টমাস টুখেল, গ্রাহাম পটার, ব্রুনো সাল্তোর ও ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড—গত মৌসুমে চার-চারজন কোচের অধীনে খেলেছে চেলসি। কিন্তু লাভ হয়নি। শিরোপা জেতা দূরে থাক, আগামী মৌসুমে কোনো ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিতে পারেনি। লন্ডনের ক্লাবটি যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করেছে ১২তম অবস্থানে থেকে, যা ছিল এই শতাব্দীতে তাদের সবচেয়ে বাজে মৌসুম।
দুঃসময় ভুলে ২০২৩-২৪ মৌসুমে ঘুরে দাঁড়াতে ইংলিশ ফুটবলের পরিচিত মুখকেই দল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়েছে চেলসি। প্রধান কোচ হয়ে এসেছেন মরিসিও পচেত্তিনো। ৫১ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন গত বছর পিএসজি থেকে বরখাস্ত হওয়ার আগে লন্ডনেরই আরেক ক্লাব টটেনহামের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন ৫ বছর। তাঁর আগে এক মৌসুম কোচিং করিয়েছেন সাউদাম্পটনকেও।
গত শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চেলসির দায়িত্ব নিয়েছেন পচেত্তিনো। দায়িত্ব বুঝে পেয়ে চেলসির ওয়েবসাইটে প্রথমবার সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে চেলসি কোচ পচেত্তিনো বলেছেন, ‘গত ১০, ১২, ১৫ বছরে চেলসিই ইংল্যান্ডের সেরা দল।’
পচেত্তিনোর এমন দাবিকে অনেকের বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কারণ, ট্রফি আর মাঠের দাপট বিবেচনায় এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের সেরা দল ম্যানচেস্টার সিটি। যে প্রিমিয়ার লিগকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতা মনে করা হয়, সেটাকেই বড্ড একপেশে বানিয়ে ফেলেছে সিটি। সর্বশেষ ছয় মৌসুমে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি। এ বছর প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপের পর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ট্রেবল জয়ের কীর্তিও গড়েছে গার্দিওলার দল।
বিপরীতে মার্কিন ধনকুবের টড বোয়েলি চেলসির মালিকানা বুঝে পাওয়ার পর শুধু কোচই বদলেছেন, এখনো সাফল্য এসে ধরা দেয়নি। এই শতাব্দীতে পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ, দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ২১টি শিরোপা জিতেছে চেলসি। তবে এর সবই আগের মালিক রুশ ব্যবসায়ী রোমান আব্রামোভিচের অধীনে। পচেত্তিনো তাঁর কথার মাধ্যমে হয়তো গত ১৫ বছরে চেলসির সামগ্রিক সাফল্যের বিষয়টিই বোঝাতে চেয়েছেন।
টটেনহাম ও সাউদাম্পটনের কোচ হিসেবে ছয় মৌসুম কাটালেও দল দুটিকে কোনো শিরোপা জেতাতে পারেননি পচেত্তিনো। ২০১৮-১৯ মৌসুমে টটেনহামকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে তোলা তাঁর সেরা সাফল্য। তবে দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে থাকায় প্রিমিয়ার লিগের সবকিছু হাতের তালুর মতোই চেনা পচেত্তিনোর, ‘প্রিমিয়ার লিগ সম্পর্কে আমার জানাশোনা বেশ ভালো, চেলসির সংস্কৃতি সম্পর্কেও। আমি মনে করি, আমাদের দল আবারও শিরোপা জয়ের পথে হাঁটবে এবং সমর্থকেরা এটা ভেবে এখনই রোমাঞ্চিত।’
পিএসজিতে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা আছে পচেত্তিনোর। প্যারিসের ক্লাবটিকে জিতিয়েছেন তিনটি শিরোপা। তবে চেলসিতে খুব বড় মাপের তারকাদের পাচ্ছেন না আর্জেন্টাইন কোচ। গত মৌসুমে খেলোয়াড় কিনতে ইচ্ছেমতো টাকা ঢেলেছেন কর্ণধার বোয়েলি।
শুধু শীতকালীন দলবদলেই আট ফুটবলার কিনতে রেকর্ড ৫ কোটি পাউন্ড (৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৪২ লাখ টাকা) খরচ করেছে ব্লুজরা, যা নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে তো বটেই, ব্রিটিশ ফুটবলেও সর্বোচ্চ।
চেলসির সেই ‘খরচের খেলে’ এবার লাগাম টানতে হয়েছে। প্রিমিয়ার লিগের আর্থিক সংগতি নীতি অনুযায়ী সার্বিক ব্যয়ের দিকে নজর দিতে গিয়ে গত ৩০ জুনের মধ্যে কাই হাভার্টজ, মাতেও কোভাচিচ, এনগোলো কান্তে, কালিদু কুলিবালি, ম্যাসন মাউন্ট, এদুয়া মেন্দি, রুবেন লোফটাস-চিকের মতো তারকাদের ছেড়ে দিতে হয়েছে। প্রায় ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় থাকা দলটি স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে নিয়ে এসেছে ক্রিস্টোফার এনকুনকু ও নিকোলাস জ্যাকসনকে। তবে সামনের মৌসুমে ভালো করতে আরও বিভিন্ন পজিশনের আরও বিশ্বমানের খেলোয়াড় কিনতে হবে।
পচেত্তিনো এই চ্যালেঞ্জ নিতেও প্রস্তুত, ‘তরুণ দলটির সঙ্গে কাজ করতে আমি উন্মুখ। এবার ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করব। তার আগে জরুরি হলো, সবাইকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে এবং মাঠে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যা কয়েক বছরের মধ্যে সাফল্য এনে দেবে।’