বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার নিয়ে মন্ত্রীর সামনে বাফুফের তীব্র ক্ষোভ
আড়াই বছর ধরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ‘ম্যারাথন’ সংস্কার চলছে। বারবার সময় বাড়িয়ে প্রকল্প শেষের সময় ধরা হয়েছে এ বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর এই সময়ের মধ্যেই স্টেডিয়াম বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস আগেই দিয়েছেন নতুন যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান।
আজ দুপুরে তিনি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে সেই পুরোনো কথাই বলেছেন। স্টেডিয়াম বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন এ বছরের মধ্যেই। তাঁর কাছে এমন আশ্বাস মেলেনি যে কাজ আরেকটু দ্রুত শেষ করে এ বছর অক্টোবরে ঢাকায় নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আয়োজন করা যাবে।
মন্ত্রী স্টেডিয়ামে আসার পরই শুরু হয় তাঁর কাছে নালিশ আর নালিশ। একদিকে বাফুফের পক্ষ থেকে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে ক্রীড়া সাংবাদিকেরা তুলে ধরেন প্রেসবক্স নির্মাণে নানা অসংগতির বিষয়।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, কম্পিটিশন ম্যানেজার জাবের বিন তাহের আনসারি মন্ত্রীকে জানান, বাফুফের চাহিদা কী ছিল আর কী করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। দুই পক্ষে কাজের কোনো সমম্বয় ছিল না। একটি উদাহরণেই তা বোঝা যাবে। ড্রেসিংরুমে যেখানে ২৩টি চেয়ার দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেয় ১৬টি! পরে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বাফুফে আজ মন্ত্রীকে বলছে, স্টেডিয়ামে স্টোররুম, পানির ট্যাংক বড় করতে হবে। মাঠের পানি দেওয়ার জন্য ৭-৮ মাস আগে বসানো ৬টি স্প্রিংকলারই বদলের দাবি তোলা হয়েছে। কারণ, এগুলো থেকে পানি মাঠ পর্যন্ত পৌঁছায় না। তা ছাড়া এগুলো আকারে এত বড় যে হোঁচট খেয়ে ফুটবলাররা আহত হতে পারেন যেকোনো সময়।
এগুলো আসলে হকি মাঠের স্প্রিংকলার। কয়েক মাস আগেই এনএসসি এগুলো বদলে দেবে বলেছিল। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। তা ছাড়া মাঠের চারপাশে ঢালাই করা জায়গায়টায় রাবার দিয়ে বর্ডার করে ঢেকে দিতে বলেছে বাফুফে।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাফুফের সঙ্গে আলোচনা না করেই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যে কারণে এসব সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফিফা অনুমোদিত স্টেডিয়াম কীভাবে তৈরি হয়, সেটার ম্যানুয়াল আমরা তাদের পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেই অনুযায়ী কাজ হয়নি।’
ক্রীড়া সাংবাদিকেরাও ক্রীড়ামন্ত্রীকে পেয়ে নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কারণ, নতুন প্রেস বক্সের সামনে চারটা বড় পিলার! ফলে পুরো মাঠ দেখা যায় না। ক্যামেরাম্যানরা কোথায় দাঁড়াবেন, সেই জায়গা নেই। প্রেসবক্স করার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গেও এনএসসি বসেনি। পুরো প্রকল্পটা এনএসসি তাদের মতো তৈরি করেছে। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা যুব ও ক্রীড়াসচিব মহিউদ্দিন আহমেদ স্বীকার করেন, কিছু সমন্বয়ের অভাব ছিল। যে কারণে এসব সমস্যার উদয় হয়েছে।
পরে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম এলাম দেখতে। এসে কিছু কথা শুনলাম। কী কী সমস্যা আছে জানলাম। দুটি মূল সমস্যা। একটি স্প্রিংকলার ও আরেটি মিডিয়া রুম। সমস্যা আছে, অস্বীকার করার উপায় নেই।’ তারপর যোগ করেন, ‘এ থেকে কোনো কিছু করা সম্ভব কি না, সেটা দেখব। ওনাদের সাথে বসে কথা বলব। যদি সম্ভব হয়, অবশ্যই করব। খুব একটা অসম্ভব মনে হয় না। কিছু একটা তো করতেই পারব। সব না পারলেও বেশির ভাগই করতে পারব।’
মন্ত্রী বলেছেন, ‘ওনাদের কাছ থেকে ডকুমেন্টস না পেলে কমেন্টস করা ঠিক হবে না। এখন একটা কথা বললে হয় এনএসসির ওপর পড়বে, না হয় যারা আমাদের কনসালট্যান্ট অথবা ফুটবল ফেডারেশন...কাজেই কাগজপত্র না দেখে কমেন্টস করা ঠিক হবে না। সমস্যা এখনো আছে। এটাকে নিরসন করা সম্ভব হলে অবশ্যই করব। বড় কোনো সমস্যা থাকলে সেটা দূর করার চেষ্টা থাকবে।’
আগামী দিনে যাতে সমস্যা না হয়, দিয়েছেন সেই টোটকাও, ‘আগামী দিনে কোনো স্থাপনা সংস্কার বা নতুন কিছু করলে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করতে হবে। পরিকল্পনায় সবাই সই করতে হবে। একবার অনুমোদন হয়ে গেলে এ নিয়ে আর কোনো কথা বলার উপায় থাকবে না।’
মন্ত্রী কথা বলেছেন প্রেসবক্স নিয়েও, ‘প্রেসবক্স নিয়ে যে সমস্যার কথা বলেছেন, এটা তো আগেই মাথায় আসা উচিত ছিল। প্রথম যখন দেখলাম, এ রকম পিলার তো সাধারণত কোথাও দেখিনি। কিন্তু যেটা হয়ে গেছে, বদল করা গেলে করব। না হয় এ রকমই থাকবে। ভবিষ্যতে যেন না হয়, সেই চেষ্টা করব। কিন্তু বদলের কথা বলে আরও এক–দুই বছর বাড়ানো ঠিক হবে না।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংস্কার শুরু হয় ২০২১ সালের আগস্টে। অথচ এখনো স্টেডিয়ামের ভেতর ঢুকলে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক আর এক পাশে ছাদ তৈরি ছাড়া দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। তা স্টেডিয়ামের অগ্রগতি দেখে মন্ত্রী কি সন্তুষ্ট? নাজমুল হাসান সরাসরি উত্তর দেননি, ‘অগ্রগতি নিয়ে জানি না। দেখতে হবে এই সময় পর্যন্ত কতটুকু হওয়ার কথা ছিল, কতটুকু হয়েছে, সেটা আমি দেখিনি।’