১২৬ কোটির সঙ্গে ৬ কোটির লড়াই ও ‘ম্যারাডোনা ডার্বি’

চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় মুখোমুখি হবে ম্যান সিটি–কোপেনহেগেনএএফপি

সাধারণ চোখে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ড্রটা সাদামাটাই মনে হতে পারে। পরাশক্তিদের বড় কোনো দ্বৈরথ ছাড়াই মাঠে গড়াবে নকআউটের প্রথম ধাপের লড়াই। যেটুকু উত্তেজনা, তা শুধু বার্সেলোনা ও নাপোলি ম্যাচকে ঘিরে। তবে নাপোলি ইতালির চ্যাম্পিয়ন হলেও গত মৌসুমের ধার এবার অনেকটাই অনুপস্থিত।

এরপরও প্রতিযোগিতাটির নাম চ্যাম্পিয়নস লিগ বলে কথা! চমক ও অনিশ্চয়তা নিয়ে হাজির থাকাই তার ধর্ম। নয়তো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে তলানিতে রেখে কোপেনহেগেন নিশ্চয় শেষ ষোলোয় যেতে পারত না! পরবর্তী রাউন্ডগুলোতেও তাই এমন চমকের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন

১২৬ কোটি ইউরো বনাম ৬ কোটি ৬০ লাখ ইউরো

ওপরের পরিসংখ্যানটি দুটি দলের স্কোয়াডের মূল্য। একটি দলের নাম ম্যানচেস্টার সিটি, অন্যটি এফসি কোপেনহেগেন। নাম শোনার পর কোন স্কোয়াডের মূল্য ১২৬ কোটি আর কোনটির ৬ কোটি ৬০ লাখ তা বোধ হয় আলাদা করে না বললেও চলে। সিটির স্কোয়াডের মূল্য কোপেনহেগেনের চেয়ে ১২০ কোটি বেশি। সিটির স্কোয়াডে এ মুহূর্তে ৯ জন খেলোয়াড় আছেন, যাঁদের বর্তমান মূল্য কোপেনহেগেনের পুরো স্কোয়াডের চেয়ে বেশি। এমনকি এক আর্লিং হলান্ডের বর্তমান বাজারদর কোপেনহেগেনের প্রায় তিন গুণ বেশি।

অর্থের পার্থক্য দিয়েই মূলত দুই দলের শক্তির পার্থক্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। পাশাপাশি আরও কিছু পার্থক্যের কথা আনা যায়। সিটি চ্যাম্পিয়নস লিগে এই মৌসুমে যেসব প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়েছে, তাদের চেয়ে ১০০ শট বেশি নিয়েছে। এই পার্থক্য এবারে আসরে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে যারা এবার শেষ ষোলোয় গেছে, তাদের মধ্যে শটের এই পার্থক্য সবচেয়ে খারাপ কোপেনহেগেনের (-১৫)। চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বশেষ ছয় আসরের প্রতিবারই শেষ ষোলোর বাধা পেরিয়েছে সিটি। তবে এরপরও পরিসংখ্যানই শেষ কথা নয়। ম্যানচেস্টারেরই এক পরাশক্তিকে পেছনে ফেলেই শেষ ষোলোয় এসেছে কোপেনহেগেন। এ ছাড়া ২০২২–২৩ মৌসুমে ঘরের মাঠে সিটিকে রুখেও দিয়েছিল কোপেনহেগেন। তাই সিটিরও সুযোগ নেই নির্ভার হয়ে থাকার।

প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা ম্যানচেস্টার সিটি
এএফপি

‘ম্যারাডোনা ডার্বি’

বার্সেলোনা ও নাপোলি কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার দুই পুরোনো ক্লাব। বার্সায় ম্যারাডোনা খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও নাপোলিকে নিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন ‘নেপলসের রাজা’খ্যাত ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার স্মৃতিবিজড়িত নাপোলি গত মৌসুমে ইতালিয়ান লিগ সিরি আ’র চ্যাম্পিয়ন দল। বার্সেলোনাও একই মৌসুমে জিতেছিল লা লিগার শিরোপা। কোচ লুসিয়ানো স্পালেত্তির বিদায়ের পর নাপোলি অবশ্য ধার হারিয়েছে। এরপরও যেকোনো ইউরোপিয়ান পরাশক্তিকে কাঁপিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য তাদের আছে। এই দলে আছেন ভিক্টর ওসিমেন ও খিচা কাভারস্কেইয়ার মতো তারকারা।

