ব্রাজিলের সংসদে পাকেতাকে তলব, ইংল্যান্ডে হতে পারেন আজীবন নিষিদ্ধ
বেটিং নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে লুকাস পাকেতাকে তলব করেছে ব্রাজিলের সংসদীয় কমিশন। এতে ডিসেম্বরে ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের হয়ে বড় ম্যাচ মিসও করতে পারেন ব্রাজিলের এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। এ বছরের শুরুতে স্পট ফিক্সিংয়ে চারটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ)। ব্রাজিলেও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বেটিং বাজারকে প্রভাবিত করতে ইচ্ছে করে কার্ড দেখার অভিযোগ রয়েছে পাকেতার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আগামী মার্চে তাঁকে নিয়ে শুনানিতে বসবে এফএ। ইংলিশ ফুটবলের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিযোগ, ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর লেস্টার সিটি, ২০২৩ সালের ১২ মার্চ অ্যাস্টন ভিলা, ২১ মে লিডস ইউনাইটেড ও ১২ আগস্ট বোর্নমাউথের সঙ্গে ওয়েস্ট হামের ম্যাচে ইচ্ছে করে কার্ড দেখেছেন পাকেতা। এর কারণ? তাঁর কার্ড দেখা নিয়ে বেটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন পাকেতা এবং তাঁর বন্ধুরা। সেখানে লাভবান হতেই ওই কাণ্ড।
পাকেতা অবশ্য আগেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণে তিনি সবকিছু দিয়ে লড়াই করবেন। তাঁর দাবি, তদন্তকার্যে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করছেন। অবৈধ বেটিং নিয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে ম্যাচ গড়াপেটা বিষয়ে সাও পাওলোর তদন্ত কমিশনে (সিপিআই) এ সপ্তাহে প্রমাণাদি দাখিল করার কথা ছিল পাকেতার। কিন্তু ২৭ বছর বয়সী এ ফুটবলারের আইনি দল তা স্থগিত করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘সান’ জানিয়েছে, আগামী ৩ ডিসেম্বর লেস্টার সিটির বিপক্ষে ওয়েস্ট হামের ম্যাচটি খেলতে পারবেন না পাকেতা। কারণ, গত বুধবারের নির্দেশনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ব্রাজিলের সংসদীয় কমিশনের কাছে প্রমাণাদি জমা দিতে হবে পাকেতাকে। সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এফএ পাকেতার বিপক্ষে নতুন আরও দুটি অভিযোগ গঠন করতে যাচ্ছে। একটি, তদন্তে অসহযোগিতা এবং অন্যটি তদন্তে বাধাদান। কিন্তু গতকাল পাকেতা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পাকেতা বলেছেন, ‘ইংল্যান্ড ও ব্রাজিলে বিভ্রান্তিকর ও ভুল প্রতিবেদনগুলো পড়ে আমি হতাশ। কিছু তথ্য পুরোপুরি মিথ্যা এবং মনে হচ্ছে আমার অবস্থানকে খাটো করতে এগুলো পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে। আমি এটাও জানি, তথ্যগুলো মিথ্যা হলেও সেগুলো নেওয়া হয়েছে মামলা–সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে। অথচ এফএর কাজে গোপনীয়তা থাকার কথা ছিল, যা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
ব্রাজিলে পাকেতার চাচা ব্রুনো তোলেন্তিনোর বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল বেতিসের সাবেক উইঙ্গার লুইস হেনরিক দুবার কার্ড দেখার কয়েক দিন পর তাঁকে পাঁচ হাজার পাউন্ড দেন তোলেন্তিনো। এ নিয়ে স্পেনেও তদন্ত চলছে। যদিও হেনরিক ও তোলেন্তিনো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পাকেতা এবং তাঁর চাচার ব্যাপারে সন্দেহজনক এ দুটি ঘটনার কথা জানিয়েছে ওয়েস্ট হামের জার্সি স্পনসর ও ব্রিটেনের বেটিং প্রতিষ্ঠান বেটওয়ে।
গত বুধবার সিপিআইয়ের শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন পাকেতার চাচা তোলেন্তিনো। নিজের নামটা নিশ্চিত করা ছাড়া তিনি শুনানিতে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন জানিয়েছে, পাকেতার পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ প্রায় ৬০ জন তাঁর ম্যাচে কার্ড দেখা নিয়ে ৭ থেকে ৪০০ পাউন্ড পর্যন্ত বাজি ধরেছেন। এতে তাঁদের সম্মিলিত আয় প্রায় ১ লাখ পাউন্ডের কাছাকাছি।
অভিযোগ প্রমাণিত হলে পাকেতাকে আজীবনের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করতে পারে এফএ। গত বছর তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তারা দুই মাসের জন্য পাকেতার ফোন জব্দ করেছিলেন। ফোনে বার্তা, কল, ব্যাংকিং—এসব তাঁরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ফোন ফেরতও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আবারও তদন্তের স্বার্থে ফোনটি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাকেতার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফোনটি হারিয়ে গেছে এবং খুঁজে পাচ্ছেন না। এতে পাকেতার বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ গঠন করতে যাচ্ছে এফএ, জানিয়েছে সান।