২৪–এর ফুটবলে যে ৪ রোমাঞ্চের অপেক্ষা
ফুটবলে বছরটা মহাদেশীয় টুর্নামেন্টের—ইউরো, কোপা আমেরিকা, আফ্রিকান নেশনস কাপ আর এশিয়ান কাপ আছে এ বছর। চার বা দুই বছর বিরতির পর আসে বলে জাতীয় দল পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টগুলো নিয়ে বাড়তি রোমাঞ্চ সব সময়ই থাকে।
সেই তুলনায় ক্লাব ফুটবল চলে প্রায় একই সূচি ও একই ধারা মেনে। তবে ২০২৪ সালে ক্লাব ফুটবল দেখতে পারে দারুণ কিছু ঘটনা, যা ফুটবলপ্রেমীদের নিশ্চিতভাবে রোমাঞ্চিত করবে। এর কোনোটি নতুনের আগমনী বার্তা, কোনোটি নতুন মোড়কের কারণে আবার কোনোটি কয়েক বছরের অপেক্ষার অবসানের কারণে। তেমনই কিছু রোমাঞ্চকর উপাদানে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক এবার।
আধিপত্যে ধাক্কা
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে ঘুরেফিরে কয়েকটি দলই প্রতিবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে থাকে। গত এক দশকের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটি ছাড়া হিসাবের বাইরে থেকে এসে তেমন কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তবে চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমের লিগে সেই ধারা ভেঙে যাওয়ার আভাস দেখা যাচ্ছে। শীর্ষ পাঁচ লিগের চারটিতেই শিরোপা লড়াইয়ে আছে ‘সিলেবাসের বাইরে’ থাকা দল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যেমন এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে আছে অ্যাস্টন ভিলা। গত মৌসুমে সপ্তম হওয়া দলটি ২০২৩ সাল শেষে লিভারপুলের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৪২ পয়েন্টের মালিক, পিছিয়ে শুধু গোল ব্যবধানে।
স্পেনের লা লিগায়ও চিত্রটা একই। দুই মৌসুম আগেও দ্বিতীয় স্তরে থাকা জিরোনা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে শিরোপার লড়াই দিচ্ছে। নতুন বছরের শুরুতে জিরোনা ও রিয়াল দুই দলের পয়েন্টই সমান। রিয়ালও পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে গোল ব্যবধানের কারণে।
প্রিমিয়ার লিগ আর লা লিগায় তাও প্রায়ই চ্যাম্পিয়নশিপে হাতবদল ঘটে, কিন্তু বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখের দাপটটা একচ্ছত্র। টানা ১০ বছর ধরে বুন্দেসলিগা জেতা সেই বায়ার্নকে এবার হুমকি দিচ্ছে বায়ার লেভারকুসেন। মৌসুমের মাঝবিরতির সময় ৪২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে লেভারকুসেন, ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে বায়ার্ন দ্বিতীয়।
ফরাসি লিগ আঁ-তেও পিএসজিকে অস্বস্তিতে রেখেছে নিস। যদিও ৫ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছে কিলিয়ান এমবাপ্পের দল। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে একমাত্র ইতালির সিরি আ-তেই বড় দলগুলোই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এখানে শীর্ষ তিনে ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস ও এসি মিলান।
পরবর্তী প্রজন্মের উত্থান
২০২৩ সালে ফুটবলবিশ্বে নতুন তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন জুড বেলিংহাম। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো এই ইংলিশ মিডফিল্ডার ছাড়া সেভাবে আর কেউ নাম ছড়াতে পারেননি। তবে ২০২৪ সালে বেশ কয়েকজন নতুন তারকার আবির্ভাব দেখতে পারে ফুটবল। এর মধ্যে ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ক্লদিও এচেভেরি, বার্সেলোনায় যোগ দিতে যাওয়া ব্রাজিলিয়ান ভিতর রকি, রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে যাওয়া এনদ্রিক ও এরই মধ্যে যোগ দেওয়া আর্দা গুলেরদের ভাবা হচ্ছে আগামীর তারকা।
এ ছাড়া বেনফিকার জোয়াও নেভেস, কোপেনহেগেনের রুনি ব্রাডজি, করিন্থিয়ানসের গ্যাব্রিয়েল মোসকার্দোরাও আছেন সম্ভাবনার তালিকায়। সব মিলিয়ে ২০২৪ সাল ফুটবলে আগামী প্রজন্মের উত্থানের বছর হওয়ার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে।
নতুন চ্যাম্পিয়নস লিগ
বিশ্বজুড়ে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট হচ্ছে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ। ইউরোপীয় ক্লাবগুলোকে নিয়ে হওয়া এই টুর্নামেন্টে এবার নতুনত্ব আসছে। ৩২ দলের পরিবর্তে ৩৬ দল খেলবে চ্যাম্পিয়নস লিগে। প্রতিটি দল প্রথম পর্বে খেলবে আটটি করে ম্যাচ। এত দিন বৃহস্পতিবার রাত ইউরোপা লিগ এবং ইউরোপা কনফারেন্স লিগের জন্য বরাদ্দ ছিল, এবার সেটা থাকছে না। সব মিলিয়ে প্রথম মৌসুমটা অনেকের কাছে হয়তো গোলমেলে লাগতে পারে, তবে এর মাধ্যমে একঘেয়েমি ধারা থেকেও চ্যাম্পিয়নস লিগ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমবাপ্পে-ধাঁধাঁর অবসান
অর্ধযুগ আগে থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের দিকে চোখ রিয়াল মাদ্রিদের। এর মধ্যে ২০২২ সালে স্প্যানিশ ক্লাবটি তাঁকে দলে প্রায় ভিড়িয়েই ফেলেছিল। কিন্তু সেবার তো বটেই, ২০২৩ গ্রীষ্মকালীন মৌসুমেও এমবাপ্পে আর রিয়ালে যাননি। অথচ প্রতিবছরই তাঁর পিএসজি ছাড়া নিয়ে দলবদল বাজারে জোর আলোচনা ছিল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে তাঁর পিএসজিতে থাকা না থাকার বিষয়। তবে এত সব আলোচনা-বিতর্কের অবসান হতে পারে এ বছরই। কারণ, পিএসজির সঙ্গে ২০২৪ সালে চুক্তি শেষ হচ্ছে এমবাপ্পের। নতুন কোনো নাটকীয়তা না দেখা গেলে এমবাপ্পের দলবদল দেখা যেতে পারে এ বছরই।