মেসি চিরন্তন, মেসির এই দল চিরন্তন

মেসিরও আছে বিশ্বকাপ!রয়টার্স

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ছোট ছোট পায়ে নাচতে নাচতে এগিয়ে আসছেন মেসি—দৃশ্যটি আপনি চোখের কোনায় সারা জীবনের জন্য সাজিয়ে রাখতে পারেন। এ দৃশ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনানন্দ দাশের সেই লাইনটি, ‘আমরা যাইনি ম’রে আজো- তবু কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়।’

হ্যাঁ, এমন একটি দৃশ্যের জন্যই ফুটবল রোমান্টিকদের বেঁচে থাকা। এ দৃশ্য উপভোগ করতে আপনার কোনো দলের সমর্থক হতে হয় না। শুধু ফুটবলকে ভালোবেসেই আপনি দৃশ্যটি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে পারেন আমৃত্যু। এটাই যে ফুটবল।

লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে গতকাল যা হয়ে গেল, তাকে কী বলবেন? মহানাটক, মহকাব্য নাকি অন্য কিছু? যা কিছু কল্পনাকে ছাড়িয়ে যায়, তাকে নিয়ে কী বলা যায়? এই মুহূর্তটুকু আপনি চোখ বন্ধ করে শুধু অনুভব করতে পারেন। এর বেশি কিছু নয়।

আরও পড়ুন

আর এমন ম্যাচে চূড়ায় ওঠা মানুষটি যদি হন লিওনেল মেসি, তা তো যেন সোনায় সোহাগা। রোজারিওর সোনার ছেলেটির অমরত্ব তো তার আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। ট্রফিটা জিতে ফুটনোটের নিচে জমে থাকা সমালোচনার বার্তাগুলোকেও চিরতরে কফিনবন্দী করে দিলেন। মানুষটি যে প্রমাণ করলেন, তিনি মানেই ফুটবল। এর বেশি নয়, কমও নয়।

আরও পড়ুন

অবশ্য কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও কি আপনি ভুলতে পারবেন? বিশ্বকাপ তো চার বছর আগেই জিতেছিলেন। আজ যা করলেন, সেটা যে তাঁকেও নিয়ে গেছে অমরত্বের পথে। তিনি না থাকলে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ফাইনালটির যে জন্মই হতো না। মেসির বিশ্বকাপ জয়ও হয়তো এতটা মাহাত্ম্য পেত না। মেসির কাছ থেকে বিশ্বকাপকে ঠেকাতে চেষ্টা তো কম করেননি। কিন্তু ফুটবল-ঈশ্বরের ভাবনাটা ভিন্ন কিছুই যে ছিল।

লুসাইল স্টেডিয়ামের বাইরে খোলা বাসে দি মারিয়া, মেসিরা
রয়টার্স

দি মারিয়াকে নিয়েও যে বলতে হয়। কোপা আমেরিকায় তাঁর গোলেই ২৮ বছরের শিরোপা–খরা ঘুচিয়েছিল আর্জেন্টিনা। আর ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রথম ২টি গোলই যে তাঁর অবদান। একটিতে পেনাল্টি আদায় আর অন্যটি তো নিজেই জালে জড়ালেন। আর তাঁর করা এই ২টি গোলের উদ্‌যাপনের ঢেউ দোহা থেকে বুয়েনস এইরেস হয়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারে এসে আছড়ে পড়েছিল।

আরও পড়ুন

আর সবশেষে বলতে হয় এমিলিয়ানো মার্তিনেজের কথা! ম্যাচে দুর্দান্ত গোল বাঁচানো কিংবা টাইব্রেকারে পেনাল্টি ঠেকানো—কোথায় ছিলেন না মেসির প্রিয় দিবু। মেসির জন্য বলেছিলেন জীবন দেওয়ার কথা। হ্যাঁ, জীবনটাকেই যেন পোস্টের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে তাই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ‘সৃষ্টিকর্তা তোমাকে ধন্যবাদ।’ ১২০ মিনিট ধরে তাঁর ওপর দিয়ে যা গেল, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ মার্তিনেজ দিতেই পারেন। তিনি আরও যোগ করে বলেছেন, ‘অনেক কষ্টের একটা ম্যাচ ছিল।’

আরও পড়ুন

বিশ্বজয়ের মুহূর্তটা তো বিশ্বাসই হচ্ছে না রদ্রিগো দি পলের। মেসির ‘দেহরক্ষী’ হিসেবে পরিচিত এই মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আমি জানি না কী বলতে হবে। আমি কখনো এটা কল্পনা করিনি। এটা সেরা। আমরা গর্বিত। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। আমরা এখন চিরন্তন। আমরা এটা করেছি।’

হ্যাঁ, সত্যিই তো—মেসি চিরন্তন, মেসির এই দল চিরন্তন।