মেসি–এমবাপ্পেরা ‘সর্বোচ্চ’ দিলেও পিএসজি পেছাল ২৮ বছর
চোটের কারণে নেইমার এখন মাঠের বাইরে। তবু দায় এড়াতে পারবেন না। প্রথম লেগে তো খেলেছেন, গোল পাননি। ‘ব্লাঙ্ক ফায়ার’ হয়েছে লিওনেল মেসিরও। আর বেচারা কিলিয়ান এমবাপ্পে! প্রথম লেগে বল দুবার বায়ার্ন মিউনিখের জালে পাঠালেও অফসাইড। ওই গোল দুটো হলেই তো বেঁচে যেত পিএসজি! কিন্তু যা হয়নি তা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই।
প্রথম লেগে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়লেও ফিরতি লেগে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে পিএসজি। মেসি-এমবাপ্পেরা কাল রাতে কিছুই করতে পারেননি। বিশ্বাস হয়, বিশ্বের সবচেয়ে দামি দুই খেলোয়াড় দলে থাকতে পিএসজি গোল করতে পারেনি! চাইলে সেই ঘায়ে আরেকটু নুন ছেটানো যায়। বিশ্বের অন্যতম সেরা তিন খেলোয়াড়—যাঁদের মধ্যে দুজন খেলেছেন সর্বশেষ বিশ্বকাপের ফাইনাল—থাকতেও পিএসজি গোল পায়নি। বস্তার পর বস্তা পেট্রোডলার খরচ করে লাভটা হলো কী!
চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের চেষ্টায় এবার টানা ১১তমবার ব্যর্থ হলো পিএসজি। মেসি-এমবাপ্পে-নেইমারদের নিয়ে পিএসজির এই ‘প্রজেক্টে’র ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে জোরেশোরেই প্রশ্ন উঠছে। আর উঠবেই না কেন! ভেবে দেখুন, কাতার বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সেরার দুই পুরস্কারই উঠেছে পিএসজির দুই খেলোয়াড়ের হাতে। ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ মোট ৮ গোল করে ও ২টি গোল বানিয়ে ‘গোল্ডেন বুট’ জিতেছেন এমবাপ্পে। মেসি ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন নিজে ৭ গোল করে ও সতীর্থদের দিয়ে ২ গোল করিয়ে। অথচ বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে দুই লেগে মোট ১৮০ মিনিট পেয়েও তাঁদের কেউ গোল করতে পারেননি। ভাবা যায়!
প্রথম লেগে ১-০ গোলে হারের পর কাল রাতে ফিরতি লেগে আরও ২টি গোল খেয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-০ ব্যবধানের হারে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে পিএসজি। এই স্কোরবোর্ডে তাকিয়ে ম্যাচ শেষে এমবাপ্পের বলা কথাগুলো মিলিয়ে নিন, ‘এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে আমার প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলাম, আমরা নিজেদের সর্বোচ্চটা ঢেলে দেব। সত্য হলো, এটাই আমাদের সর্বোচ্চ।’
পিএসজির এই ফরাসি তারকার কথা শুনেই বোঝা যায়, নিদারুণ হতাশা থেকে কথাটা বলেছেন। পরের কথাগুলো আরও হতাশার, ‘পিএসজির কী নেই? দুটি দলের স্কোয়াডে তাকালে বোঝা যায় না। দুর্দান্ত একটা স্কোয়াড, যাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়।’ কিন্তু এমন দুর্দান্ত স্কোয়াড নিয়েও আবারও ব্যর্থ হতে হলো। সত্যিই মাঝেমধ্যে ফুটবলের রসিকতাও খুব নির্মম হয়!
কতটা নিমর্ম মেসি তাঁর উদাহরণ। ২০২১ সালে মেসি বার্সেলোনা ছাড়ার আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে এই ক্লাবের হয়ে সর্বশেষ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারেননি ২০০৭ সালে। এরপর প্রতিবারই অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছেন।
কিন্তু পিএসজিতে আসার পর কখনো এ মঞ্চের দেখা পাননি। আরও পরিতাপের বিষয় হলো, চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই লেগের ম্যাচে পিএসজি সর্বশেষ গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিল ২৮ বছর আগে। ১৯৯৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে এসি মিলানের বিপক্ষে। এবারের মতো সেবারও দুই লেগ মিলিয়ে ৩-০ গোলে হেরেছিল পিএসজি এবং দুই লেগের স্কোরও একই—১-০ ও ২-০! কিন্তু সেই দলে জর্জ উইয়াহ ও ডেভিড জিনোলা ছাড়া তারকা তেমন কেউ ছিলেন না। মেসি-এমবাপ্পেদের পিএসজির ক্ষেত্রে কথাটা খাটে না। তারকার হাট নিয়েও কাজের কাজ গোলই তো করতে পারেনি!