মেসি পানামার বিপক্ষে ৮০০তম গোল করলে সেটি কি ফিফার স্বীকৃতি পাবে
আর্জেন্টিনার ফুটবল–ভক্তদের দৃষ্টি এখন শুক্রবার সকালের ওপর। বিশ্বকাপ জয়ের তিন মাস পর তিন তারকার জার্সি পরে সেদিনই যে প্রথম খেলতে নামবেন লিওনেল মেসিরা। বিশ্বকাপ জিতে সপ্তম স্বর্গে থাকা মেসিদের জন্য এই ম্যাচ মূলত পুনর্মিলনীর। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী সদস্যরা ১৮ ডিসেম্বরের স্মরণীয় মুহূর্তের পর এই প্রথম একসঙ্গে খেলতে নামায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে এই দুটি ম্যাচ।
পাশাপাশি এই ম্যাচ দুটি দিয়ে অনন্য এক উচ্চতায় ওঠার সুযোগ আছে মেসির। ৭৯৯ গোলের মালিক মেসি আরেকবার জালের দেখা পেলেই স্পর্শ করবেন ৮০০ গোলের মাইলফলক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই ম্যাচে গোল পেলে সেগুলো কি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে? কদিন আগপর্যন্ত অবশ্য সন্দেহ ছিল না।
তবে পানামা দলে নিয়মের অধিক খেলোয়াড় পরিবর্তন এবং বিকল্প কোচ নিয়ে খেলতে আসার কারণে এই ম্যাচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে ক্যাটাগরি ‘এ’র মর্যাদা পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সব বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় খেলেন, তাহলে এটা কেন আনুষ্ঠানিক ম্যাচ হবে না? আর কেনই–বা মেসির গোল আনুষ্ঠানিক গোল হিসেবে গণ্য হবে না? তবে সমস্যাটা আর্জেন্টিনা দল নিয়ে নয়। সমস্যাটা মূলত প্রতিপক্ষ এবং ফিফার নিয়মসংক্রান্ত। এখন শেষ পর্যন্ত নিয়মের ফাঁদে মেসির গোল আটকে যাবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
ফিফার নিয়মে মূলত দুই ধরনের অফিশিয়াল ম্যাচ আছে। একধরনের ম্যাচ হচ্ছে বিশ্বকাপ, বাছাইপর্ব, কনফেডারেশনস খেলাগুলো। আর অন্য ম্যাচগুলো মূলত ফিফার প্রীতি ম্যাচ। ‘এ’ ক্যাটাগরির ম্যাচ নিয়ে ফিফার নিয়মে বলা হচ্ছে, ‘সদস্যদেশগুলোর দুটি প্রথম সারির দলের মধ্যকার খেলা।’
ফিফার নিয়মে আরও বলা হচ্ছে, শীর্ষ স্তরের আন্তর্জাতিক ম্যাচ বলতে বোঝায় সেই ম্যাচগুলো, যেখানে দুটি সদস্যদেশের অংশগ্রহণকারী দলগুলো হবে ‘এ’ দল (জাতীয় দল)। কিংবা যাদের মধ্যে অন্তত একটি দল হবে সম্মিলিত দল। আরেকটি নিয়ম হচ্ছে, ফিফা, কনফেডারেশনস এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সংগঠন শীর্ষ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোকে অনুমোদন দেবে। এসবের ভিত্তিতে বলা যায়, আর্জেন্টিনা-পানামা এবং আর্জেন্টিনা-কুরাকোর মধ্যকার ম্যাচ দুটি শীর্ষ স্তরের আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
কিন্তু প্রতিপক্ষ যদি যুব দল হয় কিংবা ক্লাবের দল হয়, তবে ম্যাচটি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সারিতে নেমে যাবে। এ ছাড়া কাগজপত্র, অনুমোদন এবং ফিফাকে দেওয়া ফির বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পায়, সেটি হচ্ছে কতজন খেলোয়াড় বদল করা হচ্ছে সেটি। নিয়ম মেনে এই দুটি ম্যাচেও ছয় খেলোয়াড় বদলি খেলানোর কথা বলা হয়েছে।
ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যাবে, আর্জেন্টিনা এখন ১ হাজার ২৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। আর এমন ৩০০টি ম্যাচ খেলেছে, যা শীর্ষ স্তরের ম্যাচের মর্যাদা পায়নি। সর্বশেষ এমন ম্যাচ তারা খেলেছে ২০০৪ সালে বার্সেলোনার বিপক্ষে। লিওনেল মেসির অভিষেকের আগে সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-০ গোলে।
মার্সেলো বিয়েলসা যুগে আর্জেন্টিনা তিনটি ‘বি’ ক্যাটাগরির ম্যাচ খেলেছে। এসপানিওলের বিপক্ষে তাদের শততম বর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে, ২০০১ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার বিদায় উপলক্ষে এস্ত্রেলাসের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ এবং অন্যটি ২০০২ বিশ্বকাপের আগে জাপানি ক্লাব কাশিমা অ্যান্টেলার্সের বিপক্ষে ম্যাচ।
ডিয়েগো ম্যারাডোনা জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৮৭ ম্যাচ। তবে লম্বা সময় পর্যন্ত তাঁর ম্যাচ ধরা হতো ৯১টি। তবে একুশ শতকের শুরুর দিকে এক পর্যালোচনায় তাঁর চারটি ম্যাচ বাতিল করা হয়। যার দুটিতে আবার ম্যারাডোনা গোলও করেছিলেন।
একুশ শতকের পর থেকে কোনো ম্যাচ ফিফার স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য কি না, তা জানার আরও বেশ কিছু উপায় সামনে এসেছে। এরপরও অবশ্য বেশ কিছু কারণে সন্দেহ তৈরি হতে পারে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার ম্যাচ দুটি নিয়ে এটুকু বলা যায় যে ম্যাচগুলোর প্রথম স্তরের মর্যাদা পাওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যে কারণে মেসি যদি গোল করেন, সেটি যে ৮০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করবে, তা নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই।