বিবাহ বিচ্ছেদের গুঞ্জন ও ঘর ছাড়া নিয়ে যা বললেন ১১ সন্তানের পিতা রবার্তো কার্লোস

স্ত্রী মারিয়ানা লুক্কনের সঙ্গে রবার্তো কার্লোসএএফপি

রিয়াল মাদ্রিদের অনুশীলনকেন্দ্র ভালদেবেবাস। গত রোববারের কথা। কোপা দেল রেতে দেপোর্তিভোর মিনেরা ম্যাচ সামনে রেখে সেদিন প্রস্তুতি সারছিলেন রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। একজন বিশেষ অতিথিকে নিয়ে আসা হলো তাঁদের মধ্যে। রিয়ালেরই কিংবদন্তি ও ক্লাবটির দূত রবার্তো কার্লোস। খেলোয়াড়দের সঙ্গে কুশলাদী বিনিময় করে কিংবদন্তি চলে গেলেন। কিন্তু বিতর্ক পড়ে রইল।

আরও পড়ুন

স্পেনের সংবাদমাধ্যম এস্তাদিও দেপোর্তিভো গত সোমবার জানিয়েছে, ব্রাজিলিয়ান নারী মারিয়ানা লুক্কনের সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছরের দাম্পত্যজীবনের অবসান ঘটাতে যাচ্ছেন কার্লোস। আবেদন করেছেন বিবাহবিচ্ছেদের।

২০০৯ সালে লুক্কনকে বিয়ে করেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেফট ব্যাক। স্পেনের টিভি অনুষ্ঠান ‘ফিয়েস্তা’ এক দিন আগে এস্তাদিও দেপোর্তিভোকে একই ইঙ্গিত দেয় বলে জানায় সংবাদমাধ্যমটি।

ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ ও রিয়ালের হয়ে তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী কার্লোসের বিবাহবিচ্ছেদ প্রক্রিয়া একটু জটিল। সেটি তাঁর ১৬ কোটি ইউরো সমমূল্যের সম্পত্তির কারণে। ‘ফিয়েস্তা’র সূত্র মারফত সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কার্লোসের স্ত্রীর আত্মীয়রা এখন তাঁর ভূসম্পত্তিতে বসবাস করছেন। আর লুক্কন বসবাস করছেন কার্লোসের মূল বাড়িটিতে। এ কারণে রিয়ালে ১১ মৌসুম কাটানো এই সাবেক ফুটবলার সেই বাসা ছেড়ে চলে এসেছেন ভালদেবেবাসে। অর্থাৎ রিয়ালের অনুশীলনকেন্দ্রে এখন অস্থায়ীভাবে দিন কাটছে কার্লোসের।

ছবিটি ১৯৯৮ বিশ্বকাপের। ব্রাজিলের হয়ে ২০০২ বিশ্বকাপ জিতেছেন রবার্তো কার্লোস
এএফপি

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের এই প্রতিবেদনের পর স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার ঝড় ওঠা স্বাভাবিক। ব্যাপারটি কার্লোসের কান পর্যন্তও গড়ানোর পর কিংবদন্তি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনকে মিথ্যা দাবি করে কার্লোস আজ একটি পোস্ট দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে।

আরও পড়ুন

স্পেনেরও নাগরিকত্ব পাওয়া কার্লোস লিখেছেন, ‘আমার ও আমার পরিবার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মিথ্যা ও ক্ষতিকর গল্পগুলো চোখে পড়েছে। আমি গোপনীয়তাকে মূল্য দিই। আমার বর্তমান বসবাসের পরিস্থিতি নিয়ে ভিত্তিহীন গুঞ্জন ওঠার কারণেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। এই বানানো গল্পগুলো একদমই মিথ্যা ক্লিক পাওয়ার জন্য করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত বসবাসের জায়গাতেই থাকছি, আমার পরিবারের লোকজনও পাশেই আছে। আমার আইনজীবীরা দাবিগুলো মূল্যায়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ জানাই এবং এই সময়ে যাঁরা সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।’

লুক্কনের সঙ্গে দুটি সন্তান আছে ৫১ বছর বয়সী কার্লোসের। তাঁর স্ত্রীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট নেই। তবে ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকির বিজ্ঞাপনে বেশ কয়েকবার অংশ নিয়েছেন। ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিওর বন্ধু কার্লোস রমনীমোহন হিসেবেও বেশ আলোচিত। ২০১৫ সালে স্পেনের সাংবাদিক জোসেপ পেদ্রেরোরলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্লোস স্বীকার করেছিলেন, তিনি ১১ সন্তানের পিতা, ‘এখন মানুয়েলার (কার্লোস–লুক্কান দম্পত্তির মেয়ে) সঙ্গে আছি, এর বাইরেও বেশ কিছু (সন্তান) আছে। ব্রাজিলে আছে ৭ জন, মেক্সিকোতে আছে ১ জন, হাঙ্গেরিতেও ১ জন আছে যে আলিকান্তেতে (স্পেনের শহর) বসবাস করে আর বাকিরা ব্রাজিলে বসবাস করে।’

হিসাবটি একটু মিলিয়ে নেওয়া যাক। লুক্কন ও কার্লোসের বর্তমান ঘরে সন্তানসংখ্যা ২ জন। এর বাইরে ব্রাজিলে ৭ জন, মেক্সিকো ও হাঙ্গেরিতে ১ জন করে মোট ১১ জন সন্তানের পিতা কার্লোস। কেউ কেউ মজা করতে বলতেও পারেন, একটি ফুটবল একাদশই তো গড়ে ফেলা সম্ভব!

