বার্সাকে হারিয়ে বার্নাব্যুতে শততম ক্লাসিকো উদ্যাপন রিয়ালের
লা লিগায় আজকের দ্বৈরথের আগে ৮ ম্যাচে মাত্র ১ গোল হজম করেছিল বার্সেলোনা। এর পেছনে বার্সার গোলকিপার মার্ক আন্দ্রে টের-স্টেগেনের বীরত্বের পাশাপাশি গোল করায় তেমন দক্ষ নয় এমন কিছু দলের মুখোমুখি হওয়ার ভূমিকাও আছে।
রিয়াল ভায়োদোলিদ, কাদিজ, এলচে, রিয়াল মায়োর্কা...এসব দলকে আর যাই হোক বার্সার জালে নিশ্চিত গোল করার মতো দল বলা যায় না। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ অন্য ধাতে গড়া দল, গোল করতে জানে।
এই মৌসুমে বার্সা রক্ষণভাগের ভেতরটা কতটা মজবুত, তা ভালোভাবে বোঝা গেল আজ রিয়ালের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম ‘এল ক্লাসিকো’য়। তাতে বার্সা কোচ জাভি হার্নান্দেজের মোটেও খুশি হওয়ার কথা নয়। ৩৫ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়লে আর যাই হোক সন্তুষ্টির কিছু থাকে না।
মৌসুম শুরুর আগে ১৫ কোটি ইউরো ঢেলে স্কোয়াড শক্তিশালি করা জাভি সান্তিয়াগো বার্নাব্যু থেকে শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে ফিরতে পারেননি। হাসিটা স্বাগতিকদের মুখেই রয়ে গেছে। বলা ভালো, গত মার্চে সর্বশেষ মুখোমুখিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ৪-০ গোলে হার থেকে ঘুরে দাঁড়াল রিয়াল।
২৫০তম ক্লাসিকোয় ঘরের মাঠে বার্সাকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। প্রথমার্ধে করিম বেনজেমা এবং ফেদে ভালভের্দের করা গোল দুটি এবং বিরতির পর পেনাল্টি থেকে রদ্রিগোর গোলকে পুঁজি করে তুলে নেওয়া জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেও উঠল গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
বার্নাব্যুর টইটম্বুর গ্যালারিতে প্রথমার্ধ ছিল দারুণ উপভোগ্য। মনে রাখার মতো ফুটবল খেলেছেন রিয়াল উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস। বার্সার বক্সে প্রথম তিন টাচের দুটিতেই শট নিয়েছেন, প্রতিটি পাস ছিল নিখুঁত এবং দুটি গোলেই ছিল ভূমিকা—সেটাও ম্যাচে তাঁর প্রথম ১৪ টাচের মধ্যে! কিন্তু অন্য সব ম্যাচের মতোই প্রথমার্ধে বেশির ভাগ সময় বল দখলে রেখেছে বার্সাই। সুযোগও পেয়েছে গোলের। পার্থক্যটা হলো রবার্ট লেভানডফস্কি, উসমান দেম্বেলেরা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, বেনজেমা-ভালভের্দেরা পেরেছেন।
৪৩ মিনিটে রাফিনিয়ার ফ্রি কিক থেকে বল পেলেও রিয়াল ডিফেন্ডার দানি কারবাহলের চাপে বল পোস্টের বাইরে মারেন বার্সা স্ট্রাইকার লেভা। তার আগে ২৭ মিনিটে রিয়াল গোলকিপার আন্দ্রে লুনিনকে সুবিধাজনক অবস্থানে পেয়েও বল জালে রাখতে পারেননি দেম্বেলে। থিবো কোর্তোয়ার অনুপস্থিতিতে ক্লাসিকোয় অভিষিক্ত লুনিন ৩৭ মিনিটে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের দুর্দান্ত শট দারুণভাবে রুখেও দেন।
প্রথম ৫ মিনিটে চাপ তৈরি করে দুটি সুযোগ পেয়েছে বার্সা। তা রুখে দেওয়ার পর ১২ মিনিটে গোল আদায় করে নেয় রিয়াল। টনি ক্রুসের পাস থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢোকেন ভিনিসিয়ুস। তাঁর শট টের-স্টেগেন রুখে দিলেও ফিরতি বলে শট নিয়ে গোল করেন বেনজেমা। কাল ব্যালন ডি’অর দেওয়ার আগে এই গোলে বেনজেমা যেন আবারও মনে করিয়ে দিলেন, এমন ফর্মেই তাঁকে দেখা গেছে গত মৌসুমেও।
রিয়াল দ্বিতীয় গোলটি পেয়েছে ভিনিসিয়ুস ও ফাঁরলা মেন্দির সমন্বয় থেকে। ভিনি বক্সে ঢুকে বাঁ প্রান্তে পাস বাড়ান মেন্দিকে। ফরাসি তারকা পাস বাড়ান সুবিধাজনক জায়গায় দাঁড়ানো ভালভার্দেকে। তাঁর শটের জবাব ছিল না টের-স্টেগেনের কাছে। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। বিরতির পর বার্সা যখন হারের চোখ রাঙানি দেখছে এবং ম্যাচও প্রায় শেষের দিকে তখন গোল করে জাভির দলকে ম্যাচে ফেরানোর আশা জাগিয়ে তোলেন ফেরান তোরেস। তবে ম্যাচের শেষ দিকে বার্সাকে জাগিয়ে তুলেছেন ৭৩ মিনিটে দেম্বেলের বদলি হয়ে নামা আনসু ফাতি। স্পেন ফরোয়ার্ড ৭৮ মিনিটে প্রথম চেষ্টা থেকে প্রায় গোলই করে ফেলেছিলেন!
দ্বিতীয়ার্ধে সেটি ছিল রিয়ালের পোস্টে বার্সার প্রথম আক্রমণ। তখনই মনে হচ্ছিল, বার্সা গোল পেলেও পেতে পারে। ফাতি নামার পর বার্সার আক্রমণভাগ যেন আড়মোড়া ভেঙেছে। সেই ধারাবাহিকতা থেকেই ৮৩ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে একক প্রচেষ্টায় বক্সে ঢুকে ক্রস করেন ফাতি। ডান প্রান্তে দাঁড়ানো তোরেস বল জালে পাঠান।
নির্ধারিত সময়ের ৩ মিনিট আগে ফাতির ভলি রিয়ালের পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। কিন্তু ম্যাচে নাটকের তখনো বাকি ছিল। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে পেনাল্টি পায় রিয়াল। রদ্রিগোকে বক্সে ফাউল করেন বার্সা ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া। ভিএআর দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি এবং স্পটকিক থেকে গোল করেন রদ্রিগো। বার্নাব্যুতে এটি ছিল শততম প্রতিযোগিতামূলক ক্লাসিকো—৫১তম জয় তুলে নিল রিয়াল।
এই জয়ে ৯ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠল রিয়াল। সমান ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে নেমে গেল বার্সেলোনা।