মোরছালিনকে দেখেই ভবিষ্যৎ তারকা মনে হয়েছিল বসুন্ধরার স্প্যানিশ কোচের
বাংলাদেশের ফুটবলে তরুণ প্রতিভা বলতে গেলে এখন সোনার হরিণ। কিন্তু এবারের বেঙ্গালুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেকে আলাদাভাবে চিনিয়েছেন শেখ মোরছালিন। সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ ১৮ বছরের তরুণ চার ম্যাচে করেছেন দুটি গোল। গোলে অবদানও রেখেছেন। ছোট এই পরিসংখ্যান দিয়ে অবশ্য মোরছালিন-ঝলকের পুরোটা বোঝা যায় না। মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেললেও আক্রমণের সব পজিশনেই তাঁর উপস্থিতি দেখা গেছে। গতি আর বুদ্ধি দিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন প্রতিপক্ষ রক্ষণকে।
কুয়েতের বিপক্ষে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় মিনিটেই মোরছালিনের সামনে চলে আসে গোলের সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু গোল করতে পারেননি, বল মেরেছেন কুয়েতের গোলকিপারের গায়ে। সুযোগটি নষ্ট না হলে মোরছালিন হতে পারতেন সেমিফাইনালের নায়ক। তবে গোটা টুর্নামেন্টে মোরছালিন যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, তাতেই তিনি নায়কের আসনে। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সেরা আবিষ্কার মোরছালিনই।
বাংলাদেশের ফুটবলে মোরছালিনের আবির্ভাব যেন ধূমকেতুর মতো। প্রতিভার আকালের মধ্যে প্রতিভার বিচ্ছুরণ। মোরছালিন সম্পর্কে অনেক কিছু এরই মধ্যে জানা হয়ে গেছে সবার। দেশের শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে যে মোরছালিন খেলছেন, সেটাও আজানা নেই। কিন্তু কীভাবে খুঁজে পাওয়া গেল তরুণ এই প্রতিভাকে!
অস্কার ব্রুজোনের চেয়ে তা আর ভালো কে জানে! কিংসের এই স্প্যানিশ কোচের অধীনেই বেড়ে উঠছেন মোরছালিন। তবে ব্রুজোন কৃতিত্ব দিচ্ছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানকে।
প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ
বসুন্ধরা কিংস ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসান খুঁজে খুঁজে তরুণ প্রতিভা দেখেন। মোরছালিনকে পাওয়া আসলে সেভাবেই। ‘আড়াই বছর আগে কমলাপুর স্টেডিয়ামে তৃতীয় বিভাগ ফুটবলে একটি ক্লাবের হয়ে খেলেছিল বিকেএসপির কয়েকজন। যার মধ্যে ছিল মোরছালিনও। সেটি ছিল তৃতীয় বিভাগের ফাইনাল। কিংসের সভাপতি, আমি এবং আমার কোচিং স্টাফের কয়েকজন গিয়েছিলাম সেদিন স্টেডিয়ামে। মোরছালিনকে প্রথম দেখাতেই সভাপতির পছন্দ হয়। আমারও পছন্দ হয়। আমরা তাকে ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে আবিষ্কার করি। তখন তাকে আমরা বিকেএসপি থেকে নিয়ে আসি।
মোরছালিনের সঙ্গে আমরা বিকেএসপির আরও তিন ছেলেকে নিই। তারা হলো নোভা, জয়ন্ত ও হৃদয়। নোভাকে আমরা শেখ জামালে ধারে দিয়েছি। জয়ন্ত ব্রাদার্সে আর হৃদয় মুক্তিযোদ্ধায়। এ চারজনের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অগ্রগতি হয়েছে মোরছালিনের। আমাদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে সে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। শুরু থেকেই আমরা মনে করেছি, মোরছালিন দলের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হতে পারে। সেই থেকে আড়াই বছর ধরে মোরছালিন আমাদের অধীনে আছে। এখানে এসে নিজেকে সে ঘষামাঝা করেছে, খেলায় উন্নতি করেছে এবং সেটা পেশাদার কাঠামোর মধ্যে।’
লিগে কেমন ছিলেন
গত প্রিমিয়ার লিগে মোরছালিনকে আমরা খেলাতে পারছিলাম না। ফলে তাঁকে ধারে মোহামেডানে খেলতে পাঠাই। সে কুমিল্লায় আমাদের বিপক্ষে গোল করেছে। সেই গোল তাঁকে চিনিয়েছে। এ বছর সে কিংসের একাদশে জায়গা করে নিয়েছে। লিগের সর্বশেষ ম্যাচে সে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিল। তার আগের ম্যাচে আমাদের লিগ শিরোপা নির্ধারণ করা হয়, ওই ম্যাচেও সে বড় ভূমিকা রেখেছে। জাতীয় দলের কোচ মোরছালিনের সর্বশেষ পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে দলে ডেকেছে। মোরছালিন আমাদের দলে যা খেলেছে, সেটারই ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে জাতীয় দলে।
ভালো গুণ
মোরছালিনের সবচেয়ে ভালো গুণ, সে টেকনিক্যালি খুব ভালো। ভালো ফুটবলার হতে গেলে এটা খুব দরকার। মাঝারি পাল্লার শটে সে দারুণ। তেমন শটে সে লিগে গোল করেছে। মোহামেডানের জার্সিতে আমাদের বিপক্ষে লিগে তার গোলটিও মাঝারি পাল্লার শটে। সে থ্রু পাসেও ভালো। এটা তার খেলার উল্লেখযোগ্য দিক।
সাফে কেমন দেখেছেন
সাফ আলাদাভাবে তুলে ধরেছে মোরছালিনকে। বলতে পারেন, বাংলাদেশ দল আগামী দিনের জন্য একজন ভালো ফুটবলার পেল। হাভিয়ের তাকে একাদশে রেখেছে। সেটার প্রতিদানও দিয়েছে ছেলেটি। তবে মোরছালিনকে আরও মানসিক পরিপক্বতা আনতে হবে। ঠান্ডা মাথায় গোল করতে হবে। কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচে সে সহজ সুযোগ নষ্ট করেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এর আগে সে কঠিন গোলও করেছে। গোল মিস আসলে হতেই পারে। সব মিলিয়ে আমি ওর খেলায় দারুণ খুশি। যদিও আমি সব সময় ব্যক্তি নয়, দলীয় খেলার ওপরই জোর দিই।
কত দূর যেতে পারবে
মোরছালিন সবে শুরু করেছে। তার সামনে লম্বা পথ। উন্নতির ধারাবাহিকতায় তাঁকে থাকতে হবে। তাঁর মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা আছে। এখন দরকার তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে পথ দেখানো। সে জানে তাকে নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা কী। আমরা তাকে নিয়ে খুবই আশাবাদী। আশা করি, সে একদিন বাংলাদেশের ফুটবলে বড় তারকা হবে। তবে এ জন্য তাকে নিজের খেলায় আরও উন্নতি আনতে হবে।