সালাহর কাছে লিভারপুলের ইউরোপায় নেমে যাওয়ার কোনো অজুহাত নেই
দুটি টুইটেই দুই ক্লাবের চিত্রটা বোঝা যায়। ম্যানচেস্টার সিটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয় নিশ্চিত করেছে আগেই, সামনে এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল। ইতিহাদের বাতাসে তাই সুখের বার্তা। সেটি বাইরে থেকেও বোঝা যায় ম্যানচেস্টার সিটিকেন্দ্রিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘সিটি চিফ’ এর টুইটে।
প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলকে খোঁচা মেরে কাল রাতে টুইটটি করা হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-চেলসি ম্যাচের পর, ‘ইউরোপা লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় ক্লপ এবং তাঁর লিভারপুলকে অভিনন্দন।’
চেলসিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ইউনাইটেড পয়েন্ট তালিকায় তৃতীয় দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের আগামী মৌসুমে খেলা নিশ্চিত করেছে। পাঁচে নেমে গিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ হারিয়েছে লিভারপুল। হাতে এক ম্যাচ থাকলেও শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করার সুযোগ নেই অ্যানফিল্ডের দলটির।
বাস্তবতা বুঝতে পেরেই বিষয়টিকে ইতিবাচক চোখে দেখার চেষ্টা করছেন লিভারপুলের সমর্থকেরা। বলা হচ্ছে, ইউরোপা লিগই একমাত্র টুর্নামেন্ট ক্লপ লিভারপুলের কোচ হয়ে আসার পর, যা এখনো জিততে পারেননি। লিভারপুলের সমর্থকদের টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘অ্যানফিল্ড এডিশন’র টুইটে তাই সমর্থকদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে এভাবে, ‘কেউ ইউরোপা লিগে নামতে চায়নি, কিন্তু এখন এটাই বাস্তবতা। আসুন এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করি। আমরা এটা জিততে চাই।’
বেশি দিনের কথা নয়, মাত্র ১২ মাস আগেও ইউরোপা লিগ অচিন্তনীয় ছিল লিভারপুলের জন্য। সে সময় মাত্র পাঁচ মৌসুমের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলার প্রস্তুতি নিয়েছে লিভারপুল।
কিন্তু ফুটবলে এক বছর বেশ দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে গোটা চিত্রটাই পাল্টে যেতে পারে আর সেটাই হয়েছে লিভারপুলের জন্য। খেলোয়াড়দের চোট ও ফর্মহীনতায় ক্লপের দল এবার প্রত্যাশামতো খেলতে পারেনি।
তাতে ক্লপ যেন এসে দাঁড়িয়েছেন এক চক্রপূরণের সামনে—জার্মান এই কোচ ২০১৫-১৬ মৌসুমে লিভারপুলের কোচ হয়ে এসেছেন। সে মৌসুমে সর্বশেষ ইউরোপা লিগে খেলেছে লিভারপুল। ফাইনালে উঠে হেরেছিল সেভিয়ার কাছে। লিভারপুলের সমর্থকেরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতে পারেন অন্তত এই ভেবে, আগামী মৌসুমে শিরোপাটা জিতে সেই চক্রপূরণের সুযোগ পাচ্ছেন ক্লপ।
কিন্তু মোহাম্মদ সালাহর মনে শান্তি নেই, কোনো সান্ত্বনা নেই। লিভারপুলের ইউরোপা লিগে নেমে যাওয়া সালাহ যেন মেনেই নিতে পারছেন না! মিসরীয় তারকা ২০১৭ সালে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার পর এই প্রথম ইউরোপে দ্বিতীয় স্তরের টুর্নামেন্টটিতে নেমে গেল লিভারপুল। সালাহ মনে করেন, ইউরোপা লিগে নেমে যাওয়া নিয়ে লিভারপুলের কোনো ‘অজুহাত’ দেখানোর সুযোগ নেই।
তাঁর টুইট, ‘পুরোপুরি বিধ্বস্ত লাগছে। কোনো অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার জন্য আমাদের যা যা প্রয়োজন, সবই ছিল। আমরা লিভারপুল, এই টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেওয়াটা ছিল ন্যূনতম প্রত্যাশা। আমি দুঃখিত, কারণ আশা দেখানোর মতো কোনো পোস্ট করার সময় এখনো আসেনি। আমরা আপনাদের এবং নিজেদের মাথা হেট করেছি।’
গত বছরই চার শিরোপা জয়ের সুবাস পেয়েছে লিভারপুল। কিন্তু এবার সেখান থেকে উল্টোযাত্রা করল লিভারপুল। যদিও লিগে শেষ দিকে টানা ৭ ম্যাচ জিতে শীর্ষে চারে উঠে আসার মরিয়া চেষ্টা করেছে ক্লপের দল। শেষ পর্যন্ত ইউরোপের সবচেয়ে অভিজাত ক্লাব টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে পারল না তারা।
তবে ক্লপের কণ্ঠে কিন্তু এই ইউরোপা লিগকে পুঁজি করেই ঘুরে দাঁড়ানোর সুর। বিবিসি স্পোর্টসকে কৌতুকের মেজাজে বলেছেন, ‘আমরা এটাকে (ইউরোপা লিগে) নিজেদের টুর্নামেন্ট বানিয়ে নেব। অন্য সব দলের ভেতর থেকে আমরা এরই মধ্যে ইউরোপা লিগে জায়গা করে নিয়েছি, যেটা অবিশ্বাস্য! এটা সত্যিই কঠিন এবং আমরা সেটা করতে পেরেছি।’