প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমসেরার দৌড়ে এবার কারা
২০২০ সালে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল লিভারপুল, তবে মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনা। তার আগের বছর সিটির হয়ে লিগ ট্রফি নিয়ে উল্লাস করেছিলেন ডি ব্রুইনা। কিন্তু মৌসুমসেরার স্বীকৃতি উঠেছিল ভার্জিল ফন ডাইকের হাতে। এবার লিগ জয়ের দৌড়ে লিভারপুল, সিটি দুই দলই আছে, আছে আর্সেনালও। দলগত লড়াইয়ের মতো বহুমুখী লড়াই এবার ব্যক্তিগত পুরস্কারেও। মৌসুমসেরা হওয়ার লড়াইয়ে আছেন অন্তত আধা ডজন মাঠমাতানো ফুটবলার।
সেরার লড়াইয়ের আলোচনা সামনে আসার কারণ ‘ভোটের মৌসুম’। প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমসেরা খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করা হয় মে মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে, যা চূড়ান্ত হয় পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান, গভর্নিং বডি, গণমাধ্যম ও দর্শকের ভোটে। লিগে শীর্ষ তিনটি দলেরই ৩০টি করে ম্যাচ শেষ, লিগ এখন জাল গোটানোর পর্যায়ে। সেরা খেলোয়াড় চূড়ান্ত করতে ভোটারদের সিদ্ধান্ত নেওয়ারও সেরা সময় এটিই। তবে ভোটারদের এবার সেরার রায় দিতে বেগই পেতে হবে। গতবার আর্লিং হলান্ড যেমন ধারাবাহিকভাবে একের পর এক রেকর্ড গড়ে গেছেন, আশপাশে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারছিলেন না তেমন কেউই—এবার চিত্র তেমনটা নয়। আক্রমণ তো বটেই, মাঝমাঠ আর রক্ষণভাগেও নিজেকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন অনেকেই।
হলান্ড লড়াইয়ে আছেন এবারও। মাঝখানে চোটের কারণে এক মাস মাঠে নামতে পারেননি। তবু ২৪ ম্যাচে ১৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা সিটির এই স্ট্রাইকারই। হলান্ড অবশ্য এবার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে প্রত্যাশিত মাত্রায় জ্বলে না ওঠায় কিছুটা ‘ব্যাকফুটে’ও আছেন। (গতকাল লিভারপুল ম্যাচের আগপর্যন্ত) গোলসংখ্যায় হলান্ডের পরেই অবস্থান করছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুলের মিসরীয় তারকা চোটের কারণে কয়েকটি ম্যাচ মিস করলেও পূর্ণ সময় খেলা ম্যাচগুলোতে ছিলেন দারুণ ছন্দে।
২৩ ম্যাচ খেলে সালাহর গোল ১৬টি। গোল করার পাশাপাশি করানোতেও বেশ সফল সফল। এরই মধ্যে ৯টি অ্যাসিস্ট হয়ে গেছে তাঁর, যা এবারের লিগে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই ধারা যদি সালাহ ধরে রাখেন, লিভারপুলও লিগ জেতে—তবে মৌসুমসেরা হওয়ার ভালো সম্ভাবনাই থাকবে ২০১৭–১৮ মৌসুমে সেরার স্বীকৃতি পাওয়া এই তারকার। একই দলের দারউইন নুনিয়েজও গোল–অ্যাসিস্টে বিশেষভাবে দৃষ্টি কেড়েছেন। একাধিক ম্যাচে বদলি নেমে দলকে উদ্ধার করা এই উরুগুইয়ান ১০ গোলের সঙ্গে ৭টি অ্যাসিস্ট করেছেন।
লিভারপুল এবার লিগ জিতলে সেরা হওয়ার সম্ভাবনা আছে ফন ডাইকেরও। ৩২ বছর বয়সী এই ডাচ ডিফেন্ডার মাঝখানে কিছুটা বিবর্ণ থাকলেও চলতি মৌসুমে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সাবেক লিভারপুল কিংবদন্তি ও ধারাভাষ্যকার জেমি ক্যারাঘার তো মার্চ মাসেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, মৌসুমসেরা হতে পারেন ফন ডাইক। ক্যারাঘার অবশ্য আরও দুজনের নাম নিয়েছিলেন। একজন ডেকলাইন রাইস।
গত মৌসুমের মতো আর্সেনাল এবার শেষ দিকে ভেঙে পড়বে না রাইসের কারণেই, এমনটাই মনে করেন তিনি, ‘আর্সেনালের এই দলের মেরুদণ্ড যে এখনো শক্ত আছে, সেটায় রাইসের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা আছে।’ শিরোপার লড়াইয়ে থাকা তিন দলের মধ্যে রাইসের দলই সবচেয়ে বেশি গোল করেছে (৭১), হজমও করেছে সবচেয়ে কম (২৪)। ওয়েস্ট হাম থেকে আসা রাইসের দুই ক্ষেত্রেই ভালো অবদান আছে। আর্সেনালের রক্ষণ সামলানোর মূল কাজটা করে আসছেন অবশ্য উইলিয়াম স্যালিবা। ফরাসি এই ডিফেন্ডারও আছেন সেরার দৌড়ে।
ক্যারাঘারের তিন মৌসুমসেরার তালিকার অপরজন ফিল ফোডেন। পরশু রাতে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা এই মিডফিল্ডার এরই মধ্যে গোল করেছেন ১৪টি, অ্যাসিস্ট আরও ৭টিতে। মৌসুমসেরার লড়াইয়ে ফোডেনের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী অবশ্য নিজের সতীর্থ রদ্রিই। স্প্যানিশ এই মিডফিল্ডারকে এই মুহূর্তে তাঁর পজিশনের বিশ্বসেরা মনে করা হয়ে থাকে। গত বছর চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরার স্বীকৃতি পাওয়া রদ্রি এবার সিটির হয়ে ৭ গোলের সঙ্গে ৭টি অ্যাসিস্টও করেছেন। প্রতি নব্বই মিনিট হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিখুঁত পাস এবং লং বল পাসও রদ্রিরই।
বড় দলের পরীক্ষিত সব ফুটবলারের সঙ্গে ট্রফির লড়াইয়ে না থাকা দলের একজনও আছেন মৌসুমসেরার লড়াইয়ে—ওলি ওয়াটকিনস। ২৮ বছর বয়সী এই ইংলিশ ফরোয়ার্ড অ্যাস্টন ভিলার হয়ে এখন পর্যন্ত করেছেন ১৬ গোল, যা যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অ্যাসিস্টও করেছেন ১০টি, যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ। দল ট্রফি না জিতলেও ওয়াটকিনসের মৌসুমসেরা হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই। উদাহরণ হিসেবে তো ডি ব্রুইনা, ফন ডাইকরা আছেনই।