বঙ্গবন্ধুর শহরে কিংস-রাজ, আবার হার আবাহনীর
গোপালগঞ্জ মানে বঙ্গবন্ধুর শহর। শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামের পাশেই বঙ্গবন্ধু কলেজ, পাকিস্তান আমলে যেটির ছিল নাম কায়দে আজম কলেজ। তারও আগে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল আর এই স্কুলেই পড়েছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ছোট্ট শহরের মাঝখানে এই স্টেডিয়ামেই মাসখানেক আগে কিংস উড়িয়েছিল বিজয় পতাকা। মোহামেডানকে হারিয়ে তারা এই মাঠ থেকেই নিয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ট্রফি।
সেই মাঠেই প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচ জিতেছে গত সপ্তাহে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রবসন দা সিলভা সেদিন করেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তাঁর ৫০তম গোল। আজ বড় ম্যাচে কিংসের দুই গোলের প্রথমটি তাঁর। অন্য গোলটি মিগুয়েল ফেরেইরার।
দুই ব্রাজিলিয়ান গোল করে আনন্দে মাতিয়েছেন সমর্থকদের। আরেক ব্রাজিলিয়ান দরিয়েলতন গোল না পেলেও করেছেন সহায়তা। তিন ব্রাজিলিয়ান মিলেই আজ রাজত্ব করলেন গোপালগঞ্জের মাঠে। আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে কিংসের ২-০ গোলের জয়ে তিন ব্রাজিলিয়ান ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল।
২০১৮ সাল থেকে আবাহনী-কিংস ম্যাচটা হয়ে উঠেছে দেশীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। কিন্তু নামে সবচেয়ে বড় ম্যাচ হলেও ফলের দিক থেকে একপেশে। দুই দলের ১৪তম লড়াইয়ে কিংসের এটি নবম জয়। আবাহনীর জয় দুটি, ড্র তিনটি।
দুই দল সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর মুখোমুখি হয়েছিল স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনালে। সেই ম্যাচের প্রথমার্ধ ভালো খেলেও দ্বিতীয়ার্ধে ৪ গোল খেয়েছে আবাহনী। আজ হলো ২-০। যার মানে সর্বশেষ দুই ম্যাচে আবাহনী ৬ গোল খেয়েছে কিংসের কাছে।
কিংস একের পর এক ম্যাচ জিতছে। জিতছে, কারণ তাদের হাতে আছে উঁচু মানের বিদেশি খেলোয়াড়। যাঁরা পার্থক্য গড়তে পারেন ম্যাচে। কিংস দল হিসেবে নিজেদের নিয়ে গেছে অন্যদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আজ আবাহনী খেলেছে তাদের সাধ্য অনুযায়ী। কিন্তু কিছু করার নেই তাদের। কিংসের সঙ্গে পেরে ওঠা যে সত্যি কঠিন।
প্রিমিয়ার লিগে টানা পঞ্চম জয়ে কিংসের পুরো ১৫ পয়েন্ট। ৫ ম্যাচে দুই হার এক ড্র আর দুই জয়ে আবাহনীর ৭ পয়েন্ট। ১৮ ম্যাচের লিগে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে ৫ ম্যাচ শেষেই ৮ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়া মানে আবাহনীর পক্ষে লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার অনেক কঠিন। আবাহনীকে ফিরে আসতে হবে আসলে আরও শক্তি নিয়ে। নইলে এই কিংসের সঙ্গে তাদের পক্ষে পেরে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
কিংসের দলীয় বোঝাপড়া অনেক ভালো। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও তারা এগিয়ে। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি মিগুয়েলের কর্নারে দরিয়েলতনের হেড। বল বাতাসে রেখেই ছোট্ট একটা ব্যাক-ভলিতে রবসন দারুণভাবে বল পাঠান জালে। রহমত পারলেন না রবসনকে আটকাতে। আসলে আটকানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল বলেও মনে হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনী একটু ওপরে উঠে খেলার চেষ্টা করলেও নিজেদের রক্ষণ ভালোভাবে সামলে কিংস দ্বিতীয় গোলটা তুলে নিয়েছে। ৭১ মিনিটে ২-০ হওয়ার পর আবাহনীর ম্যাচে ফেরার আশাও প্রায় শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয় গোলটি এসেছে দরিয়েলতন ও মিগুয়েলের দারুণ বোঝাপড়ায়। দরিয়েলতনের পাস থেকে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে মিগুয়েল করেন ২-০।
দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনী একটু ওপরে উঠে খেলার চেষ্টা করলেও নিজেদের রক্ষণ ভালোভাবে সামলে কিংস দ্বিতীয় গোলটা তুলে নিয়েছে। ৭১ মিনিটে ২-০ হওয়ার পর আবাহনীর ম্যাচে ফেরার আশাও প্রায় শেষ হয়ে যায়। দ্বিতীয় গোলটি এসেছে দরিয়েলতন ও মিগুয়েলের দারুণ বোঝাপড়ায়। দরিয়েলতনের পাস থেকে বাঁ পায়ের গড়ানো শটে মিগুয়েল করেন ২-০।
কিংস শুরু থেকেই হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছে, প্রতিপক্ষকে তাদেরই সীমানায় দমিয়ে রেখেছে। আবাহনী দু-তিনবার পাল্টা আক্রমণে উঠলেও বল দখলে রাখতে পারেনি বেশিক্ষণ। এর মধ্যেই আবাহনীর একটা হেডে ভালো সেভ করেছেন কিংসের গোলকিপার আনিসুর রহমান। শেষ দিকে আরও দুটি দারুণ সেভ করেছেন। দুটি গোল খেলেও আবাহনীর গোলকিপার শহিদুলও ভালো কয়েকটি সেভ করেছেন। কিন্তু দলকে বাঁচাতে পারলেন না।
প্রথম গোলের পর আবাহনী কিছুটা মাথা তোলার চেষ্টা করেছে। ফরোয়ার্ড ওয়াশিংটন তাঁর লম্বা স্টেপে বিশ্বনাথকে পেছনে ফেলে একবার বিপজ্জনকভাবে ঢুকেছেন, কিন্তু ওই পর্যন্তই। জোনাথন, কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টদের শুটিং জোনে কোনো জায়গাই দেননি তপু বর্মণেরা। তপু ভালোই সামলেছেন আবাহনীর ফরোয়ার্ডদের। অন্যদিকে রবসনরা করেছেন নিজেদের কাজটা। তাই বড় ম্যাচে আবাহনীকে হারিয়ে বঙ্গবন্ধুর শহরে আজ উড়ল কিংস।
প্রেসবক্সে বসে পুরো ম্যাচ দেখলেন জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। সঙ্গে সহকারী কোচ হাসান আল মামুন। ম্যাচ শেষে প্রেসবক্স ছাড়ার সময় কিংসের প্রশংসা করে গেলেন। হাসান আল মামুন বললেন, ‘এই কিংসকে রোখা কঠিন।’ ভুল বলেননি।