২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত জার্মানির কোচ নাগলসমান
আগামী জুন–জুলাইয়ে ঘরের মাঠে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ খেলবে জার্মানি। গুঞ্জন ছিল ইউরো শেষেই জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন ইউলিয়ান নাগলসমান, ফিরবেন সাবেক ঠিকানা বায়ার্ন মিউনিখে।
তবে গুঞ্জন উড়িয়ে জার্মানি জাতীয় দলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাগলসমান। জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের (ডিএফবি) সঙ্গে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছেন ৩৬ বছর বয়সী এ কোচ।
ডিএফবির সঙ্গে চুক্তি নবায়নের পর নাগলসমান বলেছেন, ‘সিদ্ধান্তটা হৃদয় থেকে নিয়েছি। জাতীয় দলকে প্রশিক্ষণ দিতে পারা এবং দেশের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে কাজ করতে পারা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের। দারুণ পারফর্ম করে সাফল্য পাওয়ার মাধ্যমে পুরো দেশকে অনুপ্রাণিত করার সুযোগ আমাদের আছে।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে হানসি ফ্লিককে বরখাস্ত করে নাগলসমানকে দায়িত্ব দেয় ডিএফবি। প্রাথমিকভাবে ফেডারেশনের সঙ্গে ২০২৪ ইউরো পর্যন্ত চুক্তি ছিল। তাঁর অধীনে এখন পর্যন্ত ৬টি ম্যাচ খেলেছে জার্মানি। জিতেছে ৩টি, হেরেছে ২টি ও ড্র করেছে ১টি ম্যাচ। ৩ জয়ের মধ্যে সর্বশেষ ২টি আবার দুই পরাশক্তি নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের বিপক্ষে।
সেটাই নাগলসমানকে ক্রুস–নয়ার–মুলার–হাভার্টজদের সঙ্গে থেকে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে, ‘মার্চে ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় দুটি সত্যিই আমাকে ছুঁয়ে গেছে। আমরা নিজেদের মাঠে সাফল্যমণ্ডিত ইউরো খেলতে চাই। আমি এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছি এবং (এরপর) আমার কোচিং দলকে নিয়ে বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকব।’
বারবার চোটে পড়ার কারণে মাত্র ২০ বছর বয়সে খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলে দেন নাগলমান। এরপর ঝুঁকে পড়েন কোচিংয়ে। শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাব ফুটবলে তাঁর কোচিংয়ে হাতেখড়ি হয় টিএসজি হফেনহাইমকে দিয়ে। জার্মান বুন্দেসলিগার ক্লাবটিতে ৪ বছর দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৯ সালে হফেনহাইম ছেড়ে লাইপজিগের কোচ হন নাগলসমান। তাঁর অধীনেই লাইপজিগ ২০১৯–২০ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ওঠে। পরের মৌসুমে জার্মান কাপে হয় রানারআপ। দুই মৌসুম দায়িত্বে থেকে দুবারই দলকে বুন্দেসলিগা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ তিনে রাখতে সক্ষম হন। কম বাজেটের দল নিয়েও লাইপজিগকে সাফল্য এনে দেওয়ায় বিশ্ব ফুটবলে নাগলসমানের সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
২০২১ সালে জার্মানির সফলতম ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের কোচ হন নাগলসমান। মাত্র ২ মৌসুমেই বায়ার্নকে জেতান ৩টি শিরোপা। সময়টা ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু জার্মানির শীর্ষ দৈনিক বিল্ডের বায়ার্ন মিউনিখ প্রতিনিধি লিনা ভুরজেনবার্গারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতেই সবকিছু ওলট–পালট হয়ে যায়। খবর বের হয়, ভুরজেনবার্গার নাকি বায়ার্নের ড্রেসিংরুমের তথ্য বাইরে পাচার করেন। শেষ পর্যন্ত গত বছরের মার্চে নাগলসমানকে ছাঁটাই করে বায়ার্ন। ধারণা করা হয়, সাংবাদিক প্রেমিকা ভুরজেনবার্গারের কারণেই বায়ার্নের চাকরি হারাতে হয় তাঁকে।
এরপর চেলসি, পিএসজি, টটেনহামসহ বেশ কয়েকটি ক্লাব নাগলসমানের প্রতি আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত জার্মানি জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন তিনি। নতুন দায়িত্ব বুঝে পেয়েই বেশ কিছু বদল আনেন নাগলসমান। জাতীয় দলে বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ড খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দেওয়ার প্রথা ভেঙে সত্যিকার অর্থেই ফর্মে থাকাদের সুযোগ দিতে থাকেন। মাত্র ৬ ম্যাচেই ৩১ ফুটবলারকে খেলানো সেটারই প্রমাণ।
এ মৌসুমে বুন্দেসলিগা পয়েন্ট তালিকার তিনে থাকা স্টুটগার্টের ক্রিস ফুহরিখ, মাক্সিমিলিয়ান মিটলস্টাট, ডেনিজ উনডাভ, ভালডেমার আন্তন, জশা ভাগনোমানদের মতো অচেনা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ দেন নাগলসমান। এ ছাড়া হফেনহাইমের মাক্স বিয়ার, হাইডেনহাইমের ইয়ান–নিকলাস বেস্তেকেও তিনি স্কোয়াডে রাখেন। বায়ার লেভারকুসেনের হয়ে বুন্দেসলিগা জেতা ফ্লোরিয়ান ভির্টৎসকেও স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ দিয়েছেন নাগলসমান। তবে তিনি সবচেয়ে বড় চমকটা দিয়েছেন টনি ক্রুসকে অবসর ভেঙে ফেরায় ভূমিকা রেখে।
ফ্লিকের অধীনে জার্মানি যে দুঃসময় পার করেছে, সেখান থেকে দলকে এত অল্প সময়েই এক সুতোয় বাঁধতে পারাটাই হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নাগলসমানের চুক্তি বাড়াতে ডিএফবিকে আগ্রহী করে তুলেছে।