নেইমারের রেকর্ড গড়ার ম্যাচে বলিভিয়াকে উড়িয়ে দিল ব্রাজিল
ম্যাচে ৪০ মিনিটের খেলা চলছিল তখন। বাঁ প্রান্তে মাঝমাঠের কাছাকাছি জায়গায় বল পান নেইমার। বল নিয়ে প্রথমে কাটান বলিভিয়ার এক খেলোয়াড়কে। আটকানোর চেষ্টা করেও সেই খেলোয়াড়টি নাগাল পাননি নেইমারের। এরপর আগুয়ান আরেক প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ডজ দিয়ে নেইমার ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষ বক্সে। সেখানে দেয়াল তুলে দেওয়া দুই ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে আরও এগিয়ে যান নেইমার। এরপর নেইমারের সামনে ছিলেন শুধু গোলরক্ষক। কিন্তু নেইমার পারেননি। তাঁর বাঁ পায়ের শট রুখে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক।
কিন্তু সেই একটি মুহূর্তে নেইমারের ফুটবলীয় সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখেছে সবাই। আর এই এক মুহূর্তে নেইমার বুঝিয়ে দেন পেনাল্টি মিস দিয়ে শুরু হলেও দিনটি আসলে তাঁরই। বিরতির পর ফিরে এসে নেইমার যেন অপ্রতিরোধ্য। দুই গোল করেছেন নিজে। এক গোলে সহায়তা করেছেন আর অন্য গোলটির উৎসও ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান।
আর নেইমারের জাদুকরী দিনে ২০২৬ বিশ্বকাপ দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বলিভিয়াকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে ব্রাজিল। নেইমারের মতোই জোড়া গোল করেছেন রদ্রিগো। অন্য গোলটি রাফিনিয়ার। আর এদিন গোল করে নেইমার ছাড়িয়ে গেছেন পেলেকেও। ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল এখন নেইমারের (৭৯)।
ঘরের মাঠে বলিভিয়ার বিপক্ষে শুরুটা দাপটের সঙ্গেই করে ব্রাজিল। বল দখল ও আক্রমণ দুটিতেই এগিয়ে ছিল দলটি। মাত্র ২ মিনিটের মাথায় নিজের উপস্থিতির জানান দেন নেইমার। ১০ মিনিটে গোলের সুযোগও তৈরি করে ব্রাজিল। কিন্তু ব্রুনো গিমারায়েস সঠিক সময়ে বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হওয়ায় গোল পাওয়া হয়নি ব্রাজিলের।
ম্যাচের ১৫ মিনিটে রদ্রিগো-নেইমারের সমন্বিত আক্রমণের চাপ সামলাতে না পেরে ব্রাজিলকে পেনাল্টি উপহার দেয় বলিভিয়া। আর এই পেনাল্টি নেইমারের সামনে সুযোগ করে দেয় ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে গোলে পেলেকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে ওঠার। কিন্তু সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি নেইমার। তাঁর মাটি কামড়ানো দুর্বল শট সহজেই ঠেকিয়ে দেন বলিভিয়া গোলরক্ষক ভিসকারা।
নেইমার না পারলেও অবশ্য গোল পেতে সমস্যা হয়নি ব্রাজিলের। ২৪ মিনিটে রাফিনিয়ার শট ঠেকান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। সেই বল বলিভিয়ার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে চলে আসে রদ্রিগোর সামনে। কাছাকাছি জায়গা থেকে লক্ষ্যভেদ করে দলকে এগিয়ে দিতে বেগ পেতে হয়নি এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার।
৩৩ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল ব্রাজিলের সামনে কিন্তু সেই সুযোগ গোলে রূপান্তরিত হয়নি। ৪০ মিনিটে জাদু দেখান নেইমার। দারুণভাবে ড্রিবল করে ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষ বক্সের ভেতর। কিন্তু শেষ বাঁধাটি আর পার করতে পারেননি। তাঁর প্রচেষ্টা ফের ঠেকিয়ে দেন ভিসকারা। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ব্রাজিল।
বিরতির পর ব্রাজিল যেন আরও ধারাল। একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষকে নাচিয়ে তোলে তারা। ৪৭ মিনিটে নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে ব্রাজিলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন রাফিনিয়া। ৫৪ মিনিটে নেইমারের দারুণ এক চিপ শট থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণে গিমারায়েসের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করেন রদ্রিগো। কিন্তু অফসাইড পজিশনে থাকা রিচার্লিসন বলিভিয়ান খেলোয়াড়কে বাঁধা দিয়েছেন কিনা সেটা লম্বা সময় ধরে ভিআরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই গোলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।
৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে তখন রীতিমতো উড়ছিল ব্রাজিল। ব্রাজিলের খেলাতেও ফুটে উঠছিল সেই আত্মবিশ্বাস। যার ধারাবাহিকতায় নেইমার পেয়ে যান পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া গোলটিও। ম্যাচের ৬১ মিনিটে দুর্দান্ত এক দলীয় আক্রমণ থেকে লক্ষ্যভেদ করে ব্রাজিলকে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন নেইমার। এই গোলটি করে ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলে এককভাবে চূড়ায় উঠেছেন এই ফরোয়ার্ড। এর ফলে পেলের ৭৭ গোল ছাড়িয়ে নেইমারের গোল এখন ৭৮। পরে অবশ্য সেটিকে ৭৯–তে নিয়ে যান নেইমার।
চার গোলে পিছিয়ে পড়া বলিভিয়া সান্ত্বনার একটি গোল পায় ৭৮ মিনিটে। যদিও সেই গোল ম্যাচের ভাগ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। উল্টো যোগ করা সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটিও আদায় করে নেন নেইমার। যার ফলে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচটিতে দাপটের সঙ্গে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল।