দাম কমায় শীর্ষে সাদিও মানে, সঙ্গে সালাহ–পগবারাও
মাত্র এক মৌসুমের পারফরম্যান্সেই বদলে দেয় সব হিসাবনিকাশ। এই অল্প সময়ের ব্যবধানে একজন খেলোয়াড়ের আকাশছোঁয়া দাম নেমে আসতে পারে তলানিতে।
এ জন্য অবশ্য এককভাবে যে পারফরম্যান্সই শুধু দায়ী তা নয়, অনেক সময় খেলোয়াড়দের চোট এবং বয়সও দামের অঙ্কের ওপর প্রভাব ফেলে। ২০২২-২৩ মৌসুম শেষে দাম কমে যাওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যেও দেখা গেছে এমন চিত্র।
যেখানে সাদিও মানে, রোমেলু লুকাকুদের দাম কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে গত মৌসুমে তাঁদের পারফরম্যান্স। অন্যদিকে পল পগবা, ফেদেরিকো কিয়েসাদের দাম কমেছে চোটের কারণে। আর মোহাম্মদ সালাহর দাম কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে তাঁর বয়স।
সাদিও মানে
আগের দাম : ৭ কোটি ইউরো ▌বর্তমান দাম : ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌দাম কমেছে : ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
লিভারপুলের হয়ে সম্ভাব্য সব ট্রফি জিতে গত মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখে গিয়েছিলেন সাদিও মানে। কিন্তু সেনেগালের এই তারকা ফুটবলার প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। মৌসুমে ৩৮ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন মাত্র ১২টি। দলকে পথ দেখানো দূরে থাক, উল্টো সতীর্থ লিরয় সানের সঙ্গে মারামারি করে হয়েছেন বিতর্কিত। এসবের প্রভাব পড়েছে তাঁর দামেও, যা এক বছরে কমেছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। শোনা যাচ্ছে দলবদলে তাঁকে ছেড়ে দিতে পারে বায়ার্ন। এর মধ্যে মানের দাম কমেছে ৬৪.৩ শতাংশ।
উইলফ্রেড এনদিদি
আগের দাম : ৬ কোটি ইউরো ▌বর্তমান দাম : ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌দাম কমেছে : ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
এক বছরের মধ্যে ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরো দাম কমেছে লেস্টার সিটির ডিফেনসিভ মিডফিল্ডার উইলফ্রেড এনদিদির। লেস্টারের অবনমনের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই এই নাইজেরিয়ান তারকার। মৌসুমে ৩০ ম্যাচ খেলেও রাখতে পারেননি কোনো ভূমিকা। দাম কমাটা তাই অনুমেয়ই ছিল। তাঁর দাম কমার হার ৫৮.৩ শতাংশ।
পল পগবা
আগের দাম : ৪ কোটি ৮০ লাখ ইউরো ▌বর্তমান দাম : ১ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌দাম কমেছে : ৩ কোটি ৩০ লাখ ইউরো
পল পগবার মতো বাজে মৌসুম খুব কম খেলোয়াড়ই পার করেছেন। চোটে নাকাল ফরাসি তারকা পগবাকে জুভেন্টাসের হয়ে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতি তাঁর দাম না কমাটাই বিস্ময়কর হতো। গত মৌসুমে পগবার দাম কমার হার ৬৮.৮ শতাংশ।
জেডন সাঞ্চো
আগের দাম : ৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌বর্তমান দাম : ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌দাম কমেছে : ৩ কোটি ইউরো
যে প্রত্যাশা নিয়ে ফুটবল মঞ্চে তাঁর আগমন ঘটেছিল, সেটি এখনো পূরণ করতে পারেননি জেডন সাঞ্চো। গত মৌসুমে ৪১ ম্যাচে ৭ গোলের সঙ্গে অ্যাসিস্ট মাত্র ৩টি। শোনা যাচ্ছে, উপযুক্ত দাম পেলে ইংলিশ উইঙ্গারকে ছেড়ে দিতে পারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। গত মৌসুমের পর তাঁর দাম কমেছে ৩ কোটি ইউরো। সাঞ্চোর দাম কমেছে ৪০ শতাংশ।
রোমেলু লুকাকু
আগের দাম : ৭ কোটি ইউরো ▌বর্তমান দাম : ৪ কোটি ইউরো ▌দাম কমেছে : ৩ কোটি ইউরো
