। তবে একটি ব্যাপার শিখেছি, মুহূর্ত উপভোগ করতে হয়। কারণ, আগামীকাল কী হবে, তা আমরা জানি না। যেদিন মনে হবে আমি কিছুই করতে পারছি না, সেদিন ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাব। কিন্তু সেই সময় থেকে এখনো দূরে আছি।’