নিজেদের দেশে টুর্নামেন্ট। দেশটির বেশির ভাগ তারকা ফুটবলার খেলেন ইউরোপের ক্লাবে। কয়েকজন খেলেন সৌদি প্রো লিগে, তাঁদের মধ্যে একজন আবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর আল নাসর সতীর্থ।
এমন একটি দলের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই গগনচুম্বী হওয়ার কথা। অথচ আইভরিকোস্ট কিনা আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কায় পড়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শঙ্কা উড়িয়ে নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে স্বাগতিকেরা। যদিও সেটা যতটা না নিজেদের পারফরম্যান্সে, তার চেয়ে বেশি মরক্কোর বদান্যতায়।
১৩ জানুয়ারি শুরু হওয়া আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের উদ্বোধনী ম্যাচে শুভ সূচনা করেছিল আইভরিকোস্ট। ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে ফ্রাঙ্ক কেসি, সেবাস্তিয়ান হলাররা গিনি বিসাউকে হারিয়ে দেন ২–০ ব্যবধানে।
এরপরই ছন্দপতন। গ্রুপের অন্য দুই প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়া ও ইকুয়াটোরিয়াল গিনির কাছে হেরে যায় আইভরিকোস্ট, যা ৪০ বছর পর টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে কোনো স্বাগতিক দলের টানা দুই হারের বিব্রতকর রেকর্ড।
আসরের অন্যতম ফেবারিট নাইজেরিয়ার কাছে ১–০ ব্যবধানে হার সহজে হজম করতে পেরেছে আইভরিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (এফআইএফ)। কিন্তু ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের চেয়ে ৩৯ ধাপ পিছিয়ে থাকা ইকুয়াটোরিয়াল গিনির কাছে ৪–০ ব্যবধানে অসহায় আত্মসমর্পণ দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের অহমে স্বাভাবিকভাবেই বড় আঘাত দিয়েছে।
ফেডারেশন হয়তো ধরেই নিয়েছিল, টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়তে যাচ্ছে আইভরিকোস্ট। এ কারণে গতকাল দলটির ফরাসি কোচ জঁ লুই গ্যাসেকে সকালে বরখাস্ত করা হয়।
তবে রাতে জাম্বিয়ার বিপক্ষে মরক্কোর ১–০ ব্যবধানে জয়ের মধ্য দিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ হওয়ার পর সুখবর পায় আইভরিকোস্ট। আফ্রিকান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (সিএএফ) আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ‘এ’ গ্রুপ থেকে তৃতীয় হয়ে নকআউট পর্বে জায়গা করে নিয়েছে আইভরিকোস্ট। আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে ৬ গ্রুপের শীর্ষ দুই দলের সঙ্গে তৃতীয় হওয়া চারটি দল শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেয়।
‘এ’ গ্রুপ থেকে তৃতীয় হয়ে আইভরিকোস্টকে নকআউট পর্বে খেলতে হলে ‘এফ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে জাম্বিয়ার বিপক্ষে মরক্কোকে জিততেই হতো। শেষ পর্যন্ত আইভরিয়ানদের কামনা পূরণ হয়েছে। ৩৭ মিনিটে চেলসি তারকা হাকিম জিয়েশের গোলে জিতেছে মরক্কো আর উচ্ছ্বাসে ভেসেছে আইভরিকোস্ট।
আগামী সোমবার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আইভরিকোস্টের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সাদিও মানের সেনেগাল।
মরক্কোর সহায়তায় নকআউট পর্বে উঠলেও ব্যাপারটি আইভরিকোস্টের জন্য হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মতো। বিষয়টি অস্বীকার করেননি জঁ লুই গ্যাসের জায়গায় অন্তর্বর্তীকালীন কোচের দায়িত্ব পাওয়া এমার্স ফায়ে।
আইভরিয়ান কিংবদন্তি দিদিয়ের দ্রগবার একসময়ের সতীর্থ ফায়ে টিভি চ্যানেল কানাল প্লাসকে বলেছেন, ‘সোমবার থেকে (ইকুয়াটোরিয়াল গিনির কাছে হারের পর) আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের দম বন্ধ হয়ে এসেছিল। তবে এখন আমরা সন্তুষ্ট।’
ফায়ে আরও বলেছেন, ‘নিজেদের ম্যাচের ফল নিয়ে আমরা হতাশ ছিলাম। আমরা সম্ভবত শেষ ষোলোয় উঠতে পারব না, এই ভয়েও ছিলাম। এটা (শেষ পর্যন্ত নকআউট পর্বে উঠতে পারা) স্বস্তিদায়ক ব্যাপার। এটা আমাদের কাঁধ থেকে বোঝা নামিয়েছে। এখন সেনেগালের বিপক্ষে ম্যাচের দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।’
স্বাগতিক আইভরিকোস্টের হাঁপ ছেড়ে বাঁচার দিনে ইতিহাস গড়েছে নামিবিয়া। মালির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ‘ই’ গ্রুপ থেকে তৃতীয় হয়ে প্রথমবারের মতো আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের নকআউট পর্বে উঠেছে তারা।