এমবাপ্পে–জাদু দেখার অপেক্ষায় প্যারিস
এ মুহূর্তে কেউ প্যারিসে গেলে চমকে উঠতে পারেন। মনে হতে পারে, প্যারিস নয়, পথ ভুলে চলে এসেছেন পিএসজি নামে ফুটবলের কোনো শহরে। কেউ যদি এমন মনে করেন, তাঁকে কোনোভাবেই দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। গোটা শহরেই যে এখন ফুটবলের রং লেগেছে। প্যারিসের স্মৃতিস্তম্ভগুলো এখন যেন পিএসজিময়। গোটা শহর প্রস্তুতি নিচ্ছে মহাগুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচের।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের এই ম্যাচে আজ রাতে পিএসজি আতিথ্য দেবে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে। প্রথম লেগে ডর্টমুন্ডের মাঠে ১-০ গোলে হেরেছে পিএসজি। ফাইনালে যেতে আজ রাতে পিএসজির তাই জিতলেই শুধু হবে না; বরং ব্যবধানটা হতে হবে একাধিক গোলের। কাজটা পিএসজির জন্য কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।
ডর্টমুন্ড ম্যাচ সামনে রেখে প্যারিসে উৎসবের প্রস্তুতি কি কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে? উৎসবধ্বনির মধ্যে নিজের বিদায়ের সুরটাও কি শুনতে পাচ্ছেন তিনি? শুনলে সেটি মোটেই অস্বাভাবিক নয়। ২০১৭ সালে মোনাকো ছেড়ে পিএসজিতে আসেন এমবাপ্পে। এরপর গত কয়েক বছরে হয়ে উঠেছেন ‘ডার্লিং বয় অব প্যারিস’। ২০১৮ সালে তিনিই সোনার বিশ্বকাপটা বয়ে মস্কো থেকে প্যারিসে নিয়ে এসেছিলেন।
এরপরও এমবাপ্পের ওপর প্যারিসবাসীর অভিমান কম নয়! শহরের ক্লাবটিকে যে কখনো ইউরোপ–সেরা বানাতে পারেননি এমবাপ্পে। এবার না পারলে হয়তো কখনোই আর নয়! এ মৌসুম শেষেই যে তাঁর পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার জোর গুঞ্জন। খবরটি আনুষ্ঠানিক না হলেও ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো খবরটির ওপর সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছে। প্যারিসবাসীর মুখে হাসি ফোটানোর এটাই তাই এমবাপ্পের শেষ সুযোগ।
ডর্টমুন্ডের মাঠে প্রথম লেগের ম্যাচটাতেও সবাই তাকিয়ে এমবাপ্পের দিকে। কিন্তু সেদিনের ম্যাচে ফরাসি তারকাকে ম্লান করে সব আলো নিজের দিকে টেনে নেন ডর্টমুন্ডের ইংলিশ ফরোয়ার্ড জেডন সানচো। ম্যাচজুড়ে পিএসজি খেলোয়াড়দের নিয়ে একাই নাকাল করে ছেড়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ব্রাত্য হয়ে পড়া সানচো।
সেদিন পারেননি এমবাপ্পে, কিন্তু আজ না পারার সুযোগ নেই! আজ না পারা মানে পিএসজিতে এমবাপ্পে–অধ্যায় ব্যর্থতায় শেষ হওয়া। অসংখ্য ম্যাচে প্যারিসকে আনন্দে মাতিয়ে তোলা এমবাপ্পে হয়তো নিজের এমন হতাশাজনক পরিণতি দেখতে চাইবেন না। বিদায়ের আগে প্যারিসবাসীকে তাঁদের শেষ উপহারটুকু দিয়ে যেতে চাইবেন।
শুধু এমবাপ্পেই নন, প্যারিসের এ ম্যাচে জীবন বাজি নিয়ে লড়তে চান বাকিরাও। গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা বলেছেন, ‘আমরা সবকিছু উজাড় করে দেব। আমি জানি, দলের সবাই ফাইনালে যেতে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলবে।’
প্রথম লেগে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন কাজটা অবশ্য পিএসজি এর আগেও করেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে নিজেদেরই মাঠে ৩-২ গোলে হেরে গিয়েছিল পিএসজি। আর দ্বিতীয় লেগে সেই বার্সাকে তাদের মাঠে ৪-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে পিএসজি। সেই স্মৃতিই এখন আরেকবার ফিরিয়ে আনার অপেক্ষা। পিএসজি অধিনায়ক মার্কিনিওসও একই কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমরা এটা করতে পারি। আমরা এর মধ্যে কাজটা করে দেখিয়েছি। আমরা সমর্থকদের গর্বিত করতে চাই। আমাদের হারানোর কিছু নেই।’
এই ম্যাচে পিএসজির বড় শক্তি হয়ে থাকবেন তাদের সমর্থকেরা। ম্যাচ শুরু হওয়ার প্রায় দুই দিন আগে থেকেই প্যারিসকে জাগিয়ে তুলেছেন তাঁরা। ম্যাচের সময় দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে দলকে উজ্জীবিত করে যাবেন এ সমর্থকেরা। ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সমর্থকদের পাশে চাইলেন কোচ লুইস এনরিকেও, ‘সমর্থকেরা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরো মৌসুমের মতো এবারও তাঁরা পুরোপুরিভাবে আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’
পিএসজি উৎসবের প্রস্তুতি সেরে রাখলেও তাদের সেই আয়োজন পণ্ড করার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই আজ প্যারিসে খেলতে নামবে ডর্টমুন্ড। ঘরের মাঠে জিতে অর্ধেক কাজ তো সেরেই রেখেছে তারা, এখন পিএসজির কাছে কোনোভাবে হার এড়াতে পারলেই হয়। সেটি করতে পারলে ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করার পাশাপাশি এমবাপ্পের বিদায়–উৎসবেও পানি ঢেলে দিতে পারবে জার্মানির হলদে পাখিরা।