ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২: ১ লিভারপুল
প্রথম দুই ম্যাচেই হার। ছন্নছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে আশায় বসতি গড়তেও ভয়ে ছিল দলটির সমর্থকেরা। লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তো মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার কর্মসূচি দিল দলটির সমর্থক গোষ্ঠী। সোমবার রাতে ম্যাচের আগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে সেই বিক্ষোভ তাঁরা করেছেনও।
এই দুঃসময়ে ঐক্যর ডাক দিয়েছিলেন মার্কাস রাশফোর্ড। ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড সবকিছু ভুলে মাঠে এক হয়ে লড়াই করতে বলেছিলেন সতীর্থদের। রাশফোর্ড দাবি করেছিলেন লিভারপুলের মতো প্রবল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটি ঠিক সময়েই এসেছে। ২৪ বছর বয়সী ফুটবলার বলেছিলেন দুঃসময় থেকে বেরোতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে লিভারপুলের ম্যাচের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!
রাশফোর্ডের কথা ফলেছে। আগের ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ৪–০ গোলে হারা ইউনাইটেড ঘরের মাঠে হারিয়ে দিয়েছে লিভারপুলকে। এরিক টেন হাগকে লিগে প্রথম জয়ে এনে দেওয়া ইউনাইটেড জিতেছে ২–১ গোলে। গোল দুটির একটি আবার করেছেন সেই রাশফোর্ড। ১৬ মিনিটে জেডন সাঞ্চোর দারুণ এক গোলে এগিয়ে যাওয়া ইউনাইটেডের গোল ৫৩ মিনিটে দ্বিগুণ করেছেন রাশফোর্ড। জয়টা অবশ্য সহজে আসেনি। ৮১ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহর গোলে ব্যবধান কমানো লিভারপুল চেষ্টা করে গেছে শেষ পর্যন্ত।
তৃতীয় ম্যাচে পাওয়া প্রথম জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তলানির ‘তিন’ থেকে উঠে এসেছে ইউনাইটেড। ম্যাচ শেষে রাশফোর্ডরা আছেন ১৪ নম্বরে। দুঃসময় কাটানোর ইঙ্গিত দিয়ে ফেলল ইউনাইটেড। তবে ক্লপের লিভারপুলের দুঃসময় আরেকটু লম্বাই হলো এই হারে। তিন ম্যাচে শেষে জয়হীন দলটি ২ পয়েন্ট নিয়ে পড়ে আছে পয়েন্ট তালিকার ১৬তম স্থানে।
লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচটি ইউনাইটেড খেলতে নামে পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে। সিআরসেভেনকে ছাড়া খেলতে নামা দলটি এগিয়ে যেতে পারত ১০ মিনিটেই। সুইডিশ উইঙ্গার অ্যান্থনি এলাঙ্গার নেওয়া শট আলিসনকে পরাস্ত করলেও ফাঁকি দিতে পারেনি সাইড পোস্টকে।
৬ মিনিট পরে সাঞ্চোর সেই গোল। ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের সঙ্গে বল আদানপ্রদান করা এলাঙ্গা লিভারপুলের বক্সে ক্রস দেন। সাঞ্চো বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডামি করে এলোমেলো করে দেন লিভারপুল রক্ষণকে। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় বল পাঠিয়ে দেন জালে। সাঞ্চোর গোলটিসহ লিগে টানা সাত ম্যাচে প্রথম গোল খেল লিভারপুল।
প্রথমার্ধেই ব্যবধানটা দ্বিগুণ করতে পারত ইউনাইটেড। সেটি হয়নি লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসনের কারণে। ২৫ মিনিটে ডেনিস তারকা ক্রিস্টিয়ান এরিকসনের দুর্দান্ত ফ্রিকিকটা আলিসনের আঙুলের ছোঁয়া না পেলে ঢুকেই যেত জালে।
ম্যাচটি যে লিভারপুলের হবে না সেই ইঙ্গিতটা পাওয়া গেল ম্যাচের ৪০ মিনিট। গোল খাওয়ার পর একের পর এক আক্রমণে ইউনাইটেড রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে ফেলে লিভারপুল। চাপে পড়েই কি না ইউনাইটেড অধিনায়ক ব্রুনো ফার্নান্দেজ আত্মঘাতী গোল প্রায় করেই বসেছিলেন। কী করে যেন গোললাইনে দাঁড়ানো আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার লিসান্দ্রো মার্তিনেজের শরীরে লেগে দিক পরিবর্তন করে বল।
গোল শোধে মরিয়া লিভারপুল উল্টো দ্বিতীয় গোলটি খেয়ে যায় পাল্টা এক আক্রমণে। জর্ডান হেন্ডারসনের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে যান বদলি নামা অ্যান্থনি মার্শিয়াল। ফরাসি তারকার পা ঘুরে বল পেলেন রাশফোর্ড। বল জালে জড়াতে যথেষ্ট সময়ই পেয়েছিলেন দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে সুসময়ে ফিরতে মরিয়া ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
৮১ মিনিটে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার–আরনল্ডের কর্নারে ইউনাইটেড রক্ষণের তালগোল পাকানোর সুযোগে সালাহ যখন হেডে গোলটি পেয়ে গেলেন, একটু ভয় পেয়েই গিয়েছিলেন ইউনাইটেড সমর্থকেরা। উত্তেজনায় পায়চারি শুরু করেছিলেন কোচ টেন হাগও। মাদ্রিদে থেকে উড়ে গিয়ে গ্যালারিতে বসে নুতন দলের খেলা দেখা ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কাসেমিরোও হয়তো একটু বিচলিত হয়েছিলেন! কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে হাসিমুখেই ফিরতে পেরেছেন প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখা কাসেমিরো।
প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারানোর পর এবার যদি ইউনাইটেড সমর্থকদের রাগ একটু কমে!