এমবাপ্পেকে কড়া জবাব দেওয়া মেসি ক্যারিয়ার শেষ করতে চান মায়ামিতেই
দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল নিয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের বিতর্কিত মন্তব্য নতুন কিছু নয়। রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া ফ্রান্সের এই ফরোয়ার্ড ২০২২ সালের মে মাসে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকায় ফুটবলের মানে ইউরোপের মতো উন্নত নয়। তাই আপনি যদি গত কয়েকটি বিশ্বকাপের দিকে তাকান, দেখবেন ইউরোপীয়রাই জিতেছে।’
এমবাপ্পের কথাটি নিশ্চয় গায়ে লেগেছিল দক্ষিণ আমেরিকানদের, বিশেষ করে আর্জেন্টাইনদের। আরও স্পষ্ট করে বললে লিওনেল মেসির। ওই বছরই কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে এমবাপ্পের ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয় মেসির আর্জেন্টিনা, দলটি ৩৬ বছর পর পায় গৌরবময় সোনালি ট্রফির ছোঁয়া।
এবার আরেকটি উয়েফা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ও কোপা আমেরিকা যখন সামনে, তখন আরেকটি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন এমবাপ্পে। সম্প্রতি তিনি সিএনএনকে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে ইউরো জেতা কঠিন।’
এমবাপ্পে ফ্রান্সের হয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ জিতলেও এখনো ইউরো জিততে পারেননি। শুধু তিনি কেন, ফ্রান্সের বর্তমান প্রজন্মের কারও ইউরো জয়ের অভিজ্ঞতা নেই। দলটি সর্বশেষ মহাদেশীয় শিরোপা জিতেছিল ২০০০ সালে।
নিজে যা পারেননি, তা কঠিন লাগারই কথা। এমবাপ্পেরও হয়তো সেটাই মনে হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে বিশ্বকাপ টেনে আনাতেই এমবাপ্পেকে কড়া জবাব দিয়েছেন মেসি।
দুই মৌসুম পিএসজিতে এমবাপ্পের সঙ্গে খেলা আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ইউরো অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট। কিন্তু সেখানে তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে, পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে ও দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে বাদ দিয়ে খেলা হয়। এতগুলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে বাদ দিয়ে খেলার পরেও আপনি বলছেন ইউরো সবচেয়ে কঠিন, তাই না? বিশ্বকাপে সেরা দলগুলোই খেলে। সাধারণত সব বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরাই সেখানে থাকে। এ কারণেই সবাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চায়।’
২০২২ সালে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলকে ‘খাটো’ করে এমবাপ্পে যে কথা বলেছিলেন, সেটাও ভোলেননি মেসি, ‘সে এর আগে এটাও বলেছিল দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো ইউরোপের মতো উচ্চমানের ফুটবল খেলতে পারে না। তাই মানুষ শুধু তাদেরকেই (ইউরোপীয়দের) মূল্য দেয়।’
ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্লাব ক্যারিয়ার নিয়েও কথা বলেছেন মেসি। এ মাসেই ৩৭ বছর পূর্ণ করতে চলা আর্জেন্টাইন মহাতারকা জানিয়েছেন, বর্তমান ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে ক্লাব ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান। তবে খুব শিগরগিরই নয়। মেসির ভাষায়, ‘এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে এটিই (ইন্টার মায়ামি) আমার শেষ ক্লাব হতে চলেছে। তবে আমি দ্রুতই ফুটবল ছাড়ছি না।’
ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের পাট চুকিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে মার্কিন মুলুকে পা রাখেন মেসি। যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার ডেভিড বেকহামের মালিকানাধীন ক্লাবটির সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি আছে তাঁর।
তিনি মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল–বাণিজ্যে যেমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, ক্লাবও প্রথমবার পেয়েছে বড় কোনো সাফল্য। মায়ামিতে যোগ দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দলকে লিগস কাপ শিরোপা জেতাতে বড় অবদান রেখেছেন মেসি।
ইউরোপ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ঠিকানা গড়া প্রসঙ্গে মেসি বলেছেন, ‘ইউরোপ ছেড়ে এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) আসার পদক্ষেপ নেওয়াটা কঠিন ছিল। তবে বিশ্বকাপ জিতে নেওয়ায় বিষয়টি আমাকে ভিন্নভাবে দেখতে অনেক সাহায্য করেছে।’
২০ জুন শুরু হতে চলা কোপা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেই হবে। ওই দিন উদ্বোধনী ম্যাচেই কানাডার বিপক্ষে খেলবে মেসির আর্জেন্টিনা। ২০২৬ বিশ্বকাপেরও সহ–আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। আগামী বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে এর আগে বহুবার প্রশ্নে করা হয়েছিল মেসিকে। কখনো ‘না খেলার সম্ভাবনা বেশি’, আবার কখনো ‘ফিটনেস ঠিক থাকলে দেখা যাক কী হয়’ জাতীয় উত্তর দিয়েছিলেন।
তবে ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরাসরি কিছু না বললেও যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের আনন্দিতই হওয়ার কথা, ‘আমি সারা জীবন এই কাজ করতে চেয়েছি (আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে চেয়েছি)। এখনো ফুটবল খেলতে ভালোবাসি, অনুশীলন উপভোগ করি। যখন খেলব না, তখন তো মিস করবই। আমি অনেক ভাগ্যবান যে আমার পাশে ভালো সতীর্থ ও বন্ধুদের পেয়েছি। তবে একটু ভয় কাজ করে যে একদিন সবকিছু শেষ হয়ে যাবে (অবসর নিতে হবে)।’