বিশ্বকাপ তাঁর ব্যর্থতায় বিদায় নিতে হয়েছিল বেলজিয়ামকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালেও সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন রোমেলু লুকাকু। সর্বকালের সেরা দামি ১০ খেলোয়াড়ের ৮ নম্বরে থাকা বেলজিয়ান তারকার দামের পতনটা অবশ্য অনুমেয়ই ছিল। গত এক বছরে তাঁর দামও কমেছে ৩ কোটি ইউরো। যা এখন ৭ কোটি থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটিতে। লুকাকুর দাম কমার হার ৪২.৯ শতাংশ। তবে পারফরম্যান্সে নাটকীয় উন্নতি না ঘটালে সামনের দিনগুলোতে এই দাম আরও কমতে পারে।
ইউরি টিয়লেমানস
আগের দাম : ৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌বর্তমান দাম : ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌দাম কমেছে : ৩ কোটি ইউরো
লেস্টার সিটির অবনমন ঠেকাতে পারেননি ইউরি টিয়লেমানস। ক্লাবটির অবনমনের পর ফ্রি এজেন্ট হিসেবে অ্যাস্টন ভিলায় যোগ দিয়েছেন এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। তবে নিষ্প্রভ থাকার প্রভাব পড়েছে তাঁর দামে। সামনের দিনগুলোতে দাম বাড়াতে হলে দারুণ কিছুই করে দেখাতে হবে এই বেলজিয়ানকে। গত মৌসুমে তাঁর দাম কমার হার ছিল ৫৪.৫ শতাংশ।
মোহাম্মদ সালাহ
আগের দাম : ৯ কোটি ইউরো ▌ বর্তমান দাম : ৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌দাম কমেছে : ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
গত মৌসুমে লিভারপুল ভালো করতে না পারলেও আলো ছড়িয়েছেন মিসরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ। মৌসুমে ৫১ ম্যাচে সব মিলিয়ে ৩০ গোল করার পাশাপাশি ১৬টি অ্যাসিস্টও করেছেন এই উইঙ্গার। এরপরও সালাহর দাম কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে মূলত তাঁর বয়স। ৩১ বছর বয়সী এই তারকার দাম কমেছে ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। সালাহর দাম কমেছে ২৭ শতাংশ।
সন হিউং-মিন
আগের দাম : ৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌বর্তমান দাম : ৫ কোটি ইউরো ▌
দাম কমেছে : ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
আন্তোনিও কন্তের অধীনে নিজের ছায়ায় ঢাকা ছিলেন টটেনহাম তারকা সন হিউং-মিন। গত মৌসুমে খুব একটা আলোচনাতেও ছিলেন না এই দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার। যার প্রভাব পড়েছে তাঁর দামেও। যা মৌসুম শেষে কমেছে ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো। তাঁর দাম কমার হার ৩৩.৩ শতাংশ।
অ্যান্ড্রু রবার্টসন
আগের দাম : ৬ কোটি ইউরো ▌ বর্তমান দাম : ৪ কোটি ইউরো ▌দাম কমেছে : ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
দলের ব্যর্থতা এবং নিজের সেরা ছন্দে না থাকা—দুটিই ভূমিকা রেখে লিভারপুল তারকা অ্যান্ড্রু রবার্টসনের দাম কমায়। পাশাপাশি বয়স ২৯ হওয়ার বিষয়টিও হয়তো তাঁর দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যের তাঁর দাম কমেছে ৩৮.৫ শতাংশ। দাম কমলেও রবার্টসনের দলবদল নিয়ে যেহেতু বিশেষ কোনো গুঞ্জন নেই, তাই এ স্কটিশ তারকা হয়তো বিষয়টা নিয়ে এখনই বিচলিত হবেন না।
ফেদেরিকো কিয়েসা
আগের দাম : ৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো ▌ বর্তমান দাম : ৪ কোটি ইউরো ▌দাম কমেছে : ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো
ফিওরেন্তিনা অনেক প্রত্যাশা জাগিয়ে জুভেন্টাসে এসেছিলেন ফেদেরিকো কিয়েসা। কিন্তু গত মৌসুমে চোটে পড়ে অনেকটাই পিছিয়ে গেছেন এই উইঙ্গার। পায়ের চোটে ২০২২-২৩ মৌসুমের নভেম্বর পর্যন্ত মৌসুম শুরুই করতে পারেননি কিয়েসা। ফিরেও যে পুরোপুরি স্বস্তিতে ছিলেন তা নয়। আর যেসব ম্যাচে মাঠে ছিলেন খুঁজে পাননি নিজের সেরা ছন্দও। তাঁর দাম কমার পেছনেও ভূমিকা রেখেছে এসব বিষয়। ৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো থেকে কমে এখন কিয়েসার দাম ৪ কোটি ইউরো। তাঁর দাম কমার হার ৩৮.৫ শতাংশ। এখন সামনের মৌসুমে নিজের সেরা ছন্দে ফিরতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।