সব সাংবাদিক কি ফুটবল বোঝে—ব্যালন ডি’অরের ভোট নিয়ে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি
রদ্রি কেন, কেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র নয়—গত ২৮ অক্টোবর ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ঘোষণার পর এমন প্রশ্ন বেশ জোরেশোরেই তুলেছেন অনেকে, বিশেষ করে রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ফুটবল অঙ্গনে যা ঢেউ তুলেছে।
রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ভিনিসিয়ুস কীভাবে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ ও স্পেনের হয়ে ইউরো জেতা রদ্রির কাছে হেরে গেছেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তাদের।
ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেয় ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’। সহ–আয়োজক হিসেবে থাকে ইউরোপীয় ফুটবলের কর্তৃপক্ষ উয়েফা। তবে বিজয়ী নির্ধারণ এ দুটি প্রতিষ্ঠান করে না। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ৩০ জন খেলোয়াড়ের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে দেওয়ার পর সেখান থেকে চূড়ান্ত ভোট দেন সাংবাদিকেরা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০০–তে থাকা দেশগুলোর একজন করে সাংবাদিক নিজের বিবেচনায় বছরের সেরা খেলোয়াড়কে ভোট দেন।
আর এই সাংবাদিকদের ফুটবল–জ্ঞান নিয়ে সন্দিহান ব্রাজিল কিংবদন্তি রিভালদো। ১৯৯৯ সালে ব্যালন ডি’অর আর ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতা এই ফরোয়ার্ড প্রশ্ন তুলেছেন, ব্যালন ডি’অরে ভোট দেওয়া সব সাংবাদিক ফুটবল বোঝেন কি না।
ব্যালন ডি’অরে সাংবাদিকেরা ভোট দেন মূলত দশজনকে। তাঁরা নিজেদের বিবেচনায় সেরা ১০ খেলোয়াড়ের তালিকা করেন। এর মধ্যে এক নম্বরে থাকা খেলোয়াড় পান সর্বোচ্চ ১৫ পয়েন্ট, দ্বিতীয়জন ১২ ও তৃতীয়জন ১০। এবার ভোট দিয়েছেন মোট ৯৯টি দেশের সাংবাদিক (সিরিয়া অনুপস্থিত)। এর মধ্যে রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিয়ুস পেয়েছেন ১১২৯ পয়েন্ট। স্পেন ও ম্যানচেস্টার সিটির ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রি পেয়েছেন ১১৭০ পয়েন্ট।
আজ ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘লেকিপ’ জানিয়েছে, ভোটদাতা ৯৯ জনের মধ্যে ৪৯ জন সাংবাদিক এক নম্বরে রেখেছেন রদ্রিকে। ভিনিকে শীর্ষে রেখেছেন ৩৫ জন। অর্থাৎ ভিনির চেয়ে রদ্রি সেরা—এমনটা মনে করা সাংবাদিকের সংখ্যা ১৪ জন বেশি। রিভালদো বেটফেয়ারের সঙ্গে আলোচনায় ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের ফুটবল–জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যেসব সাংবাদিক ভোট দিয়েছেন, তাঁদের সবাই কি ফুটবল বোঝেন? সবাই কি সত্যিই যোগ্যতাসম্পন্ন?’
রিভালদো অবশ্য রদ্রির পুরস্কার প্রাপ্তিকেও খাটো করে দেখছেন না, ‘রদ্রিকে আমি ছোট করতে পারি না। সে আমার পছন্দের খেলোয়াড়। দ্বিতীয় পছন্দ ছিল সে। হ্যাঁ, ভিনিসিয়ুসের পুরস্কারটি বেশি প্রাপ্য হলেও এই পুরস্কারের মানকে আমি ছোট করতে পারি না। কারণ, আমি সত্যিই রদ্রিকে পছন্দ করি। তার স্টাইল ও খেলার ধরন পছন্দের।’
২৪ বছর বয়সী ভিনিসিয়ুসের হাতে ব্যালন ডি’অর জেতার জন্য যথেষ্ট সময় আছে বলে মনে করেন রিভালদো, ‘ভিনিসিয়ুস তরুণ। সব পাল্টে দেওয়ার মতো বয়স ও খেলা তার আছে। একদিন সে ব্যালন ডি’অর জিতবে। সে এক বা একাধিকবার বিশ্বসেরা হতে পারে।’
এবারের ব্যালন ডি’অর পুরস্কার অনুষ্ঠানের আগে–পরে টানা দুটি ম্যাচ হেরেছে ভিনিসিয়ুসদের দল। প্রথমে এল ক্লাসিকোয় বার্সেলোনার কাছে ৪–০ গোলে, এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগে এসি মিলানের কাছে ৩–১ গোলে। দুটিই নিজেদের মাটিতে। এই ম্যাচ দুটিতে ভিনিসিয়ুসও নিজের চেনা ছন্দে ছিলেন না, যে একটি গোল করেছেন, সেটি পেনাল্টি থেকে। রিভালদোর মতে, ভিনির এখন খেলায় মনোযোগ দেওয়া উচিত, ‘ভিনিসিয়ুসকে এই ব্যালন ডি’অরের গল্প মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। তাকে খেলা শুরু করতে হবে এবং রিয়ালের হয়ে ভালো খেলতে হবে, টানা দুটি হারের পর যাদের জয় দরকার।’
লা লিগায় আজ ওসাসুনার মুখোমুখি হবে রিয়াল। ১১ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের দুইয়ে কার্লো আনচেলত্তির দল। ১২ ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা।