আলভেজ, রবিনিও, রোনালদিনিও, আদ্রিয়ানো...ব্রাজিল তারকাদের যত বিতর্ক
নান্দনিকতার কারণে ব্রাজিলের ফুটবলের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। পেলে, গারিঞ্চা, সক্রেটিস কিংবা রোনালদো নাজারিওরা ফুটবলের সার্বিক মানকে অনেক ওপরে নিয়ে গেছেন। কিন্তু ইতিবাচক ফুটবলের পাশাপাশি নেতিবাচক কাণ্ডেও বিভিন্ন সময় মুখ গোমড়া হয়েছে ব্রাজিল সমর্থকদের।
সাম্প্রতিক সময়ে যেমন ধর্ষণের মতো হীন অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পেয়েছেন দানি আলভেজ ও রবিনিওর মতো তারকা ফুটবলার। শুধু এ দুজনই নয়, এর আগে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন রোনালদিনিও কিংবা আদ্রিয়ানোর মতো ফুটবলাররা। তেমন কিছু ঘটনা নিয়ে এ প্রতিবেদন।
দানি আলভেজ
২০২৩ সালের শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে দানি আলভেজ। অভিযোগ ওঠে, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল এ ফুটবলার নাইট ক্লাবে এক নারীকে ধর্ষণ করেছেন। এ ঘটনায় দ্রুত তাঁকে গ্রেপ্তার করে বার্সেলোনার পুলিশ। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে তদন্তপ্রক্রিয়া।
এরপর গত মাসে হওয়া তিন দিনের বিচারিক কার্যক্রম শেষে আলভেজকে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেন স্পেনের আদালত। পাশাপাশি তাঁকে দেড় লাখ ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে। এর মধ্যে স্ত্রী হোয়ানা সাঞ্জ আলভেজের সঙ্গে বিচ্ছদের ঘোষণাও দিয়েছেন। এখন অবশ্য জামিনে মুক্ত হওয়ার পথে আছেন আলভেজ। তবে ব্রাজিল এবং বার্সেলোনার ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের ধর্ষণ–কাণ্ড কলঙ্কিত করেছে ফুটবলকেও।
রবিনিও
ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে ব্রাজিলের ফুটবলে কালিমা লেপেছেন সাবেক ফরোয়ার্ড রবিনিও। ব্রাজিলের সাবেক এই ফুটবলারকে ধর্ষণের দায়ে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ইতালির আদালত। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ার আদালত সেই সাজা কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারও করেছে। ২০১৩ সালে ইতালির মিলানে এক আলবেনিয়ান নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেন রবিনিও। রায়ের আগে রবিনিও ইতালি ছেড়ে যাওয়ায় দেশটির আদালত ব্রাজিল সরকারকে শাস্তি কার্যকরের আহ্বান জানান।
আন্তনি
সম্প্রতি লিভারপুলের বিপক্ষে এফএ কাপের নাটকীয় কোয়ার্টার ফাইনালে গোল করে আলোচনায় এসেছেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার আন্তনি। তবে এর আগে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে শঙ্কায় পড়েছিল তাঁর ক্যারিয়ার। গত সেপ্টেম্বরে আন্তনির বিরুদ্ধে সাবেক প্রেমিকা গ্যাব্রিয়েলা কাভালিনকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে ব্রাজিলের স্কোয়াড থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।
একই সময়ে তাঁকে ক্লাব থেকেও ছুটি দেওয়া হয়। পরে অবশ্য ইউনাইটেডের স্কোয়াডে ফেরানো হয়। সে সময়ই ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তনিকে দলে ফেরানোর আগে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আজ রাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। তবে আন্তনিকে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলের স্কোয়াডে ফেরানো হয়নি।
রোনালদিনিও
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার রোনালদিনিও। ২০০২ সালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়কও ছিলেন রোনালদিনিও। তবে ফুটবলের এই মহাতারকা জেল খেটেছেন পাসপোর্ট জালিয়াতি করে। ২০২২ সালে প্যারাগুয়েতে একটি প্রচারণা কাজে গিয়ে দেশটির পুলিশের হাতে ভাই রবের্তোসহ গ্রেপ্তার হন সাবেক এই বার্সেলোনা তারকা।
তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা উভয়ই জাল পাসপোর্ট বহন করছেন। শুরুতে বড় কোনো বিপদের আশঙ্কা না করলেও পরে এ মামলায় ৩২ দিন জেলে কাটাতে হয় রোনালদিনিওকে। এরপর একটি হোটেল কক্ষে বন্দী রাখা হয় তাঁকে। পরে অবশ্য ছাড়া পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন ব্যালন ডি’অর জয়ী এ ফুটবলার।
আদ্রিয়ানো
ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড আদ্রিয়ানোকে বিবেচনা করা হতো নিজের সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান তারকা হিসেবে। মাঠে নিজের প্রতিভার পরিচয় ঠিকঠাক রাখতে না পারলেও, অপরাধ–কাণ্ডে ঠিকই আলোচনায় আসেন। ব্রাজিলের হয়ে ৪৮ ম্যাচ খেলা আদ্রিয়ানোর বিরুদ্ধে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সময়েই মাদক পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
২০১০ সালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা দাবি করেন, আদ্রিয়ানো একটি মোটরবাইক কেনেন এবং সেটি পরিচিত এক মাদক চোরাকারবারিকে দেন। অপরাধীরা সেই বাইক মাদক চোরাচালানের উদ্দেশ্যে ব্যবহারও করে বলে জানান আইনজীবীরা। অবশেষে ২০১৪ সালে এ মামলা থেকে মুক্তি পান আদ্রিয়ানো।
হাল্ক
অপরাধ করে নয়, সাবেক ব্রাজিল স্ট্রাইকার হাল্ক বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ভিন্ন কারণে। তিনি আলোচনায় আসেন মূলত সাবেক স্ত্রীর ভাতিজিকে বিয়ে করে। ইরান অ্যাঞ্জেলো নামের এক নারীর সঙ্গে ১২ বছর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন হাল্ক। তাঁদের দুই পুত্র এবং একটি কন্যাসন্তানও আছে।
২০১৯ সালে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ৫ মাস পরে ইরানের ভাতিজি কামিলাকে বিয়ে করার ঘোষণা দেন হাল্ক। এ ঘটনায় কোনো আইনি জটিলতায় পড়তে না হলেও নৈতিক জায়গা থেকে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয় হাল্ককে।