‘আমাকে শান্তিতে থাকতে দিন’—উয়েফার কাছে মরিনিওর আকুতি

ফেনারবাচে কোচ জোসে মরিনিওএএফপি

ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার প্রতি অভিযোগের তির ছুড়েছেন ফেনারবাচে কোচ জোসে মরিনিও। পোর্তো ও ইন্টার মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী এই কোচের অভিযোগ, উয়েফা অন্য কোচদের যে চোখে দেখে, তাঁকে সেই চোখে দেখে না। আর সংস্থাটি তাঁর প্রতি এমন আচরণ শুরু করেছে ২০২৩ ইউরোপা লিগ ফাইনালের পর থেকে।

আরও পড়ুন

ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমা থেকে এ বছর জানুয়ারিতে ছাঁটাই হন মরিনিও। গত জুনে নিয়েছেন তুর্কি ক্লাবটির দায়িত্ব। গত বছর রোমাকে ইউরোপা লিগের ফাইনালে তুলেছিলেন মরিনিও। সে ম্যাচে রোমার প্রতিপক্ষ ছিল স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়া। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে জেতে সেভিয়া। এই ম্যাচে রেফারি অ্যান্থনি টেলরের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় মরিনিওকে ৪ ম্যাচ নিষিদ্ধ করেছিল উয়েফা।

আমি বিশেষ সুবিধা চাই না। যতটুকু স্বাভাবিক, ততটুকুই চাই। এর বেশি না। ভুল কিছু করে থাকলে শাস্তি বা জরিমানা হোক। কিন্তু ভুল না করে থাকলে শান্তিতে থাকতে দিন।
উয়েফার প্রতি ফেনারবাচে কোচ জোসে মরিনিও

গতকাল স্কাই স্পোর্টস মরিনিওর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। সেখানে উয়েফার তাঁর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ নিয়ে কথা বলেছেন পর্তুগিজ এই কোচ, ‘মনে হচ্ছে, ইউরোপে আমি সমস্যায় পড়েছি। একটি ফাইনাল আমি এমনভাবে হেরেছি, যা মেনে নিতে পারিনি, তার পর থেকেই এটা মনে হচ্ছে।’ এরপর উয়েফার প্রতি অভিযোগের আঙুল তাক করে মরিনিও বলেছেন, ‘আমি বিশেষ সুবিধা চাই না। যতটুকু স্বাভাবিক, ততটুকুই চাই। এর বেশি না। ভুল কিছু করে থাকলে শাস্তি বা জরিমানা হোক। কিন্তু ভুল না করে থাকলে শান্তিতে থাকতে দিন। যদিও এটা কঠিন হয়ে উঠছে। বুদাপেস্টের ফাইনালের পর থেকেই এটা কঠিন হয়ে উঠছে।’

ইউনাইটেডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখেছিলেন মরিনিও
এএফপি

ইউরোপা লিগে গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র ম্যাচে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন চেলসিকে তিনবার প্রিমিয়ার লিগ ও ইন্টারকে দুবার সিরি আ জেতানো এই কোচ। পেনাল্টির আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় রেফারির সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের ফল হিসেবে লাল কার্ড দেখেছিলেন। মরিনিও সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, ‘অন্যদের সঙ্গে যেমন (আচরণ) করা হয়, তেমন আচরণ আমারও প্রাপ্য। মাঠে আপনি লিওনেল মেসি কিংবা প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন, যেই হোন না কেন, নিয়ম একই। সেটা মেসি এবং তরুণ কোনো খেলোয়াড়ের জন্যও একই। কোচদের জন্যও একই নিয়ম।’

আরও পড়ুন

কোচের প্রসঙ্গ টেনে মরিনিও এরপর আরও বলেছেন, ‘আপনি কার্লো আনচেলত্তি নাকি তরুণ কোনো কোচ, সেটা ব্যাপার না। একজন অল্প বয়সী যেমন আচরণ করেন, আনচেলত্তিকেও একই আচরণ করতে হবে। নিজের জন্য আমি এটাই চাই, কিন্তু পাচ্ছি না।’

লন্ডন আমার ঘর। তাই একদিন ফিরতেই হবেই, তবে কেউ না চাইলে ভিন্ন কথা। কিন্তু একদিন আমি ফিরতে চাই।
ইংল্যান্ডে ফেরা নিয়ে মরিনিও

ইউনাইটেডের বিপক্ষে ড্রয়ের পর মরিনিও বলেছিলেন, কোচ হিসেবে তিনি পরবর্তী দায়িত্ব নিতে চান ইংল্যান্ডের কোনো ক্লাবে, যারা উয়েফার প্রতিযোগিতায় নেই। ৬১ বছর বয়সী এই কোচ তাঁর সেই মন্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘মজা করেছি। অবনমনের লড়াই করছে এমন দলে আমি কখনোই যোগ দেব না। কখনো না।’ মরিনিও এরপর বুঝিয়ে বলেছেন, ‘হতাশ হয়ে পড়ি। অথচ ক্যারিয়ারের হতাশ হওয়ার মতো পর্যায়ে আমি নেই। সব সময় খুশি থাকব, ক্যারিয়ারের এমন পর্যায়ে আছি। কিন্তু এখন ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার খেলায় সব সময়ই হতাশ হতে হয়। তবে আমি অবনমন এড়ানোর লড়াই করব না। এটা বেশি কঠিন। সত্যি বলতে, এটা আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হয়। শিরোপা জয়ের চেয়ে কঠিন। আবেগের জায়গা থেকেও খুব কঠিন হবে। কারণ, এটা এমন কিছু, যা জীবনকে পাল্টে ফেলে। কাজটা তাই সাহসীদের জন্য।’

ইংল্যান্ডে একদিন ফিরতে চান মরিনিও
এএফপি

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেড, চেলসি ও টটেনহামের দায়িত্ব পালন করা মরিনিও এখনো ইংল্যান্ডে ফেরার স্বপ্ন দেখেন, ‘লন্ডন আমার ঘর। তাই একদিন ফিরতেই হবেই, তবে কেউ না চাইলে ভিন্ন কথা। কিন্তু একদিন আমি ফিরতে চাই। তবে ভুল বুঝবেন না। পরিষ্কার করে বলে রাখি, আগামী দুই বছর, এই মৌসুম এবং পরেরটি—কেউ আমাকে ফেনারবাচে থেকে নিতে পারবে না।’