মেসির চুক্তি সইয়ে দেরি কেন
লিওনেল মেসি মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) আসার ঘোষণা দিয়েছেন ৮ জুন। তাঁর এই ঘোষণাকে দেখা হচ্ছে মেজর লিগ সকার এবং ইন্টার মায়ামির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে। তবে মেসির মাপের একজন খেলোয়াড়কে আনার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা লিগ এবং ক্লাবটির আছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। ইন্টার মায়ামিতে আসার ঘোষণাটা মেসিই প্রথম দিয়েছেন।
ইন্টার মায়ামি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। বলেনি এমএলএস কর্তৃপক্ষ। মেসির মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণাটিকেই এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পিন পোস্ট আকারে দিয়ে রেখেছে এমএলএস। এর বেশি কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই লিগ বা ক্লাবের পক্ষ থেকে।
এখনো মেসির সঙ্গে চুক্তি সই না হওয়া আর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক। প্রতিবেদনে একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, এমএলএস কমিশনার ডন গারবের মেসির আসা নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য এখনো প্রস্তুত নন।
এখন পর্যন্ত লিগ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটিই বিবৃতি দিয়েছে। যেখানে মেসির যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ঘোষণায় ‘আনন্দিত’ বলা হলেও ‘আনুষ্ঠানিক চুক্তি সম্পন্ন হতে এখনো কাজ বাকি আছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্য অ্যাথলেটিক বলছে, এক সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনো সেসব কাজ শেষ করতে পারেনি লিগ কর্তৃপক্ষ।
মেসি ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া জগতে বড় কম্পন অনুভূত হলেও এখনো চুক্তি সই হয়নি। এমনকি চুক্তিসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ও চূড়ান্ত হয়নি। আর চুক্তি না হওয়ার কারণে মেসিকে কীভাবে বরণ করা হবে এবং তাঁর আগমনকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে, সে বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি মায়ামি ও লিগ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি মেসির চুক্তিপত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অন্য চুক্তিগুলোকেও এটি প্রভাবিত করছে। যেখানে নতুন কোচ নিয়োগ এবং অন্য খেলোয়াড়দের আগমনের বিষয়টিও জড়িত।
চুক্তিটি মৌলিকভাবে কিছুটা জটিল, সেটিও এর বিলম্বিত হওয়ার আরেকটি বড় কারণ। প্রস্তাবিত চুক্তিটিতে ইন্টার মায়ামি মালিকানার অংশ কিনে নেওয়ার সুযোগ রাখার কথা বলা হচ্ছে। চুক্তির অংশ হিসেবে এমএলএসের পুরো মৌসুমের সাবস্ক্রিপশন থেকে পাওয়া অর্থ ভাগাভাগির বিষয়ে অ্যাপলের সঙ্গে আলোচনা সেরে নেওয়ার বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত।
একটি সূত্র অ্যাথলেটিককে জানিয়েছে, অ্যাপলের চুক্তিটি মূলত নতুন আন্তর্জাতিক সাবস্ক্রিপশন থেকে আসা আয়ের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ক্ষতিপূরণ, চুক্তিতে করের প্রভাব, বিপণন এবং ইমেজ রাইটসের বিষয়গুলোও এর সঙ্গে যুক্ত আছে। পাশাপাশি এই সব দর-কষাকষিতে মেসির নাম ও জার্সি নম্বর ব্যবহারের স্বত্ব কার দখলে থাকবে, তা নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি আছে।
এমএলএস মূলত একক সত্তার কাঠামোতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। যেখানে খেলোয়াড়েরা মূলত লিগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়, ক্লাবের সঙ্গে নয়। যে কারণে লিগ কমিশনার গারবের অন্য দলগুলোর মালিকদেরও মেসির চুক্তির বিষয়ে প্রতিনিয়ত অবগত করছেন।
এখন পর্যন্ত এটি নিশ্চিত যে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের আগে মেসি-মায়ামি চুক্তি সই হচ্ছে না। কারণ, এমএলএসে দলবদলের দুয়ারই খুলবে ৫ জুলাই। এরপর মেসির সঙ্গে চুক্তি সইয়ের বিষয়টি কার্য তালিকায় যুক্ত করা হবে। মেসি বর্তমানে জাতীয় দলের সঙ্গে আছেন। যদিও ১৯ জুন ইন্দোনেশিয়া ম্যাচের আগেই তাঁর জাতীয় ছাড়ার কথা রয়েছে। তবে মেসি ইন্টার মায়ামিতে কখন যোগ দেবেন, সেটা চুক্তির বিষয়াদি নিয়ে দর–কষাকষি সম্পন্ন হওয়ার ওপর নির্ভর করছে।
জানা গেছে, চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতা দূর করে এমএলএস অলস্টার ম্যাচে যেকোনোভাবে মেসিকে খেলানোর প্রচেষ্টা চলছে। এর আগে বলা হয়েছিল ইন্টার মায়ামির হয়ে আগামী ২১ জুলাই মেসির অভিষেক হতে পারে। তবে লিগ এবং ডিসি ইউনাইটেডের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলছে, ১৯ জুলাই ডিসি ইউনাইটেডের মাঠে আয়োজিত এমএলএস বনাম আর্সেনালের ম্যাচেও দেখা যেতে পারে মেসিকে।
লিগের সম্প্রচার কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অ্যাপলের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, টেক জায়ান্টটিও চেষ্টা করছে যেকোনোভাবে মেসিকে এই ম্যাচে খেলানোর। কারণ, এই ম্যাচও এমএলএসের সিজন পাসের (মৌসুমভিত্তিক সাবস্ক্রিপশন) সঙ্গে যুক্ত। তবে এই ম্যাচে মেসির খেলার বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে তাঁর নিজের ওপর। আরও কিছু সময় গেলে মেসি এই ম্যাচে খেলা নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানা গেছে।
তবে অলস্টার-আর্সেনাল ম্যাচে মেসির সংযুক্তি কেমন হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ডিসি ইউনাইটেডের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, মেসিকে মূলত লিগের দক্ষতা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার জন্য চাওয়া হচ্ছে। যেটি সাধারণত অল স্টার ম্যাচের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয়। আরেকটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, মেসি হয়তো অলস্টার ম্যাচেই খেলবেন। তবে মেসি খেলুন বা না খেলুন, এই আয়োজনে মেসির উপস্থিতিই দর্শকদের উন্মাদনাকে নতুন মাত্রা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া মেসিকে আনার ব্যাপারে ইন্টার মায়ামি কারিগরি সমস্যার মুখোমুখিও হচ্ছে। ক্লাবের একটি সূত্র দ্য অ্যাথলেটিককে জানিয়েছে, ভ্রমণসংক্রান্ত ব্যাপারে ভালোই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ক্লাবটিকে। হোটেল, চার্টার্ড ফ্লাইটসহ নানা বিষয়গুলো উপযুক্ত কি না, তা নতুন করে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এমএলএসের দলগুলো বর্তমানে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে যাওয়ার সময় চার্টার্ড ফ্লাইট ব্যবহার করে। কিন্তু সেগুলো মোটেই উন্নতমানের নয়। তবে সবকিছুর আগে এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে আনুষ্ঠানিকভাবে মেসির চুক্তি সই। সেটি হয়ে একবার বাকি সবকিছুই গৌণ হয়ে যাবে।