১৮ কার্ড দেখিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করা আর্জেন্টিনা–নেদারল্যান্ডস ম্যাচের রেফারি কে এই লাহোজ
খেলেছে আর্জেন্টিনা–নেদারল্যান্ডস, ব্যবধান গড়ে আলোচিত হয়েছেন লিওনেল মেসি, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ আর ভাউট ভেগহোর্স্টরা।
তবে টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচটিতে বিশ্বকাপ রেকর্ড গড়েছেন রেফারি অ্যান্তনিও মাতেও লাহোজ। কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটিতে মোট ১৮টি কার্ড দেখিয়েছেন স্প্যানিশ এই রেফারি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটিই এক ম্যাচে সর্বোচ্চ কার্ড দেখানোর রেকর্ড। এর আগে ২০০৬ বিশ্বকাপে পর্তুগাল–নেদারল্যান্ডস ম্যাচে কার্ড দেখানো হয়েছিল ১৬টি।
লুসাইল স্টেডিয়ামের আর্জেন্টিনা–নেদারল্যান্ডস ম্যাচটিতে খেলোয়াড়দের কার্ড দেখানো হয়েছে ১৬টি। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের ৮টি, নেদারল্যান্ডস খেলোয়াড়দের ৮টি। এর মধ্যে ডাচ ডিফেন্ডার ডেনজেল ডামফ্রিস টাইব্রেকারের পর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে লাল কার্ড পান। বাকি দুটি হলুদ কার্ড দেখানো হয় আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি ও তাঁর সহকারী ওয়াল্টার স্যামুয়েলকে।
ম্যাচ শেষে লাহোজের রেফারিংয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি ও গোলরক্ষক এমি মার্তিনেজ। মেসি তাঁর মন্তব্যে ফিফাকে ‘বড় ম্যাচে এ ধরনের রেফারিকে দায়িত্ব না দেওয়া’র অনুরোধ জানিয়েছেন। আর ৯০ মিনিটের খেলা শেষে যোগ করা সময় বেশি (১০ মিনিট) দেওয়া, যখন–তখন ফাউল (মোট ৪৮টি) ঘোষণাসহ বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে তাঁকে ‘অপদার্থ’ বলে অভিহিত করেছেন গোলরক্ষক মার্তিনেজ।
লাহোজের সঙ্গে মেসি ও আর্জেন্টিনার তেতো অভিজ্ঞতা অবশ্য এটিই প্রথম নয়।
কে এই রেফারি
৪৫ বছর বয়সী লাহোজ পেশাদার রেফারিং শুরু করেন ২০০৮ সালে। চার বছর স্প্যানিশ ফুটবলের দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাচ পরিচালনার পর ২০১২ থেকে লা লিগা এবং ২০১৩ থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে রেফারিং শুরু করেন। বিশ্বকাপে প্রথমবার ম্যাচ পরিচালনা করেন ২০১৮ আসরে। এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা–নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে যুক্তরাষ্ট্র–ইরান ও কাতার–সেনেগাল ম্যাচেও বাঁশি ছিল তাঁর হাতে।
সব মিলিয়ে পেশাদার ক্যারিয়ারে ৪৯৮টি ম্যাচে রেফারিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁর। এই ম্যাচগুলোতে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন ২ হাজার ৩২৬টি, লাল কার্ড ৫৫টি; আর পেনাল্টি দিয়েছেন ১১৯টি। ২০২০ ইউরোর পর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তবে গত বছরের শেষ দিকে আবার মাঠে ফিরে আসেন।
আগেই শঙ্কায় ছিল আর্জেন্টিনা
ফিফার পক্ষ থেকে রেফারির তালিকা প্রকাশ করার পরই লাহোজকে নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা। তাঁর পরিচালনা করা ম্যাচে এর আগেও ভুগেছে আর্জেন্টিনা। ২০১৬ রিও অলিম্পিকের গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা–হন্ডুরাস ম্যাচের রেফারি ছিলেন লাহোজ। ম্যাচে সেদিন তিনটি পেনাল্টি দেন রেফারি, যার দুটি ছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। এর একটিতে গোল করে হন্ডুরাস এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ১–১ সমতায় ম্যাচ শেষ করলেও প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
কার্ড দেখিয়েছিলেন মেসিকেও
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা মারা যান ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর। এর পাঁচ দিন পর লা লিগায় ওসাসুনার বিপক্ষে গোল করে তাঁকে ‘ট্রিবিউট’ দিয়েছিলেন মেসি। গোলের পর বার্সেলোনার জার্সি খুলে ফেলেন তিনি, ভেতরে ছিল ম্যারাডোনার পরা নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের জার্সি। দৃশ্যটা বেশ আবেগের হলেও জার্সি খোলার দায়ে মেসিকে হলুদ কার্ড দেখান লাহোজ। হলুদ কার্ড দেখানোটা নিয়মের মধ্যে থাকলেও উপলক্ষ বিবেচনায় সেটি রূঢ় ছিল বলে লাহোজের সমালোচনা হয়েছিল তখন।
আগুয়েরো–গার্দিওলার সঙ্গেও ঝামেলা
লাহোজকে খুব ভালো করে মনে থাকার কথা ম্যানচেস্টার সিটি সমর্থকদের। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোয় মোনাকোর বিপক্ষে সের্হিও আগুয়েরোকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন লাহোজ। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায়, আগুয়েরোকেই বরং ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
পরের বছর যে ম্যাচটিতে লিভারপুলের কাছে হেরে সিটি বিদায় নেয়, সেটিতে লাহোজ লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন ডাগআউটে থাকা পেপ গার্দিওলাকে। ম্যাচে লেরয় সানের একটি গোলও অফসাইডে বাতিল করে দেওয়া হয়, যদিও রিপ্লেতে সেটি বৈধ ছিল বলে দেখা যায়।
গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার সিটি–ক্লাব ব্রুগা ম্যাচের রেফারি হিসেবে লাহোজের নাম ঘোষণার পর সিটি সমর্থকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। একজন যেমন টুইট করেছিলেন, ‘সিটিকে বিদায় করতেই অবসর ভেঙে ফিরেছেন তিনি।’
আর্জেন্টিনা আর নেদারল্যান্ডসের সমর্থকেরাও এখন কাছাকাছি কিছু বলতে পারেন।