প্রিমিয়ার লিগে দলবদলের খরচ প্রথমবার ২০০ কোটি পাউন্ড ছাড়িয়েছে
ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন মাথেউস নুনেস। ব্রাজিলে জন্ম নেওয়া পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের ইচ্ছা শেষ পর্যন্ত পূরণ হয়েছে। ৫ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ডে তাঁকে উলভারহাম্পটনের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে সিটি। নুনেসের নতুন ক্লাবে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ইংলিশ ফুটবলে এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদল।
শেষ মুহূর্তে নুনেসের ক্লাব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন রেকর্ডও হয়েছে। প্রথমবারের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দলবদলের খরচ ২০০ কোটি পাউন্ড ছাড়িয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ হিসাবরক্ষণ পরিষেবা নেটওয়ার্ক ডেলয়েট এ তথ্য দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রিমিয়ার লিগের ২০ ক্লাব এবার খেলোয়াড় কিনতে মোট ২৩৬ কোটি পাউন্ড ব্যয় করেছে, যা গতবারের চেয়ে প্রায় ৪৪ কোটি পাউন্ড বেশি। ২০২২-২৩ গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ক্লাবগুলোর খেলোয়াড় কিনতে গুনতে হয়েছিল ১৯২ কোটি পাউন্ড।
এ ব্যাপারে ডেলয়টের ক্রীড়া বাণিজ্য গ্রুপের সহকারী পরিচালক কালাম রোস বার্তা সংস্থা প্রেস অ্যাসোসিয়েশনকে বলেছেন, ‘দলবদলের খরচ ১০০ কোটি পাউন্ড ছাড়াতে ১৪টি ট্রান্সফার উইন্ডো লেগেছে। ২০০ কোটি পাউন্ড ছাড়াতে লাগল মাত্র ৭টি। মানে, এর অর্ধেক। এটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অবিশ্বাস্য গতিকে প্রতিফলিত করছে।’
ডেলয়টের হিসাব অনুযায়ী, এবারের দলবদলে সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে চেলসি। অঙ্কটা ৪২ কোটি ৮৮ লাখ পাউন্ড। মার্কিন ধনকুবের টড বোয়েলি মালিকানা বুঝে নেওয়ার পর টানা দুই মৌসুম ব্যয়ে শীর্ষে থাকল লন্ডনের ক্লাবটি। তালিকার দুইয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির খরচ চেলসির অর্ধেকের কম—২১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড। এতেই বোঝা যায়, কী রকম ‘খরচের খেল’ দেখিয়েছে ব্লুজরা।
এবারের দলবদলে দুজন ফুটবলারকে কিনতে ১০ কোটি পাউন্ড বা এর বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। একজন চেলসির মোইসেস কাইসেদো, অন্যজন আর্সেনালের ডেকলান রাইস। কাইসেদো তো ব্রিটিশ দলবদলের ইতিহাসে রেকর্ডই গড়ে ফেলেছেন। ৯ মাস আগে শীতকালীন দলবদলে যে রেকর্ডটা করেছিলেন চেলসিরই এনজো ফার্নান্দেজ। এ ছাড়া ৬ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ডে ক্রিস্তোফার এনকুনকু ও পরশু শেষ দিনে ৪ কোটি পাউন্ডে সিটি থেকে প্রতিভাবান তরুণ কোল পালমারকে নিয়ে এসেছে চেলসি।
দলবদলের খরচের তালিকায় চেলসি, সিটির পর আছে আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম হটস্পার। এবার ১০টি ক্লাব ১০ কোটি পাউন্ডের বেশি খরচ করেছে জানিয়ে কালাম রস আরও বলেছেন, ‘এবার লিগ মৌসুমজুড়ে প্রতিযোগিতার মাত্রা আরও তীব্র হবে। আমার মনে হচ্ছে, অর্ধেকের বেশি ক্লাব গত মৌসুমের চেয়ে এবার বেশি খরচ করেছে।’
ইউরোপীয় ফুটবলের বাকি চার শীর্ষ ঘরোয়া প্রতিযোগিতা (লা লিগা, সিরি ‘আ’, বুন্দেসলিগা ও লিগ আঁ) মিলিয়ে যত খরচ হয়েছে, প্রিমিয়ার লিগের একারই খরচ তার কাছাকাছি। তবে বিশ্বের সব লিগ মিলিয়ে খরচের তালিকায় এবার শীর্ষ পাঁচে নেই ‘বিগ ফাইভ’। প্রিমিয়ার লিগের পরের জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে ইউরোপীয় ফুটবলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেওয়া সৌদি প্রো লিগ। বছরের শুরুতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হাত ধরে যেটার শুরু, নেইমার-বেনজেমা-মানে-কান্তে-মাহরেজ-ফাবিনিওদের মতো তারকাদের এনে সেটা এখন ‘নক্ষত্রপুঞ্জ’ বানানোর পথে।
এ ব্যাপারে রস বলেছেন, ‘২০১৬ সালের পর প্রথমবার লা লিগা (দলবদলের খরচে) শীর্ষ পাঁচ থেকে ছিটকে গেছে। সেই জায়গা নিয়েছে সৌদি প্রো লিগ। আমার মনে হয়, তারা এ মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে আছে। সৌদি লিগের ক্লাবগুলো ৭২ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের বেশি ব্যয় করেছে।’
ইউরোপীয় ফুটবলে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময়সীমা গত রাতে শেষ হলেও সৌদির ট্রান্সফার উইন্ডো বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খোলা থাকছে। আগামী কয়েক দিনে প্রো লিগ আরও এগিয়ে যাবে বলে ধারণা রসের।