ফাইনালের রাতে দি মারিয়ার অশ্রুতে ছিল প্রতিশোধের আগুন
প্রথমবার কাঁদলেন আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় গোলটি এনে দেওয়ার পর, দ্বিতীয়বার কাঁদলেন খেলার মোড় ঘুরিয়ে ফ্রান্স ম্যাচে সমতা নিয়ে আসার পর, আর তৃতীয়বার টাইব্রেকার শেষে। আনহেল দি মারিয়ায় কান্নার সঙ্গেই যেন ওঠানামা করল লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামের আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল।
লিওনেল মেসি নামক মহাতারার শেষ বিশ্বকাপ আলাপের ডামাডোলে অনেকেই ভুলে গিয়েছিলেন, এটি দি মারিয়ারও শেষ বিশ্বকাপ। তবে ক্ষণে ক্ষণে ফিরে আসা ওই কান্নায় শুধু শেষ বেলায় ট্রফির আক্ষেপ মেটানোর আকুতিই ছিল না, ছিল ‘প্রতিশোধ’-এর তাড়নাও।
২০০৮ অলিম্পিকে দি মারিয়ার গোলেই স্বর্ণপদক জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এক যুগের বেশি সময় পর তাঁর গোলে লিওনেল মেসিরা পান কোপা আমেরিকার শিরোপাও। এমনকি এ বছরের জুনে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে ফিনালিসিমায়ও গোল করেছিলেন। যে ম্যাচের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, কাতারেই শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন।
তবে তিনটি বড় মঞ্চে দলকে জেতানোর পথে গোল করলেও বড় এক অতৃপ্তি রয়ে গিয়েছিল দি মারিয়ার। আট বছর আগে ব্রাজিলের মাটিতেই বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল আর্জেন্টিনা, খেলেছিল ফাইনালে। সেদিন বেঞ্চে বসে থেকে জার্মানির কাছে দলের হার দেখতে হয়েছে তাঁকে।
কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে চোট পাওয়ায় সেমিফাইনালও খেলতে পারেননি। তবে খুব করে চেয়েছিলেন ফাইনালে খেলবেন। পরে দ্য ‘প্লেয়ার্স ট্রিবিউন’-এ লেখা কলামে জানিয়েছিলেন, তৎকালীন ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে খেলাতে মানা করেছিল। হামেশ রদ্রিগেজকে কেনার অর্থ জোগাড় করতে তাঁকে বিক্রির আগে সুস্থ দেখতে চেয়েছিল রিয়াল।
২০১৪ বিশ্বকাপের ঘটনা প্রায় ফিরে এসেছিল এবারও। দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চোট পাওয়ার কারণে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পেরেছেন মাত্র ১০ মিনিট। সেমিফাইনালে সেটাও পারেননি। ভেতরে-ভেতরে শঙ্কায় ছিলেন, এবারও যদি ফাইনাল মিস করেন!
তবে ম্যাচ শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে সুখবরটা দেন লিওনেল স্কালোনি। রাখেন প্রথম একাদশে। আর মাঠে নেমেই ২১ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি আদায় করে দেন দি মারিয়া। এর ১৫ মিনিট পর জালে বল পাঠিয়ে দলকে এনে দেন দ্বিতীয় গোলও। চোখে প্রথমবার জলও ঝরে তখনই। নাটকীয়তায় ভরা ফাইনাল শেষে কেঁদেছেন জয়ের কান্না।
সেই কান্নায় মিশেছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে না পারার যন্ত্রণার উপশম, উল্লেখ করলেন ‘প্রতিশোধ’ শব্দটিও, ‘পরিবারের সঙ্গে সময়টা ভাগাভাগি করতে পেরে, ২০১৪ সালের প্রতিশোধ নিতে পেরে কী আনন্দ পাচ্ছি, আমি ব্যাখ্যা করতে পারব না। আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।’ শব্দ খোঁজার নয়, দি মারিয়ার এখন উপভোগের সময়। সে তো করতেই পারছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাতভর পার্টি করেছে আর্জেন্টিনা দল। তবে এই হই-হুল্লোড়ের মধ্যেও মন খারাপ হয়েছে দি মারিয়ার।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘লেকিপ’কে জানিয়েছেন দি মারিয়ারই এক আত্মীয়। গত মে মাসেই দি মারিয়া জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ শেষেই আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি ছাড়বেন; অর্থাৎ অবসর নেবেন। তার মানে, কাল রাতে বিশ্বকাপ ফাইনাল আর্জেন্টিনার জার্সিতে দি মারিয়ার শেষ ম্যাচ হয়ে রইল।
জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে আর খেলতে পারবেন না, এ নিয়ে দি মারিয়ার নাকি কিছুটা মন খারাপ, ‘সে সব সময় বড় ম্যাচগুলো খেলতে চেয়েছে। আরেকটি ফাইনাল খেলতে পেরে সে খুব খুশি। তবে এই (জাতীয় দল) জার্সিতে এটাই তার শেষ ম্যাচ, সে জন্যও তার মন খারাপ কিছুটা।’
নিজের ফেসবুক পেজে পরিবারের কয়েকটি ছবি পোস্ট করেছেন দি মারিয়া। পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখানে লিখেছেন, ‘তারা কখনো আমাকে হাল ছাড়তে দেয়নি। সব সময় পাশে থাকার জন্য আমি শুধু ধন্যবাদটুকু জানাতে চাই। নিজের সবকিছু দিয়ে আমি তাদের ভালোবাসি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!’