আর মাত্র দুই দিনের অপেক্ষা। বাংলাদেশ সময় আগামী শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হচ্ছে কোপা আমেরিকা। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের এই আসরের উদ্বোধনী ম্যাচেই কানাডার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা।
শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে নামার আগে আর্জেন্টাইন সাংবাদিক মার্সেলো তিনেল্লিকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন লিওনেল মেসি। সাক্ষাৎকারে এবারের কোপা আমেরিকার ফেবারিট, ইউরোপ থেকে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমানো, অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফেরা, মায়ামিতে তাঁর জীবনযাপন, পরিবারসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন মেসি।
কোপা আমেরিকা, লা ফিনালিসিমা ও বিশ্বকাপ জয়
এত অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু জিততে পারা মনে প্রশান্তি দেয়। এগুলো এমন কিছু, যা আমাদের প্রাপ্য ছিল এবং পেয়েছিও।
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে হার
আমি মনে করি সবকিছু কোনো না কোনো কারণে ঘটে এবং সবকিছু লেখা হয়। সৃষ্টিকর্তা হয়তো তখন (২০১৪ সালে) চাননি, তাই হয়নি। সৃষ্টিকর্তার হয়তো মনে হয়েছে আমার জন্য যদি এটি হতে হয়, তাহলে এখনই (২০২২ কাতার বিশ্বকাপ) হবে। তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবেই হয়েছে। ক্যারিয়ারজুড়ে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি, তার জন্য সব সময় কৃতজ্ঞ। সবাই চেয়েছিল আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন না হয়ে যেন ফুটবল ছেড়ে না দিই। আমাকে সবকিছু উপহার দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। তবে যখন ক্যারিয়ার শুরু করি, তখন কল্পনাও করিনি আমার স্বপ্নের চেয়েও বেশি অর্জন করব।
ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে ফুটবলকে যেভাবে দেখছেন
আমি এখন খেলাটিকে অনেক বেশি উপভোগ করছি। এই আবেগ কখনো কখনো দীর্ঘ হয়, একদম চিরন্তন। তবে কাজটা কঠিন। কিন্তু যখন দেখি আমি একটি দারুণ দলে খেলছি, সবার সঙ্গে মিশতে পারছি, তখন আরও ভালো লাগে। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে মজা করি, নিজেদের মতো করে উপভোগ করি। এসবের মধ্যেও ক্রমাগত চিন্তা মাথায় আসে। ম্যাচের পর ম্যাচ, সামনে কী হতে চলেছে, কঠোর অনুশীলন, নিজেকে চাঙা করে তোলা এবং আবার প্রতিযোগিতায় নেমে যাওয়া। ব্যাপারগুলোকে এখন একটু ভিন্নভাবে দেখি।
২০১৬ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর এবং ফিরে আসা
যে কারও জীবনে এমন কঠিন সময় আসতে পারে। তবে আমি আমার পরিবারের ইচ্ছা জানতাম, যা আমার চেয়েও বড় ছিল—আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হব, একদিন এটা সত্যি হবে। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনদের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার পরিবারের মনে হচ্ছিল, আমরা (বিশ্বকাপ) পেয়ে গেছি। আর কিছু না জিতলেও চলবে।
মেজর লিগ সকার ও ইউরোপীয় ফুটবলের পার্থক্য
এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) সাধারণত সপ্তাহে একটার বেশি ম্যাচ খেলতে হয় না। তাই জীবন নিয়ে ভাবার অনেক সময় পাওয়া যায়। ইউরোপে সেই সুযোগ ছিল না। বাইরে বের হও, নিজের যত্ন নাও, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নাও, ভালো খাওয়াদাওয়া করো এবং আবার মাঠে নেমে পড়ো। এরপর যদি প্রত্যাশিত ফল না পাই, তাহলে ওই সপ্তাহের সবকিছু কেড়ে নেওয়া হবে। কিন্তু এখানে একটু বেশি স্বাধীনতা পাওয়া যায়। অবশ্যই এখানেও আমরা সব ম্যাচ জিততে চাই।
তিন সন্তানের কে কেমন
আমার তিন সন্তানের মধ্যে কোনো মিল নেই। আমি থিয়াগোর (বড় ছেলে) খেলা দেখি। থিয়াগোও চায় খেলার সময় আমি যেন ওর পাশেই থাকি। সে বাইরে অনেক বেশি সংবেদনশীল। ওকে যদি কিছু বলা হয়, তাহলে সহজেই হজম করে ফেলে। যেহেতু (আমার তিন সন্তানের মধ্যে) সে বড়, তাই এখন সবকিছু বুঝতে শিখেছে। কোনো ভুল করলে আমাকে খুঁজতে থাকে। মাতেওকে (মেজ ছেলে) যেকোনো কিছু বলা যায়। ইতিবাচক বা নেতিবাচক যে কথাই বলি, সে একইভাবে নেয়। আর চিরো (ছোট ছেলে) একদম আমার মতো। সে আমার সব রকম স্বভাব পেয়েছে। বিষয়টি আমি আন্তোকেও (স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জো) বলি।
এবারের কোপা আমেরিকায় ফেবারিট
আমি সব সময় বলে এসেছি আর্জেন্টিনাই ফেবারিট। মনে করা হয়, আমরা সব সময় সেরা খেলাটাই খেলছি। আমরা সমালোচনার স্বীকার হলেও এ ব্যাপারে প্রশ্নের কোনো সুযোগ নেই। আজ আমি বলতে পারি, আমরাই সেরা। কারণ, আমরা সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এবারও আমরা হেসেখেলে জিতে যাব। ইকুয়েডরের এই প্রজন্মের ফুটবলাররা খুব ভালো করছে। তারা শারীরিকভাবে শক্তিশালী। কলম্বিয়া, উরুগুয়েও ভালো দল। ব্রাজিলের কথা না বললেও চলছে। নেইমারের না থাকা ব্রাজিলের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার। তবে ওদের খেলোয়াড়ের অভাব নেই। নেইমার খুব কঠিন একটি বছর পার করছে। (চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না ওঠায়) সে এখানে খেলতে আসতে পারেনি। সে না থাকলেও ব্রাজিল খুবই শক্তিশালী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল। শক্তিমত্তায় ব্রাজিল দলটা আর্জেন্টিনার মতোই। ওরা শিরোপার দাবিদার এবং ওরা কোপা আমেরিকা জিততে চাইবে।