ফ্রান্সের ‘আড়ালের আলাদিন’ গ্রিজমান
বেশির ভাগ সময় তাঁকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অথবা দ্বিতীয় স্ট্রাইকারের ভূমিকায় দেখা যায়। দলের প্রয়োজনে ফলস নাইন, উইঙ্গার এমনকি ফ্ল্যাঙ্ক (অ্যাটাকিং থার্ডের কিনারে দাঁড়ানো খেলোয়াড়, বল ক্রস করা যাঁর প্রধান কাজ) হিসেবেও অবদান রাখতে পারদর্শী। বাস্তবে আঁতোয়ান গ্রিজমানের মতো বহু গুণে গুণান্বিত ফরোয়ার্ড খুঁজে পাওয়াই দায়!
কাতার বিশ্বকাপের কথাই ধরুন। ফ্রান্সের হয়ে গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচে গ্রিজমান খেলেছেন ভিন্ন তিন পজিশনে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, ডেনমার্কের বিপক্ষে দ্বিতীয় স্ট্রাইকার আর তিউনিসিয়া ম্যাচে উইঙ্গার। ডেনিশদের বিপক্ষে তো তাঁর বাড়ানো বল থেকেই গোল করে ফরাসিদের শেষ ষোলোয় নিয়ে গেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
তিউনিসিয়ার বিপক্ষে ‘নিয়মরক্ষার’ ম্যাচে বদলি নেমে গোলও করেছিলেন আতলেতিকো মাদ্রিদ তারকা। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে আটকানোর ‘নতুন হাতিয়ার’ সেমি–অটোমেটেড টেকনোলজিতে বাতিল হয় সেটি। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও গোলের একাধিক সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন।
অথচ এই গ্রিজমান ফ্রান্সের বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে ‘আড়ালের আলাদিন’ হয়ে আছেন। বাঁ পায়ের ফরোয়ার্ড স্বকীয় শৈলীতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ফুটবলটাই তাঁর চেরাগ। করিম বেনজেমা, পল পগবা, এনগোলো কান্তের মতো তারকারা চোটে ছিটকে না পড়লে হয়তো আরও অন্তরালে চলে যেতেন। তবে গ্রিজমান এভাবেই থাকতে পছন্দ করেন। শুধু নীরবে–নিভৃতে তাঁর কাজগুলো করে যান, কোচ দিদিয়ের দেশম পরিকল্পনাগুলো বাস্তবে রূপ দেন। সেসব কিছু করে দেখাতে চাইবেন আজও।
রাতে দোহার আল তুমামা স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গ্রিজমানের ফ্রান্সের সামনে রবার্ট লেভানডফস্কির পোল্যান্ড। শক্তি–সামর্থ্যে পোলিশদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ফরাসিরা। তবে চমকে ঠাসা কাতার বিশ্বকাপে কাগজে–কলমের হিসাব সেভাবে কাজে আসছে না। জার্মানি, উরুগুয়ে, বেলজিয়াম, ডেনমার্কের মতো দলগুলোর গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে না–পারা সেটার জ্বলন্ত প্রমাণ।
তা ছাড়া গত বছর ইউরোয় এই শেষ ষোলো পর্বেই সুইজারল্যান্ডের কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল ফ্রান্স। এবার তাই প্রতিপক্ষ নিয়ে বাড়তি সতর্ক গ্রিজমান। সংবাদ সম্মেলনে ৩১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩–১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর আমরা ওদের হালকাভাবে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমরা জিততে চলেছি। এখন বুঝতে পারছি বড় প্রতিযোগিতায় সহজ প্রতিপক্ষ বলে কিছু নেই।’
গ্রিজমান তো বুঝেছেন। দলের বাকিরা বুঝতে পারলেই হয়।