ফেডারেশন কাপ: আবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনালে মোহামেডান
এক বছর আগে এই মে মাসেই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে প্রত্যাবর্তনের দুর্দান্ত গল্প লিখে শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মাঝের এ সময়ে আলফাজ আহমেদের দল পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আরও বেশ কয়েকটি ম্যাচে। সেই ধারায় আজ ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালেও ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনালে ওঠার গল্প লিখল মোহামেডান।
মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে পিছিয়ে পড়েও বাংলাদেশ পুলিশ এফসিকে ২–১ গোলে হারিয়ে এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো কাপ টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল মোহামেডান। সর্বশেষ ফেডারেশন কাপ, এরপর স্বাধীনতা কাপ এবং আজ ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠল আলফাজ আহমেদের দল।
ম্যাচে আগাগোড়াই মোহামেডানের প্রাধান্য ছিল। প্রথমার্ধে গোলটাই শুধু করতে পারেনি মোহামেডান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে (৪৮ মিনিটে) পুলিশের ভেনেজুয়েলিয়ান ফরোয়ার্ড এডওয়ার্ড মরিয়ভের ফ্রি–কিক থেকে আচমকাই গোল করে বসেন উজবেক ফরোয়ার্ড ওকতামোভ। হতবাক মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন এরপরই। একের পর এক আক্রমণে পুলিশকে দিশাহারা করে দিয়ে ইমানুয়েল সানডের গোলে সমতায় ফেরে তারা ৬৮ মিনিটে। ৭৮ মিনিটে সেই সানডেই জয়সূচকগোলটি করিয়েছেন শাহরিয়ার ইমনকে দিয়ে।
প্রথমার্ধে মোহামেডানের প্রাধান্য থাকলেও গোলের সুযোগ সেভাবে তৈরি হয়নি। সোলেমান দিয়াবাতে, সানডেরা ছোটখাটো কিছু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। পুলিশও সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেছে। মাঝেমধ্যে মোহামেডানের রক্ষণে ফাটলও ধরাতে পেরেছে তারা, কিন্তু গোল পায়নি। মোহামেডানের রক্ষণভাগের কামরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, ইমানুয়েল টনিরা বারবারই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
মধ্যমাঠ ছিল পুরোপুরি মোহামেডানের দখলে, সেটি উজবেক মিডফিল্ডার মোজাফফরভের মাধ্যমেই। রাইট উইংয়ে আরিফ ছিলেন দুর্দান্ত, বারবার তিনি পুলিশের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করেছেন। নিচ থেকে উঠে হাসান মুরাদ আক্রমণে সহায়তা করেছেন। ইমন গোটা ম্যাচেই ভালো খেলেছেন। তবে আক্রমণে সানডে আজ ছিলেন দুর্দান্ত। তাঁর দুর্ভাগ্য, আরও দুটি গোলের সুযোগ পেয়েও করতে পারেননি।
পুলিশের প্রথম গোলটি আসে ৪৮ মিনিটে। মাঠের ডানপ্রান্ত থেকে মরিয়ভের ফ্রি–কিক মোহামেডানের বক্সে উড়ে এলে জটলার মধ্য থেকেই হেড করে গোল করেন ওকতামোভ। ১–০ গোলে এগিয়ে গিয়ে পুলিশ অবশ্য আক্রমণের ধার বাড়ায়নি।
মোহামেডানের আক্রমণাত্মক ফুটবলের জন্যই সেটি তারা পারেনি। ‘সাদা–কালো’দের খেলা দেখে মনে হয়নি তাঁরা ম্যাচে ফিরতে পারবে না। তবে এ সময় নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট হয়। ৫৫ মিনিটে সানডে প্রায় ফাঁকা পোস্টে বল ঠেলে দিলেও সেটি কয়েক ইঞ্চির জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এর আগে ৫৩ মিনিটে মোজাফফরভের দুর্দান্ত একটি শট পুলিশের গোল কিপার আহসান হাবীব দারুণভাবে ‘ফিস্ট’ করে রক্ষা করেন।
একের পর এক আক্রমণে মোহামেডান ম্যাচে সমতায় ফেরে ৬৮ মিনিটে। আরিফের ক্রস থেকে সানডে কোনো সুযোগই দেননি পুলিশের রক্ষণভাগকে। সমতার ফেরার পর মোহামেডান আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সেই ধারায় ৭৮ মিনিটে সানডে গোলে সহায়কের ভূমিকায়—তাঁর ক্রস থেকে বক্সে পুলিশের ডিফেন্ডারদের মধ্য থেকে লাফিয়ে হেড করে গোল করেন ইমন। ২–১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরও মোহামেডান আক্রমণ চালিয়ে গেছে। গোলের সম্ভাবনা তৈরি করেছে বেশ কয়েকটি। পুলিশও চেষ্টা চালিয়েছে সমতাসূচক গোল করে খেলাটিকে অতিরিক্ত সময়ে নিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলটা তারা পায়নি।
আগামী মঙ্গলবার গোপালগঞ্জে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনী লিমিটেড।