ধর্ষণের মামলায় আলভেজের ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েছে নেইমারের পরিবার
ধর্ষণের দায়ে দানি আলভেজের ১২ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছিলেন ভুক্তভোগীর আইনজীবী। আর স্পেনের রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিরা চেয়েছিলেন ৯ বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু বার্সেলোনার আদালত গতকাল ব্রাজিলের সাবেক রাইটব্যাককে সাড়ে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেন, সঙ্গে ১ লাখ ৫০ হাজার ইউরো ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ইউওএল জানিয়েছে, আলভেজের জরিমানার টাকাটা (১ লাখ ৫০ হাজার ইউরো) দিয়েছে নেইমারের পরিবার। আলভেজের সাজার মেয়াদ কমানোয় যা বড় ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
ইউওএল জানিয়েছে, নেইমার এই টাকা আগেই স্পেনের আদালতে পাঠিয়েছেন। সেটি গত ৯ আগস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর যে নৈতিক এবং শারীরিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা প্রশমনে আলভেজকে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং সেটি দিলে সাজার মেয়াদও কমবে বলা হয়েছিল। প্রতিবেদনের ভাষায়, ভুক্তভোগীকে টাকাটা ‘দিতে বলা হয়েছিল তাঁর সাজার মেয়াদ কমানোর জন্য’।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে বার্সেলোনার নৈশক্লাবে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মামলা হয় আলভেজের বিরুদ্ধে। সে মাসেই গ্রেপ্তার হন আলভেজ এবং তার পর থেকেই স্পেনে কারাবন্দী জীবন কাটছিল তাঁর। জেলখানায় আটক থাকা অবস্থায় আলভেজ ব্রাজিলে নিজের সম্পদের সাহায্যও নিতে পারেননি। ইউওএল জানিয়েছে, সাবেক স্ত্রী দিনোরাহ সানতানার সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে ব্রাজিলে তাঁর সম্পত্তি জব্দ করা হয়। আলভেজ ভরণপোষণ না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দিনোরাহ।
সবকিছু মিলিয়ে আলভেজের আর্থিক অবস্থা সঙিন হয়ে পড়ায় নেইমারের সাহায্যের দরকার পড়েছিল বলে জানিয়েছে ইউওএল। ব্রাজিল জাতীয় দল এবং বার্সেলোনায় সতীর্থ ছিলেন নেইমার ও আলভেজ। দুজনের মধ্যে সম্পর্কও বেশ ভালো।
ইউওএল আলভেজের ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্র মারফত নিশ্চিত করেছে, নেইমার ও তাঁর বাবা টাকাটা পাঠিয়ে আলভেজকে সহায়তা করেছেন। নেইমারের বাবার প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সিনিয়র আইনজীবী গুস্তাভো জিস্তোকে গত বছরের ২৮ জুন নিজের সম্পত্তির অ্যাটর্নি হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছিলেন আলভেজ। সেদিনই সাবেক স্ত্রী দিনোরাহকে নিজের সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেন আলভেজ। এ বিষয়ে নেইমারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পায়নি ইউওএল।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে আলভেজকে নেইমারের পরিবারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্যের প্রমাণ পেয়েছে তারা। ৪০ বছর বয়সী সাবেক ব্রাজিল রাইটব্যাকের আইনজীবী মিরাইদা পুয়েন্তেকে নেইমারের পরিবারের পক্ষ থেকে টাকাটা দেওয়া হয়। গত বছর ৯ আগস্ট আদালতে টাকাটা জমা দেওয়া হয়।
ইউওএলের পক্ষ থেকে পুয়েন্তের সঙ্গে আটবার যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। পুয়েন্তের সঙ্গে ক্রিস্টোবাল মার্তেল নামের আরেক আইনজীবী আলভেজের পক্ষে সে সময় কাজ করেছিলেন। মার্তেল সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছেন, তিনি আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে কিছু জানতেন না এবং এখন আর তিনি এই মামলা নিয়ে কাজও করছেন না।
আলভেজের এই মামলা থেকে মার্তেল সরে যাওয়ার পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ইনেস গার্দিওলা। বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রিমিনাল ল–তে ডক্টরেট করেছেন ইনেস। মুন্দো দেপোর্তিভো এর আগে জানিয়েছিল, আদালতে ইনেস গার্দিওলা বলেছেন, আলভেজ আর্থিকভাবে ‘ভেঙে পড়েছেন’ এবং ‘১৭ হাজার পাউন্ড নেগেটিভ ব্যাংক ব্যালান্স’ রয়েছে তাঁর। অথচ একসময় ৪ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পদের মালিক ছিলেন আলভেজ।