ক্ষমা চেয়েও পার পাচ্ছেন না এনজো ফার্নান্দেজ, হতে পারে বড় শাস্তি

আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজরয়টার্স

কোপা আমেরিকায় আবারও আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর একটু বেশিই উন্মাদনা পেয়ে বসেছিল এনজো ফার্নান্দেজকে। তবে সে উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ন্যক্কারজনকভাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা লাইভ ভিডিওতে তিনি একটি গান গেয়ে ওঠেন, যাতে ফ্রান্স দলকে নিয়ে অত্যন্ত অপমানজনক ও বর্ণবাদী ভাষা ছিল।

গানটি দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার ঝড় উঠলে বিপদ আঁচ করতে পারেন ফার্নান্দেজ। পরক্ষণেই ক্ষমা চেয়ে নেন। তবে চেলসির এই আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার ক্ষমা চেয়েও পার পাচ্ছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে (এএফএ) ও ফিফাকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নিতে যাচ্ছে ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএফ)। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ও ফার্নান্দেজের ক্লাব চেলসি এরই মধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে হতে পারে বড় শাস্তি।

এক বিবৃতিতে এফএফএফ জানিয়েছে, ‘আর্জেন্টিনা দলের এক খেলোয়াড় ও সমর্থকদের গাওয়া গানটির মাধ্যমে ফ্রান্স দলের খেলোয়াড়দের উদ্দেশে অগ্রহণযোগ্য, বর্ণবাদী ও বৈষম্যমূলক মন্তব্য করা হয়েছে। এ ধরনের জঘন্য মন্তব্য খেলাধুলা ও মানবাধিকারের মূল্যবোধের পরিপন্থী। ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি ফিলিপে দিয়ালো এ ধরনের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন এবং (ফার্নান্দেজের বিরুদ্ধে) আইনি অভিযোগ করতে সরাসরি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

এফএফএফ সভাপতি দিয়ালো ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার কার্যনির্বাহী কমিটির একজন সদস্যও।

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘ফুটবল ও এর ২১১টি জাতীয় ফেডারেশনের অবশ্যই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। এ ধরনের ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি টাস্কফোর্স আবারও চালু করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ফিফার এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিও সম্পর্কে আমরা সচেতন এবং ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খেলোয়াড়, ভক্ত, কর্মকর্তাসহ যিনিই জড়িত থাকুন না কেন, ফিফা সব ধরনের বৈষম্যের তীব্র নিন্দা জানায়।’

বড় শাস্তির মুখে পড়তে পারেন আর্জেন্টিনার এনজো ফার্নান্দেজ
ইনস্টাগ্রাম

এদিকে ফার্নান্দেজের ক্লাব চেলসিও এনজোর বিতর্কিত গান গাওয়া নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। লন্ডনের ক্লাবটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘চেলসি ফুটবল ক্লাব সব ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য মনে করে। একটি বৈচিত্র্যময় ক্লাব হতে পেরে আমরা গর্বিত। এখানে সব সংস্কৃতি ও সম্প্রদায়ের মানুষকে স্বাগত জানানো হয়। আমরা আমাদের খেলোয়াড়ের সর্বজনীন ক্ষমার ব্যাপারে অবগত এবং এটিকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছি। ক্লাবের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলামূলক পদ্ধতি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চেলসির বর্তমান স্কোয়াডে ৭ জন ফরাসি ফুটবলার আছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি এক্সপ্রেস জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৩ সতীর্থ আলেক্স দিসাসি, মালো গুস্তো ও ওয়েসলি ফোফানা এনজো ফার্নান্দেজকে ইনস্টাগ্রামে ‘আনফলো’ করে দিয়েছেন। ফোফানা তাঁর এক্স হ্যান্ডলে ফার্নান্দেজের বির্তকিত গানটির ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এটা ২০২৪ সালের ফুটবল, যেখানে অবাধে বর্ণবাদ চলছে।’

আরও পড়ুন

আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স আলাদা মহাদেশের দল হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের পর থেকে। লুসাইলের সেই ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। এরপরই আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা ফ্রান্স দলকে নিয়ে অপমানজনক ও বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার করে গানটি বানিয়েছিলেন।

সেই গানে ফ্রান্সের তারকা স্ট্রাইকার ও বতর্মান অধিনায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করা হয়। আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এমবাপ্পের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে বিদ্রূপও করেন। সে সময়ও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন। ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রীও মার্তিনেজের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবার আর্জেন্টিনা কোপা জয়ের পর এনজো ফার্নান্দেজ সেই গান গেয়ে পুরোনো বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছেন।