ম্যাচ শেষে অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলেন ভারতের গোলরক্ষক খুশি কুমারী। ভারতের কোচ প্রিয়া ভালাপ্পির সান্ত্বনাও কোনো কাজে আসছিল না। উল্টো দৃশ্য দেখা গেল বাংলাদেশের ডাগআউটে। বাংলাদেশের গোলরক্ষক সংগীতা রানী দাসের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন কোচ গোলাম রব্বানী। খুশিতে নিজের পকেট থেকে টাকাও বের করে দিলেন সংগীতার হাতে।
মেয়েদের সাফের অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যদিও ঘাম ঝরিয়েই জিততে হয়েছে রুমা আক্তার, জয়নব বিবিদের। কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। অবশ্য বাংলাদেশের কেউ গোল করেনি। ভারতীয় ডিফেন্ডার আখিলা রাজনের আত্মঘাতী গোলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
কৃষ্ণা রানী সরকার, সিরাত জাহান বা সাবিনা খাতুন—জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকারদের পর শামসুন্নাহার জুনিয়র, শাহেদা আক্তাররাও আন্তর্জাতিক ফুটবলে আলো ছড়াচ্ছিলেন গোল করে। কিন্তু এর পরের প্রজন্ম থেকে আবার গোলের দেখা নেই!
প্রতিপক্ষ ভুটানের মতো দুর্বল হলেই শুধু গোল উৎসবে মেতে ওঠে এই মেয়েরা। গত নভেম্বরে যেমন তিন দলের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে ১৮ গোলের ১৭টিই দিয়েছিল ভুটানের বিপক্ষে। সেই মেয়েরাই এবার সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেছে। কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে যখন গোলের প্রয়োজন, সেই মুহূর্তে ঠিকমতো জ্বলে উঠতে পারছে না।
এবারের টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ৮-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু রাশিয়ার কাছে হারে ৩-০ গোলে। ভারতের বিপক্ষে যেন গোল মিসের মহড়ায় নেমেছিল মোসাম্মত সাগরিকা, সুরভী আকন্দরা।
রাশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ থেকে আজ চারজন ফুটবলারকে বাদ দিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী। কানন বাহাদুর, রিতু আক্তার, থুইনু মারমা ও তৃষ্ণা রানীর বদলে একাদশে ঢোকেন পূজা দাস, মোসাম্মত সাগরিকা, নাদিয়া আক্তার ও সুলতানা আক্তার।
একাদশে বদল এনেও কোচের পরিকল্পনামতো খেলতে পারছে না মেয়েরা। বিশেষ করে মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণই নেই ফুটবলারদের। বক্সে বল জোগান দেওয়ার ফুটবলারেরও যেন অভাব! আর অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে বল নষ্ট করা তো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
অথচ ম্যাচের ৫ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে পূজা দাসের চমৎকার আক্রমণ নষ্ট হয় দুর্বল ফিনিশিংয়ের কারণে। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা পূজা দাসের ক্রসে সুরভী আকন্দ পা ছোঁয়াতেই পারলেন না। পাশে থাকা সুলতানা আক্তারও বল পাঠালেন বাইরে!
প্রথমার্ধে অবশ্য বলার মতো আর কোনো আক্রমণই ছিল না বাংলাদেশের। দ্বিতীয়ার্ধে সুলতানা আক্তারের বদলে কোচ গোলাম রব্বানী মাঠে নামান তৃষ্ণা রানীকে। ৬৮ মিনিটে সাগরিকার বদলে নামেন থুইনু মারমা। এরপর অবশ্য বাংলাদেশের আক্রমণের ধার বেড়েছে।
ম্যাচের ৭৪ মিনিটে গোলের মুখে দেখেছে বাংলাদেশ। প্রথমে নাদিয়া আক্তার থ্রো ইনে পূজার কাছ থেকে বল রিসিভ করে। এরপর সেই বলেই দুর্দান্ত এক ক্রস করেছে বাঁ প্রান্ত দিয়ে। ভারতের ডিফেন্ডার আখিলা রাজন হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল ঢুকিয়ে দেন নিজেদের জালে। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে শিবানী রানী বাংলাদেশের রক্ষণ ভেঙে বক্সে ঢোকেন। কিন্তু গোলরক্ষক সংগীতা রানী দাস অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন দলকে।
৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ হারে ৬ পয়েন্ট বাংলাদেশের। আর ২ ম্যাচে ২ জয়ে রাশিয়ার পয়েন্ট ৬। ভারতও খেলেছে দুটি করে ম্যাচ। নেপালের বিপক্ষে জিতলেও বাংলাদেশের কাছে হেরে ৩ পয়েন্ট ভারতের। আগামী ২৮ মার্চ বাংলাদেশের শেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ নেপাল।