আরও পড়ুন

তাই হালকাভাবে নিলেই বড় বিপদে পড়তে হতে পারে গত আগের দুই মৌসুমে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া বার্সেলোনার। এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমেও শেষ ষোলোয় মুখোমুখি হয়েছিল এ দুই দল। নাপোলির মাঠে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর বার্সা নিজেদের মাঠে জিতেছিল ৩-১ গোলে। এরপরও নাপোলিকে নিয়ে সতর্ক থাকা কথা বলেছেন বার্সার স্পোর্টিং ডিরেক্টর ডেকো, ‘তারাও (নাপোলি) আমাদের মতো খেলতে এসেছে। আমার বিশ্বাস, আমাদের দুটি কঠিন ম্যাচ খেলতে হবে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ভাগ্যের কোনো জায়গা নেই। আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন নাপোলিকে নিয়ে কথা বলছি। তাদের মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ও অনেক। ফুটবলে ভাগ্য নিয়ে কথা বলার কোনো মানে নেই।’

দারুণ ছন্দে আছে আর্সেনাল
রয়টার্স

আর্সেনালের সামনে সেই পোর্তো

চ্যাম্পিয়নস লিগের চতুর্থবারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্সেনাল-পোর্তো। সর্বশেষ ২০০৯-১০ সালে এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল শেষ ষোলোয়। যেখানে পোর্তোর মাঠে ২-১ গোলে হারলেও নিজেদের মাঠে ‘গানার’রা জিতেছিল ৫-০ ব্যবধানে। ২০০৮-০৯ সালে একই গ্রুপে পড়েছিল দুই দল। সেবার ঘরের মাঠে ৪-০ গোলে জয়ের পর পোর্তোর মাঠে আর্সেনাল হেরেছিল ২-০ গোলে।

আর ২০০৬-০৭ সালে মুখোমুখি হয়ে হোম ম্যাচে আর্সেনাল পায় ২-০ গোলের জয়। তবে পোর্তোর মাঠে গিয়ে সেবার গোলশূন্য ড্র নিয়ে ফেরে আর্সেনাল। সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে তিনটিতে জিতেছে আর্সেনাল, দুটিতে জিতেছে পোর্তো এবং অন্যটি ড্র হয়েছে। তবে আর্সেনাল নিজেদের মাঠে দাপট দেখালেও পোর্তোর মাঠে গিয়ে কখনো জিতে ফিরতে পারেনি দলটি। এখন অপেক্ষা সেই বাধা পেরোনোর।

আরও পড়ুন

রিয়ালের সহজ চ্যালেঞ্জ

আরবি লাইপজিগকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে রিয়াল মাদ্রিদ কি এখন কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে ভাবছে? এমন কিছু এখন কেউ চাইলে ভাবতেই পারে। প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফলতম দল রিয়াল। চ্যাম্পিয়নস লিগ কীভাবে জিততে হয়, তা তাদের চেয়ে ভালো আর কে জানে! তুলনায় লাইপজিগের তেমন কোনো সাফল্যই নেই। তবে মাঠের খেলায় পরিসংখ্যান আর কতটুকুই বা কাজে লাগে!

আর পরিসংখ্যানের উদাহরণ তো চাইলে লাইপজিগও দিতে পারে। চ্যাম্পিয়নস লিগে দুবার রিয়ালের মুখোমুখি হয়ে একবার হারলেও অন্যবার জিতেছে তারা। গত মৌসুমেই দুই দল খেলেছিল একই গ্রুপে। মাদ্রিদের মাঠে ২-০ গোলে হারের পর নিজেদের মাঠে লাইপজিগ জিতেছিল ৩-২ গোলে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে নকআউটের লড়াইয়ে রিয়ালকে হারাতে হলে অবিশ্বাস্যই কিছু করে দেখাতে হবে লাইপজিগকে।

সংগ্রাম করে শেষ ষোলোয় এমবাপ্পের পিএসজি
টুইটার

গেরো খুলবে পিএসজির?

গত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতার চেষ্টা করে যাচ্ছে পিএসজি। কিন্তু ২০১৯-২০ মৌসুমে ফাইনালে খেলা ছাড়া দলটির আর কোনো প্রাপ্তি নেই। সর্বশেষ দুই আসরে তো শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছে তারা। গত মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে এবং তার আগের মৌসুমে রিয়ালের কাছে হেরে বিদায়ঘণ্টা বাজে দলটির।

এবার অবশ্য গ্রুপ পর্বেই থামতে পারত পিএসজির দৌড়। শেষ দিন রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর এসি মিলান ও নিউক্যাসলকে বিদায় করে নকআউটের টিকিট পায় পিএসজি। শেষ ষোলোয় অবশ্য অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষই পেয়েছে কিলিয়ান এমবাপ্পের দল। রিয়াল সোসিয়েদাদকে হারিয়ে এখন পিএসজি শেষ ষোলোর টিকিট পায় কি না, সেটিই দেখার অপেক্ষা।