বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারানো সেই রেনার এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ফ্রান্সকে
কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর লিওনেল মেসিদের উচ্ছ্বাস আর আর্জেন্টিনার উন্মাদনায় একটি বিষয় চাপাই পড়ে গেছে। আর্জেন্টিনার কাতার-অভিযানের শুরুটা হয়েছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অঘটন দিয়ে। সৌদি আরবের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই যে হেরে গিয়েছিল তারা।
ফুটবল বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া সেই সৌদি অঘটনের রূপকার ছিলেন হার্ভি রেনার। যাঁর নিজের জীবনের গতিপথটাও অনেকটাই রূপকথার মতো, ঝাড়ুদার থেকে বিশ্বকাপের কোচ হওয়া সেই রেনার সম্ভবত প্রায় সাত মাসের মধ্যে আরেকটি বিশ্বকাপ দলের ডাগআউটে।
এবার আর কোনো আন্ডারডগ দলের নয়, মেয়েদের বিশ্বকাপে হার্ভি রেনার কোচের দায়িত্বে আছেন শিরোপার অন্যতম দাবিদার ফ্রান্স দলের। ৫৪ বছর বয়সী ফরাসি কোচ সম্ভবত এক বছরের মধ্যে দুটি বিশ্বকাপে কোচের দায়িত্ব পালন করা একমাত্র ব্যক্তি।
তা যে রেনারে সওয়ার হয়ে ফ্রান্স মেয়েদের বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে, সেই রেনারের ক্যারিয়ারের গল্পটা একটু অন্য রকমই। খেলোয়াড়ি জীবনে বড় কোনো ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেননি। ফ্রান্সের নিচের সারির লিগে খেলতেন। মাত্র ২৯ বছর বয়সে অবসরে চলে যান।
খেলোয়াড়ি জীবনকে দ্রুতই বিদায় জানানো রেনার স্বপ্ন দেখতেন ফুটবল কোচ হওয়ার। কিন্তু কোচ হতে হলে যে পথ পাড়ি দিতে হতো, তার জন্য প্রয়োজন ছিল অর্থ। সেই অর্থ জোগাতে তাঁকে ঝাড়ুদারের কাজও করতে হয়েছে একটা সময়।
কোচেস ট্রেনিং শেষ করে প্রথমে ফ্রান্সেরই নিচু সারির একটি দলের কোচের দায়িত্ব নেন। এরপর একটা সময়ে সুযোগ আসে জাম্বিয়ার জাতীয় দলের কোচ হওয়ার। দলটির হয়ে জেতেন আফ্রিকান নেশনস কাপ। আফ্রিকান নেশনস কাপ জেতেন আইভরি কোস্টের হয়ে। এরপর ৩ বছর মরক্কোর কোচ ছিলেন। মরক্কো ছেড়ে ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেন সৌদি আরবের।
সৌদি আরবকে বিশ্বকাপে তো তোলেনই, নিজেদের প্রথম ম্যাচেই লেখেন আর্জেন্টিনা-রূপকথা। আর্জেন্টিনাকে হারানোর পথে ম্যাচের বিরতিতে ড্রেসিংরুমে সৌদি আরবের খেলোয়াড়দের উদ্দীপ্ত করতে দিয়েছিলেন অসাধারণ এক বক্তৃতা। সেটি নিয়ে সেই সময় যেমন আলোচনা হয়েছে, এখনো হয়।
বিশ্বকাপের পর নিজে থেকেই সৌদি আরবের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। হাতে নেন নতুন চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ নিতে কখনোই পিছপা হন না রেনার। তাই তো দায়িত্ব নিয়েছেন এবারের বিশ্বকাপে আসার আগে বাজে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া ফ্রান্স নারী দলের।
ফ্রান্স দলের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করে এ বছরের জানুয়ারির দিকে। সেই সময়ের কোচ করিন দিয়ক্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। অধিনায়ক ওয়েন্দি রেনারসহ (হার্ভি রেনারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই) কয়েকজন খেলোয়াড় বিশ্বকাপ না খেলারও ঘোষণা দেন। ৯ মার্চ দিয়াক্রেকে বরখাস্ত করার কয়েক সপ্তাহ পর হার্ভি রেনারকে কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মেয়েদের ফুটবলে কোচিংয়ের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না রেনারের। এ ছাড়া বিশ্বকাপের আগে তাঁর হাতে সময় ছিল মাত্র ৪ মাস। কিন্তু রেনার দলকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করেন এবং খুব ভালোভাবে দল পুনর্গঠন করেন। কয়েকজন খেলোয়াড়কে আবার দলে ফিরিয়ে আনেন তিনি। বিশেষ করে ফরোয়ার্ড লে সোমেরকে। দুই বছর জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন সোমের। সোমের তাঁর ফেরার ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৫-২ ব্যবধানের জয়ে জোড়া গোল করে এর প্রতিদান দেন। এটি ছিল ফ্রান্সের মেয়েদের দলে রেনারেরও প্রথম ম্যাচ।
এরপর রেনার জয় পান কানাডা ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গেও। তবে রেনারের আসল পরীক্ষা শুরু আজ। মেয়েদের বিশ্বকাপে জ্যামাইকার বিপক্ষে আজ নিজেদের প্রথম ম্যাচটি খেলবে ফ্রান্সের মেয়েরা। দেখা যাক বিশ্বকাপ-চ্যালেঞ্জের শুরুটা জিততে পারেন কি না রেনার!