১১৯ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ায় চীনের কিংবদন্তি ফুটবলারের ২০ বছরের কারাদণ্ড
লি টাই চীনের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন। খেলেছেন এভারটন ও শেফিল্ড ইউনাইটেডের মতো ইংলিশ ক্লাবে। সেই লি টাই এবার ভিন্ন এক কারণে সংবাদের শিরোনাম হলেন। চীনের সাবেক এই ফুটবলারকে ঘুষ নেওয়ার অপরাধে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
চীনের সাবেক এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এর আগে ম্যাচ পাতানো, ঘুষ নেওয়া ও কোচিংয়ের চাকরি পেতে ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অপরাধ স্বীকার করেছেন। লি টাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা কার্যক্রমকে চীনের সি চিন পিং সরকারের দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থান হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
শুধু লি টাই নন, এই সপ্তাহে চীনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (সিএফএ) তিন সদস্যকে ঘুষের অভিযোগে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া এক ডজনের বেশি কোচ ও খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলছে বলেও জানা গেছে।
লি টাই ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এরপরই বড় ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে সামনে উঠে আসে তাঁর নাম। গত মার্চে ১ কোটি ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা) বেশি ঘুষ নেওয়ার অপরাধ স্বীকার করে দোষী সাব্যস্ত হন লি টাই।
এর মধ্যে চীনের সরকারি সম্প্রচারক সিসিটিভিতে লি টাইয়ের দুর্নীতি একটি তথ্যচিত্রও বানানো হয়েছে। যেখানে নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। লি টাই বলেন, ‘আমি খুবই দুঃখিত। আমার উচিত ছিল সতর্ক থাকা এবং সঠিক পথ অনুসরণ করা। কিছু কিছু বিষয় সে সময় ফুটবলে বেশ প্রচলিত ছিল।’
চীনের হয়ে ৯২ ম্যাচ খেলা লি খেলেছেন ২০০২ সালের বিশ্বকাপেও। চীনের ক্লাব লিয়াওনিং থেকে ২০০২ সালের আগস্টে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব এভারটনে যোগ দেন লি। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড পজিশনে ২০০২–০৩ মৌসুমে ২৯ ম্যাচ খেলে এভারটনকে লিগ টেবিলের সাতে তুলে মৌসুম শেষ করেছিলেন লি। পরের মৌসুমে তাঁকে এভারটন স্থায়ীভাবে কিনে নিলেও ক্রমাগত চোটের কারণে নিয়মিত হতে পারেননি।
২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচে পা–ও ভেঙে নেন। এভারটনের হয়ে পরবর্তী তিন বছরে মাত্র ৫ ম্যাচ খেলে লি যোগ দেন শেফিল্ডে। সেখানে দুই বছর টিকলেও চোটের কারণে মাত্র একটি ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন লিগ কাপে। শেফিল্ড থেকে লি ফিরে যান চীনের ঘরোয়া ফুটবলে। ২০১১ সালে অবসর নেওয়ার পরের বছর নেমে পড়েন কোচিংয়ে।
চলতি বছরের শুরুতে সিএফএর সাবেক প্রেসিডেন্ট চেন জুইউয়ানকে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার ঘুষ নেওয়ার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট শি অতীতে একাধিকবার চীনকে প্রধান ফুটবল শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন। ২০১১ সালে চীনা ফুটবল নিয়ে তিনটি ইচ্ছার কথা বলেছিলেন তিনি।
আবারও বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হওয়া, বিশ্বকাপের আয়োজন করা এবং কোনো এক দিন শিরোপা জেতা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে ফুটবলের শীর্ষ ব্যক্তিরা অপরাধের দায়ে শাস্তির মুখে পড়ছেন, তা শেষ পর্যন্ত দেশটির ফুটবলকে আরও পিছিয়ে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।