ফিক্সিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে অঝোরে কাঁদলেন দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার

সংবাদ সম্মেলনে আবেগাপ্লুত দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলার সন জুন-হোএএফপি

জুয়ায় অংশ নেওয়া ও ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় সম্প্রতি ৪৩ জনকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চায়নিজ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (সিএফএ)। নিষিদ্ধের সেই তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলার সন জুন-হোও আছেন।

তবে ৩২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উল্টো চীন তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করেছে বলে দাবি তুলেছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সন ২০২১ থেকে ২০২৩ মৌসুম পর্যন্ত চায়নিজ সুপার লিগের ক্লাব শানডং তাইশানের হয়ে খেলেছেন। সে সময় তিনি ম্যাচ ফিক্সিং করেছিলেন এবং ঘুষ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ এনেছিল সিএফএ।

সনের দাবি, চীনের পুলিশ তাঁকে ভয় দেখিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়েছে
এএফপি

২০২২ কাতার বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে মাঠে নেমেছিলেন সন। বিশ্বকাপ শেষে চীনে ফেরার পর ২০২৩ সালের মে মাসে এই মিডফিল্ডারকে আটক করা হয়। ১০ মাস জেল খাটার পর এ বছরের মার্চে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

অশ্রুসিক্ত সন গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের ঘটনার তাঁর জন্য ছিল বিশাল এক ধাক্কা। সনের দাবি, পুলিশ তাঁকে ভয় দেখানোয় নিরপরাধ হয়েও তিনি সব দোষ স্বীকার করেছেন, ‘চীনের পুলিশ আমাকে হুমকি দিয়েছিল এবং দোষ স্বীকার করতে বাধ্য করেছিল। তারা আমার পরিবার ও সন্তানদের দর-কষাকষির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিল।’

চীনা পুলিশ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে হাস্যকর অভিযোগ উপস্থাপন করেছে জানিয়ে সন আরও বলেন, ‘তারা আমাকে এটা বলে হুমকি দেয় যে আমি যদি সব অভিযোগ স্বীকার না করি, তাহলে আমার স্ত্রীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে একই কারাগারে নিয়ে আসবে এবং আমার সঙ্গে তারও বিচারের ব্যবস্থা করবে।’

চোখের জল মুছছেন সন
এএফপি

চীনে দুই মৌসুম খেললেও সে দেশের ভাষা (মান্দারিন) শেখা হয়নি সনের। তাই চীনাদের কথা বুঝতে তিনি কোরিয়ান ভাষায় অনুবাদ করতেন। কিন্তু সনের দাবি, কারাবন্দী থাকা অবস্থায় তাঁকে কোরিয়ান ভাষায় পর্যাপ্ত অনুবাদ এবং আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যখন তিনি বুঝতে পারেন যে চীনা পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করছে, তখন হতবাক হয়ে পড়েছিলেন।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে টিস্যু পেপার দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে সে কথাই বলেছেন সন, ‘আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনতে যাচ্ছ—এ ধরনের কোনো কিছু আমি করিনি।’

সন আরও বলেন, ‘তারা আমার ফোন হাতে নিয়ে আমার মেয়ে ও ছেলের ছবি দেখাতে লাগল এবং এই বলে আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করল যে, “যদি তোমার স্ত্রীকেও এখানে নিয়ে আসি, তাহলে তোমার সন্তানদের কে দেখাশোনা করবে? তুমি কি চাও না সন্তানেরা তাদের বাবাকে দেখুক। তাই দ্রুত দোষ স্বীকার করো।”’

সুইমিং পুলে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সন
ইনস্টাগ্রাম

দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে ২০টি ম্যাচ খেলা সন জানান, চীনা পুলিশ তাঁকে একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। তাঁকে বলা হয়েছিল, যদি তিনি দোষ স্বীকার করেন, তাহলে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হবে, ‘আমি ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম এবং পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। তাই অভিযোগ স্বীকার করা ছাড়া উপায় ছিল না। আমি শুধু পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়েছিলাম।’

অপরাধ না করে দোষী সাব্যস্ত হলেও তাঁর ওপর কলঙ্কের দাগ লেগেছে বলে মনে করেন সন। তিনি সেই দাগ মুছে ফেলতে চান, ‘আমি সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে আমার নাম পরিষ্কার করতে চাই। তাদের কাছে একমাত্র প্রমাণ ছিল আমার মিথ্যা স্বীকারোক্তি, যা তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুব কৌশলে আমার ওপর তীব্র চাপপ্রয়োগ করে আদায় করেছিল।’

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে সন জুন-হোয়ের এজেন্ট পার্ক দায়ে-ইয়েওনও ছিলেন। পার্কের বিশ্বাস, সিএফএ সনকে আজীবন নিষিদ্ধ করলেও ফিফা নিষেধাজ্ঞা দেবে না। কারণ, চীন সনের অন্যায়ের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

বার্তা সংস্থা এএফপি এ ব্যাপারে জানতে ফিফায় যোগাযোগ করেছিল। তবে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কেউ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।

সন বর্তমানে স্বদেশি ক্লাব সুওন এফসিতে খেলছেন
ইনস্টাগ্রাম

সন বর্তমানে স্বদেশি ক্লাব সুওন এফসিতে খেলছেন। তবে সম্প্রতি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ফিলিস্তিন ও ওমানের বিপক্ষে হয়ে যাওয়া ম্যাচ দুটিতে দক্ষিণ কোরিয়া দলে জায়গা হয়নি তাঁর।