আরও পড়ুন

এই ১১ সন্তানের মধ্যে প্রথম স্ত্রী আলেক্সান্দ্রা পিনহেইরোর ঘরে জন্ম নিয়েছেন তিন সন্তান—রোবের্তা, জিওভান্না ও রবার্তো কার্লোস জুনিয়র। যদিও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এল মুন্দো’র দাবি কার্লোস জুনিয়রকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। সে যা হোক, ১২ বছর দাম্পত্যজীবনের পর ২০০৩ সালে পিনহেইরোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় কার্লোসের। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম লা গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্টকে এর আগে কার্লোস একবার মজা করে বলেছিলেন, ‘আমার স্ত্রী মাত্র দুজন। অন্য যাদের সঙ্গে সন্তান হয়েছে, সেটা গণনা করা আরও কঠিন।’

স্ত্রী লুক্কন ও মেয়ে ম্যানুয়েলার সঙ্গে কার্লোস
কার্লোসের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’ জানিয়েছে, কার্লোসের বাকি সন্তানের পরিচয় অজানা। তবে এল মুন্দোর দাবি, ব্রাজিলিয়ান আইনজীবী আলেসান্দ্রা মার্তিন্স কার্লোসের সন্তান লুকার মা। সাংবাদিকতার ছাত্রী ব্রাজিলিয়ান সিমোন হামিলকো ২০০৩ সালে এসেছিলেন কার্লোসের জীবনে। তাঁর সন্তান কার্লোস এদুয়ার্দোর মা হামিলকো।

সাবেক প্রেমিকা বারবারা থার্লারও দুটি সন্তানের জন্ম দেন। নাম বের্নার্দো ও বেতিনা। থার্লারের সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে গড়িমসি করায় ২০১৭ সালে আদালত তাঁকে তিন মাস কারাদণ্ডও দিয়েছিলেন। হাঙ্গেরির সুপার মডেল আলেক্সান্দ্রা ফেদরার গর্ভ থেকে ক্রিস্টোফার এবং মেক্সিকোর দোরা রোবলেসের গর্ভ থেকে রেবেকা কার্লার জন্ম নেয়।

আরও পড়ুন

২০১৮ সালে স্পেনে শিশুদের টিভি অনুষ্ঠান ‘এল হোরমিগুয়েরো’তে ব্রাজিল ও রিয়ালের সাবেক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হুলিও বাপতিস্তাকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন কার্লোস। সেখানে কার্লোসকে দেখিয়ে সঞ্চালক পাবলো মোতোসকে বাপতিস্তা বলেছিলেন, ‘বদলিসহ একটি ফুটসাল দল গঠনের জন্য যথেষ্ট (সন্তান) তার আছে।’
কার্লোসের ছেলে ক্রিস্টোফারের বয়স এখন ২২ বছর। বাবার পথ অনুসরণ করেই ক্রিস্টোফার ফুটবলার হয়েছেন। রিয়ালের তরুণ খেলোয়াড়দের বেড়ে ওঠার দল সিডি কানিয়াসে খেলছেন। ২৭ বছর বয়সী জিওভান্না ২০১৭ সালে সন্তানের জন্ম দেওয়ায় কার্লোস ৪৪ বছর বয়সে নানাও হয়েছেন।

ব্রাজিলের সাবেক স্ট্রাইকার রোনালদোর সঙ্গে রবার্তো কার্লোস
রয়টার্স

মারিয়ানা লুক্কন কার্লোসের জীবনে আসার আগে ব্রাজিলিয়ান মডেল জেন বোর্হেসের সঙ্গেও মন দেওয়া–নেওয়া ছিল তাঁর। তবে কার্লোস সম্ভবত যত নারীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, রোনালদোর সঙ্গে সময় কেটেছে তার চেয়ে বেশি। দাবিটা অবশ্য রোনালদোরই। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক এই স্ট্রাইকার একবার বলেছিলেন, ‘জীবনে যত নারী এসেছে, তার চেয়ে রবার্তো কার্লোসের সঙ্গে অনুশীলন ক্যাম্পে একই কামরায় বেশি রাত কাটিয়েছি।’

বটে। ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলারদের জীবন বলে কথা!