দুর্নীতির অভিযোগে স্পেন ফুটবলের সদর দপ্তর ও রুবিয়ালেসের বাসায় পুলিশের তল্লাশি
দুর্নীতি এবং অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ তদন্তে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) সদর দপ্তর এবং সংস্থাটির সাবেক সভাপতি লুইস রুবিয়ালেসের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে স্পেনের পুলিশ। স্পেনের বিচারিক সূত্র গতকাল এ খবর জানিয়েছে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রুবিয়ালেস আরএফইএফ সভাপতির দায়িত্বে থাকতে স্প্যানিশ সুপার কাপ সৌদি আরবে আয়োজনের ব্যাপারে দেশটির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। সেই চুক্তিরই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত, আর তারই অংশ হিসেবে আরএফইএফ সদর দপ্তর, রুবিয়ালেসের বাসা এবং আরও কিছু জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। বছরে চার কোটি ইউরো মূল্যের এই চুক্তি স্বাক্ষরে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছিল স্পেনের সাবেক ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের প্রতিষ্ঠান কসমস।
গ্রানাডায় রুবিয়ালেসের বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেস এখন স্পেনের বাইরে আছেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, স্পেনের কৌঁসুলির অফিস রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। রুবিয়ালেস এখন আছেন ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে। স্পেনের টিভি চ্যানেল ‘টেলেসিনকো’র সংবাদকর্মীকে রুবিয়ালেস বলেছেন, ‘আমি এই কাজে (তল্লাশি) খুবই বিস্মিত হয়েছি। এখন ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে কাজ করছি। এখানে আছি এক মাসের বেশি হলো। আমার পরিবারের এখানে এসে ইস্টার পালনের কথা।’
গত বছর আগস্টে নারী বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিজয় মঞ্চে ‘চুমু-কাণ্ড’ ঘটিয়ে তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন রুবিয়ালেস। স্পেনের খেলোয়াড় হেনি হেরমোসোর ঠোঁটে চুমু খেয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে বৈশ্বিকভাবে সমালোচনা শুরুর পর সেপ্টেম্বরে আরএফইএফ সভাপতির দায়িত্ব ছাড়েন রুবিয়ালেস। স্পেনের এক বিচারক গত জানুয়ারিতে বলেছেন, রুবিয়ালেসকে এ জন্য বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
স্পেনের পুলিশের তল্লাশি নিয়ে দেশটির বিচারিক সূত্রের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। বলা হয়েছে, পুলিশ মোট ১১টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে। আর ‘অর্থ পাচার, প্রশাসনে জালিয়াতি ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে শুরু হওয়া তদন্তের অংশ হিসেবে এই তল্লাশি চালানো হয়।’ সূত্র মারফত বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে আছেন আরএফইএফের আইনি উপদেষ্টা টমাস গঞ্জালেস ও দুজন পরিচালক।
স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সদর দপ্তরে তল্লাশি চালানোর পর আরএফইএফ পুলিশ ও কৌঁসুলির তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’
কোপা দেল রে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ এপ্রিল সেভিয়ার লা কার্তুয়া স্টেডিয়ামে। পুলিশ সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফেডারেশনের সদর দপ্তর থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। স্পেন জাতীয় দল এখন সেখানেই অবস্থান করছে। শুক্রবার কলম্বিয়া এবং মঙ্গলবার ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে স্পেন। আর্সেনাল ও স্পেনের গোলকিপার ডেভিড রায়া পুলিশের তল্লাশি চালানো নিয়ে বলেছেন, ‘আমি এ নিয়ে কিছুই জানি না। আমরা স্বাভাবিকভাবেই অনুশীলন করেছি।’
২০২০ সালে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপ অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড মহামারির কারণে পরের বছর টুর্নামেন্টটি স্পেনে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর সুপার কাপের সর্বশেষ তিনটি টুর্নামেন্টই অনুষ্ঠিত হয়েছে সৌদি আরবে। স্পেনের কৌঁসুলিরা ২০২২ সালে সুপার কাপ নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এই টুর্নামেন্টে সৌদি আরবে আয়োজনের চুক্তি থেকে কত টাকার কমিশন আসবে, এই ব্যাপারে পিকে ও রুবিয়ালেসের মধ্যকার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু করেন কৌঁসুলিরা।
রুবিয়ালেস বরাবরই দাবি করেছেন, সৌদি আরবে সুপার কাপ আয়োজন নিয়ে কোনো দুর্নীতি করা হয়নি। স্পেন ও বার্সেলোনার সাবেক ডিফেন্ডার পিকে ২০২২ সালের এপ্রিলে বলেছেন, ‘সবকিছুই বৈধ ছিল।’